প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৫, ১৮:৩৩
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে কয়েক দিনের ব্যবধানে আবারও একটি মৃত ইরাবতী ডলফিন ভেসে এসেছে। প্রায় ছয় ফুট দৈর্ঘ্যের এই ডলফিনটির পুরো শরীর চামড়া ওঠা অবস্থায় পাওয়া গেছে। সৈকতে উপস্থিত স্থানীয়রা ও পর্যটকরা মৃত ডলফিনটি দেখার জন্য ভিড় জমিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) দুপুর দেড়টার দিকে কুয়াকাটা সৈকত থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার পূর্বদিকে ঝাউবন এলাকায় ডলফিনটি দেখতে পান স্থানীয়রা। তারা জানান, সৈকতে প্রায় নিয়মিতই মৃত ডলফিন ভেসে আসে। ধারণা করা হচ্ছে, ডলফিনটি এক সপ্তাহ আগে জালে আটকে মারা গেছে।
জলজ প্রাণী বিশেষজ্ঞরা জানান, ডলফিন শুধুমাত্র সমুদ্রের প্রাণী নয়, এটি সমুদ্র পরিবেশের স্বাস্থ্য ও ভারসাম্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। ডলফিনের উপস্থিতি সমুদ্রের ইকোসিস্টেমকে সুস্থ রাখে, মাছ ও অন্যান্য সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যকে সুরক্ষা দেয় এবং স্থানীয় পর্যটন ও জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
ওয়ার্ল্ডফিশের ইকোফিশ-২ বাংলাদেশ প্রকল্পের সহযোগী গবেষক বখতিয়ার উদ্দিন বলেন, এটি মূলত ইরাবতী প্রজাতির ডলফিন (Orcaella brevirostris) এবং রক্তাক্ত দাগ থেকে মৃত্যুর কারণ বোঝা যায়। নৌযান চলাচল, মাছ ধরার যন্ত্র এবং জেলেদের কার্যক্রমই ডলফিন মৃত্যুর প্রধান কারণ। এছাড়া নদী ও মোহনার দূষিত পানি, শিল্প বর্জ্য, প্লাস্টিক ও তেলের উপস্থিতিও হুমকি সৃষ্টি করছে।
গবেষকরা স্থানীয় সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন এবং ডলফিন অভয়ারণ্য এলাকায় জাল ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা আরোপের পরামর্শ দিয়েছেন। এর ফলে কুয়াকাটার জলজ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সহায়তা হবে।
বনবিভাগের মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা কে এম মনিরুজ্জামান জানান, খবর পাওয়ার পরই ঘটনাস্থলে একটি টিম পাঠানো হয়েছে। মৃত ডলফিনটিকে মাটি চাপা দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে, যাতে দুর্গন্ধ ছড়াতে না পারে এবং জনস্বাস্থ্য নিরাপদ থাকে।
স্থানীয়রা আশা করছেন, সরকারের এবং পরিবেশ সংরক্ষণে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতায় কুয়াকাটার সমুদ্র ও নদীপথের জীববৈচিত্র্য রক্ষার কার্যক্রম আরও সক্রিয়ভাবে চালানো হবে। পর্যটক ও জেলেদের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধিও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন তারা।