প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৫, ১৯:৭
গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষিত তিস্তা সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়ে উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে ১১ আগস্ট ইস্যু করা চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে, সেতুটি ২০ আগস্ট বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। সেতুটি উদ্বোধন করবেন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভুঁইয়া।
তিস্তা সেতুর উদ্বোধনে আনন্দে উদ্দীপ্ত হয়ে উঠেছে গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের জনগণ। সেতুটি গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ এলাকায় নির্মিত হলেও নামকরণ করা হয়েছে পাঁচপীর-চিলমারী সেতু। মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪৯০ মিটার। মূল সেতু ও সংযোগ সড়ক, লাইটিং ও শোভা-বর্ধনের সব কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অন্যান্য কারণে সেতুর পূর্বনির্ধারিত উদ্বোধন বেলা মুলতুবি থাকলেও এবার এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হচ্ছে।
উদ্বোধন শেষে সেতুর মাধ্যমে কুড়িগ্রামের উলিপুর, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী, ফুলবাড়ী, রাজারহাট, কুড়িগ্রাম সদর ও চিলমারী থেকে ঢাকার দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার কমে যাবে। এছাড়াও চিলমারী থেকে রংপুরের দূরত্ব প্রায় ৩০-৩৫ কিলোমিটার এবং গাইবান্ধা জেলা শহরের দূরত্ব প্রায় ৩৫-৪০ কিলোমিটার কমে আসবে। সেতুর ব্যবহার শুরু হলে রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগের সময়ও প্রায় দুই ঘণ্টা সাশ্রয় হবে এবং জ্বালানি তেলও সাশ্রয় হবে।
তিস্তা সেতু গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ, সাদুল্যাপুর, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও গাইবান্ধা সদর এবং কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী, উলিপুর, রাজারহাট, ফুলবাড়ী, ভুরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী ও কচাকাটা অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা সচল করবে। দরিদ্র ও অতিদরিদ্র মানুষের জন্য এটি রুজি-রোজগারের পথ প্রশস্ত করবে। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য দ্রুত রাজধানী ও দেশের অন্যান্য স্থানে পরিবহন করতে পারবেন, ফলে জীবনমানের উন্নতি ঘটবে।
প্রকল্পটি ২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি উদ্বোধন করা হয়। মোট বরাদ্দের পরিমাণ ৮৮৫ কোটি টাকা। সেতুর উভয় পাশে ৮৬ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে, যার মধ্যে ৭৬ কিলোমিটার গাইবান্ধা ও ১০ কিলোমিটার কুড়িগ্রাম অংশে। নদীভাঙন রোধে দুই তীরে স্থায়ীভাবে ৩.৫ কিলোমিটার নদী শাসন করা হয়েছে।
সংযোগ সড়কগুলোতে ৫৮টি বক্স কালভার্ট এবং ৯টি আরসিসি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৯৬ মিটার, ৪৮ মিটার, ২০ মিটার ও ১২ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু। এটি এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং কৃষি পণ্য সরবরাহে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।
স্থানীয়রা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, সেতুর উদ্বোধন অঞ্চলটির অর্থনীতি ও জীবনমান উন্নয়নের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটাবে এবং দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান হবে।