রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে দুদকের অভিযান, নানা অনিয়ম

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে টানা পাঁচ ঘন্টার তৃতীয় দুদক অভিযানে রোগীদের খাদ্য তালিকায় ধারাবাহিক অনিয়ম, চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি, ওষুধের ঘাটতি এবং পরিবেশগত অস্বাস্থ্যকরতার মতো গুরুতর ত্রুটিগুলো আবারও প্রকাশ পেয়েছে। ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের একটি এনফোর্সমেন্ট টিম বুধবার সকাল দশটা থেকে দুপুর তিনটা পর্যন্ত এই অভিযান পরিচালনা করে।

দুদক সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে প্রাথমিকভাবে রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত খাবারে ব্যাপক অনিয়মের সত্যতা মেলে। প্রতিদিনের ডায়েট চার্জ অনুযায়ী মানসম্মত খাবার সরবরাহ না করার পাশাপাশি নিম্নমানের খাবার দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

খাবার সংক্রান্ত অনিয়মের বিস্তারিত পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, সপ্তাহে একদিন খাশির মাংস, রুই বা কাতল মাছ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও বাস্তবে রোগীদের সপ্তাহের সাত দিনই শুধুমাত্র পাঙ্গাশ মাছ ও ব্রয়লার মুরগি সরবরাহ করা হচ্ছে। এটি নির্ধারিত মেনু থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

চিকিৎসা সেবা সংক্রান্ত অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে দুদক টিম ছদ্মবেশে হাসপাতালের সেবার মান পর্যবেক্ষণ করে এবং রোগীদের সাথে সরাসরি কথা বলে। এতে চিকিৎসা সেবা পেতে রোগীদের হয়রানির শিকার হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।

হাসপাতাল প্রাঙ্গণ অপরিচ্ছন্ন এবং নোংরা পরিবেশে রাখা হয়েছে বলেও অভিযানে প্রমাণ মিলেছে। যা রোগীদের সুস্থতার পরিবর্তে আরও অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।

ওষুধ সংক্রান্ত অনিয়ম তদন্তে দুদক টিম হাসপাতালের মেডিসিন স্টোরে অভিযান চালায়। সেখানে 'সিপ্রোফ্ল' নামক একটি প্রয়োজনীয় ওষুধের ৫০০ পিসের ঘাটতি ধরা পড়ে। এছাড়াও গাইনি ওয়ার্ডে মন্টিলুকাস্ট ওষুধের ২৬৬ পিসের ঘাটতি পাওয়া যায়।

অভিযানকালীন সময়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ শেখ মোঃ আব্দুল হান্নান কিছুক্ষণ থাকলেও দুপুর আড়াইটার দিকে হাসপাতাল ত্যাগ করেন। এর ফলে অভিযান শেষে তার আনুষ্ঠানিক বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে তার ব্যক্তিগত নম্বরে ফোন দিলে অন্য একজন জানান যে তিনি একটি বেসরকারি ক্লিনিকে অপারেশন করছেন।

দুদক টিম হাসপাতালের এমএসআর ক্রয় সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করেছে। এসব документы পর্যালোচনা করে কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাঠানো হবে বলে জানানো হয়েছে। এর ভিত্তিতে কমিশন প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

উল্লেখ্য, এই হাসপাতালে এটিই তৃতীয় দুদক অভিযান। এর আগে গত ৩১ ডিসেম্বর এবং চলতি বছরের ১৫ মে অনুষ্ঠিত অভিযান দুটিতেও একই ধরনের নানাবিধ অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার প্রমাণ মিলেছিল।