প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৫, ১৬:৪
মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার পূর্বদিকে প্রায় ২০ কিলোমিটার পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিলেই দেখা মেলে সীমান্তবর্তী নিভৃত গ্রাম বোবারতলের। ভারতের ত্রিপুরা সীমান্ত ঘেঁষা এই গ্রামটি শত বছরের পুরনো হলেও উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে এখনো বঞ্চিত।
গ্রামটির চারপাশে রয়েছে উঁচু পাহাড়, ঝর্ণা, গগণটিলা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নান্দনিক ছোঁয়া। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এটি একটি সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্র হতে পারত। কিন্তু পর্যটন উন্নয়ন কিংবা যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কোনো সরকারি উদ্যোগ দেখা যায়নি।
বোবারতল গ্রামের প্রধান সমস্যা হলো যোগাযোগ ব্যবস্থা। এখনো রাস্তাটি সম্পূর্ণ কাঁচা। বর্ষা মৌসুমে কাদা ও পিচ্ছিল পথ অতিক্রম করা যেন পাহাড় চড়ার সমান কষ্টকর। তখন গ্রামবাসীকে হাঁটু কাদা মাড়িয়ে সাত কিলোমিটার দূরের ছোটলেখা বাজারে যাতায়াত করতে হয়।
গ্রামে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের বসবাস। তাদের জীবন-জীবিকা মূলত ফল-ফসল চাষ এবং পাহাড়ি সম্পদ আহরণের ওপর নির্ভরশীল। এখানকার উর্বর পাহাড়ি মাটি ও অনুকূল আবহাওয়া আম, জাম, কমলা, লেবু, কাঠালসহ নানা ফল এবং শাকসবজি চাষের জন্য উপযোগী।
স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত গ্রামে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই গ্রামে ইপিআর ক্যাম্প ছিল, যা এর ঐতিহাসিক গুরুত্বকে স্মরণ করিয়ে দেয়। তবুও অবহেলার কারণে গ্রামটি উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার অবস্থা একই রকম করুণ। শিক্ষার্থীদের বড়লেখা সদরে গিয়ে এসএসসি পরীক্ষা দিতে হয় পায়ে হেঁটে। জরুরি রোগী পরিবহন বা কৃষিপণ্য বাজারজাত করতেও চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয় গ্রামবাসীকে।
সরকারি বরাদ্দ ও উদ্যোগের অভাবের কারণে পর্যটন সম্ভাবনাও হাতছাড়া হচ্ছে। অথচ যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে এই গ্রামটি হয়ে উঠতে পারত একটি আদর্শ পর্যটনকেন্দ্র, যা স্থানীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে পারত।
গ্রামের মানুষদের একটাই প্রশ্ন— বোবারতলে উন্নয়নের আলো কবে পৌঁছাবে? তারা আশা করেন, সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেবে যাতে সীমান্তের এই নিভৃত পল্লী একদিন উন্নয়নের ছোঁয়া পায়।