মৌলভীবাজারে কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সংগ্রহকারী, মাদরাসা ও এতিমখানা কর্তৃপক্ষ। বিনামূল্যেও চামড়া নিচ্ছে না ব্যবসায়ীরা। বিক্রি করতে না পারায় হাজার খানেক চামড়া নদীতে ফেলে দেয়া হয়।
অনেকে বিভিন্ন রাস্তায় চামড়া ফেলে রেখে যান। ফলে চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। পরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা অপসারণ করে ফেলে রাখা এসব চামড়া।
এক সময় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনে আনলেও বর্তমানে এ চিত্র ভিন্ন। সারাদিন চামড়া ব্যবসায়ীদের দেখা মেলে না। তাই কোরবানি দাতা ও সংগ্রহকারীরা চামড়া বিক্রি করতে না পারায় গ্রাম থেকে শহরে নিয়ে আসেন। দিনভর অপেক্ষা করার পরও কোনো ব্যবসায়ীর দেখা পাননি।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর মৌলভীবাজার পৌর বাস টার্মিনালে, রাস্তায় চামড়া ফেলে যান। কেউ কেউ ক্ষোভে বাড়িতেই চামড়া গর্ত করে পুতে ফেলেন। এতে বেকার সময় পার করছেন চামড়া শিল্পের প্রাথমিক প্রক্রিয়াজাতকরণের কয়েক হাজার মৌসুমি শ্রমিক।
স্থানীয় এতিমখানার সদস্য জাহেদ বলেন, ‘আমাদের এতিমখানা পরিচালনা জন্য বড় অঙ্কের আয়ের উৎস হলো চামড়া বিক্রির টাকা। এবার কী দিয়ে এতিম খানা চলবে ভেবে পাচ্ছি না।’
বালিকান্দি গ্রামের ক্ষুদ্র চামড়া ব্যবসায়ী আবু কাওছার বলেন, ‘রাতের বেলা বিভিন্ন চামড়া সংগ্রহকারী এসে বিনামূল্যে চামড়া দিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে। কিন্তু আমরা রাখতে পারিনি। অনেকে রাস্তায় চামড়া রেখে পালিয়ে যায়।’
স্থানীয় আমিরপুর মাদরাসার মোহতামিম মাওলানা ওয়ালিদুর রহমান বলেন, ‘আমরা বছরে একবার চামড়া সংগ্রহ করি যা বিক্রি করে এতিম অসহায়দের সাহায্য করি। কিন্তু বিগত কয়েক বছর যাবত এ সুযোগ পাচ্ছি না।
স্থানীয়ভাবে বিক্রি করতে না পেরে বালিকান্দি নিয়ে যাই। রাত পর্যন্ত কোনো ক্রেতার দেখা পাইনি। অবশেষে বিনামূল্যে দিতে চাইলেও কেউ তা নেয়নি। পরে পাশের মনু নদীতে ফেলে দেয়া হয়।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত কয়েক বছর যাবত ঢাকা ও নাটোরের ট্যানারি মালিকরা বালিকান্দি এলাকার চামড়া ব্যবসায়ীদের টাকা আটকে রাখার কারণে আগের মতো ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনতে পারেন না।
এছাড়া প্রাথমিক প্রক্রিয়ারজাতের খরচও উঠে না বলে চামড়া কেনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।
বালকান্দি গ্রামের চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শওকত আলী বলেন, ‘বাপ দাদার ঐতিহ্যবাহী ব্যবসা ধরে রাখার জন্য আমরা সবসময় ব্যবসা করি। আমাদের অনেক টাকা ঢাকা ও নাটোরের ট্যানারি মালিকরা আটকিয়ে রেখেছে।
জেলা প্রশাসকের অনুরোধে এ বছর যৎসামান্য চামড়া ক্রয় করেছি। সরকারিভাবে যে মূল্য নির্ধারণ করা হয় ট্যানারি মালিকরা আমাদের প্রতিবছর সেই পরিমাণ মূল্য দেয় না। এতে আমাদের লোকসান হয়। তাদের সঙ্গে দর কষাকষি করে আমরা পারি না। তাই চামড়াও কিনতে পারিনি’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে চামড়া বিক্রি করতে না পারায় কেউ মাটিতে পুতেছে আবার কেউ নদীতে ফেলে দিচ্ছে। এতে আর কিছু না হলেও একটা শিল্প ধ্বংস হচ্ছে। এই শিল্প রক্ষায় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই।’
ওই গ্রামের আরেক চামড়া ব্যাবসায়ী হাফিজ মো. আনোয়ার বলেন, ‘ঢাকার ট্যানারি মালিকরা আমাদের টাকা আটকায়। আমরা পাওনা টাকা আদায় করতে গেলে শতকরা দুই ভাগ আমাদের দেয়।
এতে না হয় লবণের জোগাড়, না দেয়া যায় শ্রমিকের মজুরি। তাই এবার সীমিত সংখ্যক গরুর চামড়া ক্রয় করেছি। ছাগলের চামড়ার মূল্য নেই। অনেকেই নদীতে ফেলে দিচ্ছে।’
মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফজলুর রহমান জানান, সিন্ডিকেটের কারণে শিল্পজাত পণ্য চামড়া নষ্ট হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করেছি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করার জন্য। আমাদের সহযোগিতায় অনেকটাই রক্ষা হয়েছে।
মৌলভীবাজারের ঐতিহ্যবাহী বালিকান্দি গ্রামের ব্যবসায়ীরা ব্যাপক হারে চামড়া না কেনার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।’
জেলা প্রসাশক মীর নাহিদ আহসান করোনা আক্রান্ত হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রসাশক ( রাজস্ব) মো. মেহদী হাসানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে জন্য জনপ্রতিনিধি ও প্রসাশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের নিয়ে মৌলভীবাজারে টিমওয়ার্ক করা হয়েছে।’
বিক্রেতারা চামড়া নদীর পানিতে ফেলে দেয়ার বিষয়টি জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ছাড়া কোন কথা বলা যাবে না।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।