শ্রীমঙ্গলে বৈশাখী ঝড়ে ঘরবাড়ি-গাছপালা লন্ডভন্ড, ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি

নিজস্ব প্রতিবেদক
এহসান বিন মুজাহির থানা প্রতিনিধি শ্রীমঙ্গল , মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: সোমবার ২৯শে এপ্রিল ২০২৪ ০৮:০৫ অপরাহ্ন
শ্রীমঙ্গলে বৈশাখী ঝড়ে ঘরবাড়ি-গাছপালা লন্ডভন্ড, ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে আকস্মিক শুরু হওয়া কালবৈশাখী ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। সরেজমিনে শহর-শহরতলীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে হঠাৎ শুরু হওয়া প্রচন্ড ঝড় তুফানে অনেকের বসতঘর ও দোকানপাঠ বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে বেকায়দায় পড়েন কয়েক শতাধিক পরিবার।


রবিবার (২৮ এপ্রিল) বিকেল ৪টা ৪২মিনিটে শুরু হওয়া তীব্র ঝড়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন ঘরবাড়ি, দোকানপাঠ, গাছপালা, বোরো ফসল ও সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি অল্প পরিমাণে শিলাবৃষ্টিও হয়েছে এই এলাকায়। 


শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন এলাকায় বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়ায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত উপজেলাজুড়ে প্রায় ৫০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগের বাইরে রয়েছেন। ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কসহ অভ্যন্তরীণ অনেক সড়কে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ। 


এদিকে কমলগঞ্জে ঝড়ে রেল লাইনের উপর বড় বড় গাছ পড়ে ঢাকা-সিলেট রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। শ্রীমঙ্গল ট্রেন স্টেশনে জয়ন্তিকা এবং শমসেরনগর রেলস্টেশনে পারাবত ট্রেন প্রায় ৪ ঘন্টা ধরে আটকে ছিল। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ট্রেন যাত্রীরা। পরে রাত সাড়ে ৯টায় ট্রেন যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়।


সরেজমিনে দেখা গেছে, শ্রীমঙ্গলের শহরের পূর্বাশা ও শহরতলীর বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ খুঁটি বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে মাটিতে পড়ে আছে। শ্রীমঙ্গল কলেজ রোডস্থ ঐতিহ্যবাহী শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাব ভবণের টিনের চাল ও ভানুগাছ রোডের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের মার্কেটের দোকানপাঠ, শহরের কলেজ রোড, গুহ রোড, স্টেশন রোডের বিভিন্ন ভবণে থাকা সাইনবোর্ড উড়ে গেছে। রেলওয়ে স্টেশন জামে মসজিদের সামনের সড়কে, স্টেশনের স্টাফ ভবণের টিনের চালে, কলেজ রোডের পাবলিক লাইব্রেরি ভবণের টিনের চালে, বিটিআরআই এলাকা, রাধানগর এলাকা ও ভানুগাছ সড়কে বড় বড় গাছ উপড়ে সড়কে পড়ে রয়েছে। এতে সাময়িক যান চলাচল বন্ধ হয়ে সড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। এসময় যাত্রীদের চরম বিপাকে পড়তে দেখা গেছে।


ক্ষতিগ্রস্থ একাধিক পরিবার ও ব্যবসায়ী জানান, ঝড়ে শহর ও উপজেলায় অনেকের ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বড় বড় গাছ ভেঙে পড়েছে। এ ছাড়া বিদ্যুতের খুঁটি, ট্রান্সফরমারের ওপর গাছ পড়ে তা ভেঙে পড়েছে। শহরের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড ও টিনের চাল ঝড়ে উড়ে গেছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে তারা।


শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, তীব্র ঝড়টি বেলা ৪টা ৪২ মিনিটে শুরু হয়ে ৪৮ মিনিটে শেষ হয়। ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার। ঝড়ের পিক টাইমের স্থায়িত্ব ছিল প্রায় ছয় মিনিট।


শ্রীমঙ্গল কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা রকেন্দ্র শর্মা বলেন, ‘হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড় ও অল্প শিলাবৃষ্টি হয়েছে। আমরা মাঠপর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করে বলতে পারব কৃষির কেমন ক্ষতি হয়েছে।


শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ঝড়ে সিলেট-শ্রীমঙ্গলের মাঝে রেললাইনের উপর কয়েকটি গাছ ভেঙে পড়ে। শ্রীমঙ্গল স্টেশনে জয়ন্তীকা এক্সপ্রেস ৫টা ২০ মিনিট থেকে আটকে আছে। ঢাকাগামী পারাবত এক্সপ্রেস ভানুগাছ রেলওয়ে স্টেশনে ৫টা ৩৭ মিনিটে আটকা পড়েছে। এতে বিকেল থেকে সারাদেশের সঙ্গে সিলেটের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গাছ অপসারণের কাজ চলছে। শিগগিরই ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হবে বলে জানান তিনি।


মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মিজানুর রহমান জানান, শ্রীমঙ্গল কমলগঞ্জসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বেশ কয়েটি বিদ্যুতের খুটি ভেঙ্গে গেছে। এছাড়া অসংখ্য স্থানে তার ছিড়ে গেছে। ঝড়ে বিদ্যুত বিভাগের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। লাইনম্যানেরা কাজ করছেন। তবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে অনেকটা সময় লাগবে। তিনি আরও বলেন বিদ্যুৎ লাইন চালুর অক্লান্ত প্রচেষ্ঠা চলমান রয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় ক্রমান্বয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে বলেও জানান তিনি।