বরিশালে চোখ রাঙাচ্ছে অমিক্রন, শনাক্তের হার ৪৩.৩৯

নিজস্ব প্রতিবেদক
এইচ.এম.এ রাতুল, জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল।
প্রকাশিত: শনিবার ২২শে জানুয়ারী ২০২২ ০৮:৫৫ অপরাহ্ন
বরিশালে চোখ রাঙাচ্ছে অমিক্রন, শনাক্তের হার ৪৩.৩৯

বরিশালে চোখ রাঙাচ্ছে অমিক্রন, শনাক্তের হার ৪৩.৩৯


বরিশালে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমনের হার। বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আরটি পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্তের হারও ঊর্ধ্বমুখী। যেন চোখ রাঙাচ্ছে করোনা গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে করোনা শনাক্তের হার দাড়িয়েছে ৪৩.৩৯ শতাংশ। এদিকে করোনা তৃতীয় ঢেউ মোকাবেলায় করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল ও জেলা উপজেলার হাসপাতালগুলোতে করোনা ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে হাসপাতাল সূত্র বলছে, বরিশাল জেনারেল (সদর) হাসপাতালটি করোনা ডেডিকেটেড হলেও হাসপাতালের পুরানো ভবনটি ভেঙে ফেলায় শুধুমাত্র শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটটি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া বিভাগের সকল হাপসাতালগুলোকে প্রস্তুতি নিতে বলেছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক।


হাসপাতালের পরিচালক কার্যালয় সূত্র জানায়, বিগত ২৪ ঘন্টায় নানা উপসর্গ নিয়ে ৩ জন রোগী করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলো চলতি মৌসুমে সর্বাধিক ১৮ জন রোগী। 


এদিকে মেডিকেল কলেজের আরটি পিসিআর ল্যাবে গত শুক্রবার রাতে ১০৬ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে ৪৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪৩.৩৯ ভাগ। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে পিসিআর ল্যাবে শনাক্তের হার ছিলো ৩২.০৮ ভাগ, বুধবার ২৪.৪৫ ভাগ, মঙ্গলবার ২৬.৩৮, সোমবার ১৭.৭২ ভাগ, রবিবার ১২.২২ এবং গত শনিবারের রিপোর্টে ৫.০৪ ভাগ করোনা শনাক্ত হয়।


বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে ৪৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। অথচ গত ১৫ জানুয়ারি তা ছিল মাত্র ৮ জন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে করোনা সংক্রমনের হার এত বেড়ে যাওয়ার পেছনে স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব রয়েছে বলে মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে সংক্রমনের হার যখন উর্ধ্বমুখী তখন বেশিরভাগ মানুষকেই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করতে দেখা যায়। বিশেষ করে দূরপাল্লার বাস ও লঞ্চগুলোতে রয়েছে চরম অব্যবস্থাপনা। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় কোন যাত্রীই স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। গতকাল বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ ও নৌবন্দর ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। যদিও লঞ্চ ও বাস মালিক কর্তৃপক্ষ বলছে, যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে বলা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে তাদের কোন তৎপরতা চোখে পড়েনি। 


অপরদিকে বরিশাল জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্য সচেতন করার পাশাপাশি মাস্ত বিতরণ ও ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে সাধারণ মানুষ এ ব্যাপারে রয়েছে পুরাই উদাসীন। 


সূত্রমতে, গত নভেম্বরে বরিশালে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসার পর হাসপাতালগুলোর করোনা ওয়ার্ডের কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছিল। কিন্তু জানুয়ারির প্রথম থেকে ধীরে ধীরে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন আবার তা চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, এ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ৩০০ শয্যা রয়েছে। এর বেশি রোগীকে এখানে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। অপরদিকে গত বছর করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালে বরিশাল জেনারেল (সদর) হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল ঘোষণা করা হয়েছিল। হাসপাতালটিতে ১০০ শয্যা ছিল। কিন্তু এই হাসপাতালের পুরোনো ভবনটি ভেঙে ফেলায় এখন আর এই হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ড খোলা সম্ভব নয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।


বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, বর্তমানে প্রতিদিন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে না মানলে সংক্রমণ আগের মতোই গতি পেতে পারে। এ জন্য এখন সকলকে জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার দিকে নজর দিতে হবে বলে মনে করেন তিনি।


তিনি আরো জানান, এ সময়ে সংক্রমণ বৃদ্ধির ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগের পূর্বসতর্কতা ছিল। এজন্য বিভাগের সব হাসপাতালকে করোনা ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বেশির ভাগ হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা যাতে ব্যাহত না হয়, সেদিকে খেয়াল রেখেই কার্যক্রম এগোচ্ছে। প্রাথমিকভাবে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিট প্রস্তুত রাখা হয়েছে, সেখানে স্থান সংকুলান না হলে পরবর্তী সময়ে বিকল্প চিন্তা করা হবে।


প্রসঙ্গত: ২০২০ সালের ১৭ মার্চ শেবাচিমে করোনা ওয়ার্ড চালুর পর ৭ হাজার ৪শ’ ৭৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১ হাজার ৪শ’ ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে করোনা পজেটিভ ছিলো ৪২৮ জনের। এছাড়া মহামারি শুরুর পর থেকে বরিশাল বিভাগে এখন পর্যন্ত ৪৫ হাজার ৫৫৪ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে, এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৪৪ হাজার ৬৫৬ জন আর মৃত্যু হয়েছে ৬৭৯ জনের।