রাজবাড়ীর রেলগেট এলাকায় অভিনব কায়দায় এক ধরনের ড্রাগ ব্যবহার করে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। গত ১১ অক্টোবর বিকালে এই ছিনতাইয়ের শিকার হন প্রিয়া আক্তার (২৫) নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী।
শনিবার (১৫ অক্টোবর) সকালে প্রিয়া আক্তারের মা ছালমা বেগম (৪৫) বাদী হয়ে রাজবাড়ী সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
ছিনতাইয়ের ঘটনার বিবরণে প্রিয়া আক্তার বলেন, সেদিন বিকাল সারে ৪টার দিকে রাজবাড়ী ১নং রেলগেটের সামনে একটা ছেলে আনুমানিক বয়স হবে (২৫) এসে আমার কাছে তার মায়ের অসুস্থতার কথা বলে সাহায্য চান। আমি তার কথায় তাকে কোনো পাত্তা না দিলে ঐ সময় আরও একজন লোক এসে হাজির হয়। পরের লোকটি এসে বলেন, ‘আপা এই ছেলেটা খুবই গরীব, আসেন আপনিসহ আমি তাকে কিছু টাকা দিয়ে সাহায্য করি। পরে আমি বলছি কোনো সাহায্য সহযোগিতা করতে পারবো না, ঠিক তখনই দুজন মিলে মুখের সামনে কি একটা মেডিসিন ধরলে আমার জবান বন্ধ হয়ে যায়। আমি সবকিছু দেখতে ও শুনতে পারছি, কিন্তু কোন কথা বলতে পারছি না। তারপর তারা আমাকে তাদের সাথে যেতে বলে। আমিও হেঁটে হেঁটে তাদের সাথে রেলস্টেশন সংলগ্ন সালমা হোটেলের সামনে যাই। যখন আমি বলছি আপনারা আমাকে কেন ডাকছেন, তখন তারা আমাকে ওই মেডিসিনটা আবারো দিয়ে বস করে।
তিনি আরো বলেন, যে মেডিসিন টা আমার নাকে দিয়েছিলো সেটার গন্ধ খুবই বাজে ছিলো। তারপর আবারো আমার জব বন্ধ হয়ে যায়। কিছুই বুঝতে পারিনি যে আমার সাথে কি ঘটতে যাচ্ছে। তারপর তারা আমার গলার চেইন, হাতের আংটি ও মোবাইলসহ নগদ ৩ হাজার টাকা নিয়ে চলে যায়। তবে আমার জ্ঞান ছিল কিন্তু আমার মাথায় কোন কাজ করছিলো না। তবে ওদের মূল টার্গেট ছিলো ছিনতাই।
প্রিয়ার ছিনতাইয়ের ঘটনার বণর্না অনুযায়ী ধারনা করা হচ্ছে এটি স্কোপোলামাইন বা ‘ডেভিলস ব্রেথ’ নামে এক ভয়ঙ্কর মাদক। এ মাদকটি মূলত প্রতারক চক্রের সদস্যরা প্রতারণার কাজে ব্যবহার করে। এই ড্রাগ ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের মানসিক অবস্থা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বস্ব হাতিয়ে নেয় প্রতারকরা। এই ড্রাগটি ৬ থেকে ১২ ইঞ্চি দূরত্ব থেকে শ্বাসের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে। যার প্রতিক্রিয়া থাকে প্রায় ২০ থেকে ৬০ মিনিট।
এদিকে এমন ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে প্রকাশ পেলে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
মোস্তাফিজুর রহমান সোহান নামে একজন জানান, এর আগে নাহিদ বাবু ও মো. শরিফুলের কাছ থেকে টাকা নিয়ে গেছে। রাজবাড়ীতে এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটছে বলে জানান একাধিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা।
রাজবাড়ীর সদর হাসপাতালের কনসালটেন্ট (অ্যানেস্থেসিয়া) ডা. মো. জিয়াউল হোসেন বলেন, স্কোপোলামিন নামক ভয়ঙ্কর ড্রাগ মূলত তরল (লিকুইড) ও শুকনো (পাউডার) এই দুই ধরনের হয়। সাধারণত অজ্ঞান করতে এ ধরনের মেডিসিন ব্যবহার করা হয়। এটা অধিক মাত্রায় ব্যবহার করলে মাইন্ড কন্ট্রোলে চলে যায়। তখন কিছু আর নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। অন্যকেউ যা নির্দেশ দেয় ভুক্তভোগী তাই করবেন।
রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অবস) মো. রেজাউল করিম বলেন, আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়েছি। বিষয়টি নিয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ কাজ শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষন করা হচ্ছে। ছিনতাই হওয়া মোবাইল ট্রাক করার চেষ্টা চলছে।
তিনি আরো বলেন, রাস্তাঘাট, জুয়েলারি, ব্যাংক, যেকোনো শপিং সেন্টার থেকে বের হওয়ার সময় এই ঘটনাগুলো মনে রাখতে হবে সবাইকে। বাসায় অপরিচিত কেউ এলে কিংবা রিকশায় চলাচলের সময়ও সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া অপরিচিত কেউ বেশি ঘনিষ্ঠ বা পরিচিত আচরণ করলে তার পরিচয় জেনে এবং নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।