বরিশালে নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহকালে সাংবাদিকদের উপর হামলা, ইউপি সদস্য গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক
এইচ.এম.এ রাতুল, জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল।
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ২রা মে ২০২৪ ০৭:১৭ অপরাহ্ন
বরিশালে নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহকালে সাংবাদিকদের উপর হামলা, ইউপি সদস্য গ্রেফতার

বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের হামলার শিকার হয়েছেন একাধিক সংবাদকর্মী। গুরুতর আহত তিন সাংবাদিক বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 


গতকাল বুধবার রাতের এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার আহত সাংবাদিক মো. বেল্লাল হোসেন বাদী হয়ে ১২জনকে নামধারীসহ অজ্ঞাত ২০/২৫জনকে আসামী করে বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। 


এদিকে মামলা দায়েরের পরপরই (মেম্বার) সুজন হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সুজন হাওলাদার সদর উপজেলার জাগুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও আনারস প্রতীকের প্রার্থীর কর্মী। বিষয়টি নিশ্চিত করে কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ এ.টি.এম. আরচিুল হক জানিয়েছেন এ ঘটনায় জড়িত বাকি আসামীদেরও আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।


মামলার অভিযুক্ত আসামীরা হলেন জাগুয়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য জামাল সর্দার, বর্তমান ইউপি সদস্য সুজন হাওলাদার, তাদের অনুসারী শাহকামাল, আসাদুল, কবির হাওলাদার, মিরাজ ফকির, জালাল ফকির, রমিজ হাওলাদার, সুমন হাওলাদার, সাইদুল সিকদার, লিটন মল্লিকসহ ১২ জনকে নামধারী এবং অজ্ঞাত আরও ২০-২৫ জন।


মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাচনের প্রচারণা চলাকালীন সময়ে জাগুয়া ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামে আনারস ও মোটরসাইকেল প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে এমন সংবাদ পেয়ে বুধবার রাত পৌনে ৯ টার দিকে চন্ডিপুর মোহাম্মদ আলী মাধ্যমিক বিধ্যালয়ের সামনে যান বাদীসহ অন্য সাংবাদিকরা। তারা (সাংবাদিকরা) সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, ওই মারামারির ঘটনায় সেলিম খান নামে একজন আহত হয়েছেন। সংবাদের জন্য ঘটনার বিস্তারিত জানতে তথ্য সংগ্রহকালে এজাহারনামীয় ১২ জন আসামী সহ অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জন তাদের (সাংবাদিকদের) ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীরা রামদা, দা, লোহার পাইপ, রড, লাঠি দিয়ে সাংবাদিকদের ওপর এলোপাথারি হামলা চালায়। এসময় সাংবাদিকদের ক্যামেরা ভাংচুর করার পাশাপাশি মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে যায় হামলাকারীরা।


পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে ঘটনাস্থল থেকে মামলার বাদীসহ আহত সাংবাদিকদের উদ্ধার করে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হামলায় গুরুতর আহত হন দৈনিক ভোরের কাগজের বরিশালের ফটো সাংবাদিক আব্দুর রহমান ও দৈনিক তারুণ্যের বার্তার রিপোর্টার এইচএম সোহেল হাসপাতালের সার্জারী ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 


দৈনিক ভোরের কাগজের ফটো সাংবাদিক আব্দুর রহমান জানান, হামলার ঘটনা শুনে আমরা বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ঘটনাস্থলে যাই এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে ঘটনার বর্ণনা ভিডিও করার চেষ্টা করি। এ সময় হঠাৎ করেই আনারস প্রতীকের সমর্থকরা আমার মাথায় দা দিয়ে কোপ দেয়। এ সময় আমার অন্যান্য সহকর্মীরা এগিয়ে আসলে তাদের উপরও হামলা করা হয়।


এদিকে বৃহষ্পতিবার সকালে মামলার এজাহার নামীয় আসামী সুজন হাওলাদারকে চন্ডিপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনার সাথে জড়িত বলে স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করে কোতোয়ালি মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মো. রেজাউল ইসলাম জানান, গ্রেপ্তারকৃতকে দুপুরে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। হামলাকারী বাকীদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।


কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ.টি.এম আরচিুল হক জানিয়েছেন, মামলার বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। সেইসাথে ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার কার্যক্রমও চলমান রয়েছে।