দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার চাতাল ব্যবসায় সংকট, অতীতে যেগুলো ধান শুকানো ও চাল প্রক্রিয়ার জন্য ব্যবহৃত হতো, আজ সেগুলো বিলুপ্তির পথে। একসময় ধান সংগ্রহের পর চাতালে শুকিয়ে চাল প্রক্রিয়ার কাজ সম্পন্ন করা হতো, যা স্থানীয়ভাবে হাসকিং মিল বা চাতাল নামে পরিচিত ছিল। তবে বর্তমানে অটো রাইস মিলের আধিপত্য এবং ধান ও চালের বাজারমূল্যের অমিলের কারণে এসব চাতাল আজ কার্যত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কিছু মালিক ব্যবসা বদলাচ্ছেন, কেউ বাড়ি বা দোকানপাট গড়ে তুলছেন, আবার কেউ কেউ গরু, হাঁস-মুরগি, ছাগল-ভেড়ার খামার গড়ে তুলছেন।
দাউদপুর বাজারের হাসকিং মিল মালিক আ. মতিন বলেন, "বাজার থেকে ধান কিনে চাল বানিয়ে বিক্রি করলে লাভ তো দূরের কথা, বরং লোকসানই হচ্ছে। বিশেষ করে হাসকিং মিলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের তৈরি চাল আর অটো রাইস মিলের চালের মধ্যে প্রতি মন একশো থেকে দেড়শো টাকা বেশি দামে বিক্রি হয়, অথচ ধান কেনার দাম প্রায় একই থাকে। এর ফলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা খুবই কঠিন।"
স্থানীয় খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোফাখখেরুল চৌধুরী বলেন, "উপজেলা খাদ্য বিভাগের লাইসেন্সপ্রাপ্ত ৯৪টি চালকলের মধ্যে ৯১টি হাসকিং মিল এবং ৩টি অটো রাইস মিল রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৬০টি চালকল মালিক সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। অটো রাইস মিলের চাল কিছুটা নিম্নমানের হওয়ায় চলমান বাজারে তা টিকতে পারছে না। বর্তমান ধানের বাজার মূল্য এবং চালের দামের অমিলের কারণে হাসকিং মিলের মালিকরা বড় ধরনের লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন।"
চাতাল ব্যবসায় সংকটের কারণে অনেক মিল মালিক তাদের ব্যবসা পরিবর্তন করেছেন এবং এর ফলে এই ঐতিহ্যবাহী ব্যবসা প্রায় বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে। এক সময় গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এসব চাতাল ছিল কৃষকদের প্রধান আস্থা। তবে আধুনিক মেশিন এবং অটো রাইস মিলের আগমনে তাদের স্থান দখল করা হচ্ছে।
এ অবস্থায়, স্থানীয় ব্যবসায়ী ও কৃষকরা বলছেন, যদি ধানের বাজারমূল্য এবং চালের দাম সমন্বয় করা না হয়, তাহলে এই ব্যবসা বাঁচিয়ে রাখা খুবই কঠিন হবে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে আরও সহযোগিতা এবং পলিসি পরিবর্তনের দাবি উঠছে, যাতে চাতাল মালিকরা তাদের ব্যবসা অব্যাহত রাখতে পারে এবং কৃষকরা সঠিক দামে তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।