বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনার সঙ্গী হচ্ছে কে? এগিয়ে কারা

নিজস্ব প্রতিবেদক
স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার ১৪ই ডিসেম্বর ২০২২ ০৮:৫৩ অপরাহ্ন
বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনার সঙ্গী হচ্ছে কে? এগিয়ে কারা

বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ কে হবে তা নির্ধারণেই আজ দ্বিতীয় সেমিফাইনালে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের মুখোমুখি হচ্ছে আফ্রিকার দেশ মরক্কো। 


বাংলাদেশ সময় আজ দিবাগত রাত ১টায় আল-বায়াত স্টেডিয়ামে ফরাসিদের বিপক্ষে মাঠে নামবে চমক দেখিয়ে শেষ চারে ওটা মরক্কো। ঠিক যেন স্বপ্নের মতো এক বিশ্বকাপ পার করছে অ্যাটলাস লায়ন্সরা। স্বপ্নের শুরুটা যেভাবে হয়েছিল ঠিক সেভাবেই নিজেদের এগিয়ে নিয়ে ফাইনাল পর্যন্ত যেতে চায় মরক্কানরা।


কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগালকে হতবাক করে দিয়ে ১-০ গোলের জয়ের মাধ্যমে বিশ্বকাপের শেষ চার নিশ্চিত করে মরক্কো। অন্যদিকে লেস ব্লুজরা দুর্দান্ত এক ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীবারের মত বিশ্বকাপ স্বপ্ন ধরে রাখার মিশনে এখনো সঠিক পথেই রয়েছে।


ফ্রান্সের বিপক্ষে হ্যারি কেইনের ৮৪ মিনিটের পেনাল্টি মিসে ইংল্যান্ডের কপাল পোড়ে। আর এতেই ভাগ্য খুলে যায় ফ্রান্সের। ম্যাচ শেষে সেই কথা স্বীকার করে ফরাসি কোচ দিদিয়ের দেশ্যম বলেছেন, সৌভাগ্যই আমাদের সেমিফাইনালে পৌঁছে দিয়েছে।



অরেলিয়েন চুয়ামেনির জোড়ালো শটের পর অলিভিয়ের জিরুদের হেডে ৭৮ মিনিটে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়েছিল ফ্রান্স। এর আগে ৫৪ মিনিটে পেনাল্টি থেকে প্রথম গোলটি শোধ করলেও পরেরটি আর পারেননি ইংলিশ অধিনায়ক কেইন। গোলপোস্টের উপর দিয়ে বল বাইরে পাঠিয়ে তিনি কার্যত পুরো ফ্রান্স শিবিরকে স্বস্তি ফিরিয়ে দেন। 


এর আগে তিনবার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জিততে পারেনি ফরাসিরা। কিন্তু তারপর থেকে আর সুযোগ হাতছাড়া করেনি। ১৯৯৮, ২০০৬ ও ২০১৮ সালে সেমিফাইনালে খেলা দলটি দুইবারই বিশ্বকাপ জিতেছে। ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ সালে ইতালির পর প্রথম কোন ইউরোপীয়ান দল হিসেবে ৮৪ বছর পর ফ্রান্সের সামনে সুযোগ এসেছে বিশ্বকাপ শিরোপা ধরে রাখার।


মরক্কোর বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে খেলতে যাওয়ার আগে আগে এবারের বিশ্বকাপে কোন ম্যাচেই নিজেদের গোলবারকে সুরক্ষিত রাখতে পারেনি ফ্রান্স। মরক্কোর সঙ্গে তাই বাড়তি সতর্কতা নিতেই হচ্ছে দেশ্যমকে। বিশেষ করে সুযোগ পেলে তা কাজে লাগানোর দক্ষতা এবার মরক্কো প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই যেভাবে প্রমাণ করেছে তাতে ফ্রান্সের রক্ষণভাগ নিয়ে দেশ্যমকে নতুন করে ছক কষতে হবে।


আল-বায়াত স্টেডিয়ামে আজ ফল যাই হোক না কেন মরক্কোর বর্তমান দলটি ইতোমধ্যেই জাতীয় ও মহাদেশীয় পর্যায়ে নিজেদের অবস্থানের জানান দিয়ে দিয়েছে। আফ্রিকান কোন দেশ হিসেবে এই প্রথম বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নাম লেখানো মরক্কো ইতিহাসের পাতায় উঠে গেছে ইতোমধ্যেই।


কোয়ার্টার ফাইনালে তারা পর্তুগালের মোকাবেলা করেছে যারা আগের ম্যাচেই সুইজারল্যান্ডকে ছয় গোলে বিধ্বস্ত করে দারুণ আত্মবিশ্বাস নিয়েই মাঠে নেমেছিল। কিন্তু ওয়ালিদ রেগ্রাগুইর পুরো দল যে এক বিন্দুও ছাড় দেওয়ার পাত্র নয়। ইউসেফ এন-নেসরির দুর্দান্ত এক হেড সামলানো সম্ভব হয়নি পর্তুগিজ গোলরক্ষক দিয়োগো কস্তার।


বিশ্বকাপের তিন শীর্ষ দল বেলজিয়াম, স্পেন ও পর্তুগালকে হারিয়ে মরক্কো যে সেমিফাইনালে খেলতে এসেছে তাতেই রূপকথা রচিত হয়ে গেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে একমাত্র কানাডা বিপক্ষে ছাড়া  আর কোন প্রতিপক্ষের সাথেই কোন গোল হজম করেনি মরক্কো। কানাডার সঙ্গে গ্রুপ পর্বে ২-১ গোলের জয়ের ম্যাচটিতে গোলটিও ছিল আত্মঘাতী। আর এতেই গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনোর দক্ষতা প্রমাণিত হয়েছে। এদিক থেকে রেগ্রাগুইয়ের দল কিছুটা হলেও স্বস্তিতে থাকতে পারে। সর্বশেষ যে দুটি দল পাঁচ ম্যাচ কোন গোল হজম না করে ফাইনালে গিয়েছিল সেই ২০০৬ সালের ইতালি ও ২০১০ সালের স্পেন শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছিল। তাদের বিপক্ষে এ পর্যন্ত ৪৫টি শটের মধ্যে মাত্র নয়টি এসেছে টার্গেটে। কিন্তু এসব কিছুই ফ্রান্সের দূরন্ত গতির কাছে ম্লান হওয়াটা সময়ের ব্যপার। মরক্কোর বিপক্ষে  এর আগে পাঁচ ম্যাচে কখনই হারেনি ফ্রান্স।


শেষ চারে খেলতে নামার আগে ফ্রান্স দলে কোন ইনজুরি কিংবা নিষেধাজ্ঞা নেই। রাইট-ব্যাকে বেঞ্জামিন প্যাভার্ডের জায়গায় জুলস কুন্দে মূল দলে দুর্দান্ত খেলছেন। ভাই লুকাস হার্নান্দেজের ইনজুরির সুবাদে দলে জায়গা পাওয়া থিও হার্নান্দেজও নিজেকে প্রমাণ করে চলেছেন। আজ গোল করতে পারলে বিশ্বকাপের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে এক আসরে পাঁচ গোলের রেকর্ড গড়বেন ফ্রান্সের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা অলিভিয়ের জিরুদ। ইংল্যান্ডের সঙ্গে কিছুটা শান্ত থাকলেও কিলিয়ান এমবাপ্পেকে নিয়ে শুরু করা বিশ্বকাপের ১০টি ম্যাচেই এখন পর্যন্ত ফ্রান্স জয়ী হয়েছে।


এদিকে পর্তুগালের সঙ্গে হলুদ কার্ড পাওয়া মরোক্কান স্ট্রাইকার ওয়ালিদ চেডিরা সেমিফাইনালে খেলতে পারছেন না। ইনজুরির কারনে ওয়েস্ট হ্যামের অগার্ড আগের ম্যাচে খেলতে না পারলেও আজ তিনি দলে ফিরছেন। হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির কারনে রোমেইন সেইসকে দলে পাচ্ছেন না রেগ্রাগুই। যদিও সেমিফাইনালে আগে নিজেকে ফিট করে তোলার জন্য যথাসাধ্য পরিশ্রম করে যাচ্ছেন সেইস। এক ম্যাচ পরেই মূল একাদশের জন্য নিজেকে ফিট করে তুলেছেন অভিজ্ঞ হাকিম জিয়েচও।