রমজান ও তারাবীহ নামাজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য (৯ম তারাবীহ)

নিজস্ব প্রতিবেদক
ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ১৯শে মার্চ ২০২৪ ০৪:৪০ অপরাহ্ন
রমজান ও তারাবীহ নামাজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য (৯ম তারাবীহ)

পবিত্র মাহে রমজানের সওগাতঃ রমজান হচ্ছে সওয়াব অর্জনের মাস। মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার মাস, দান সদকাহ্ এর মাধ্যমে প্রভুর সন্তুষ্ঠি অর্জনের মাস। 


মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- আমি জ্বীন ও মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছি আমার ইবাদত করার জন্য। নবী করিম (স:) বলেছেন- রোজা রেখে যথাসম্ভব বেশী পরিমানে নেক কাজ করা উচিত এবং প্রত্যেকটি ভাল কাজেই অংশগ্রহন করা উচিত। বিশেষ করে রোজা রাখা অবস্থায় রোজাদারের জন্য রোজা ভঙ্গের কারণ- রোজা ভঙ্গের কারন সমূহ দু-প্রকার- (ক) যে সব কারনে যে-সব শুধু মাত্র কাযা ওয়াজিব হয়- (খ) যে সব কারণে কাযা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব হয়: (১) রোজদার ব্যক্তি (সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত) ইচ্ছা পূর্বক যৌন সম্ভোগ করলে তার উপর রোজার কাযা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব। (২) রোজাদার ব্যক্তি যদি খাদ্য দ্রব্য, বা ঔষধ ইচ্ছা পূর্বক গ্রহন করে তবে তার উপর রোজার কাযা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব। কাফফারা একমাত্র ওয়াজিব হয় রমজানের আদায় রোজা ইচ্ছা পূর্বক ভাবে ভঙ্গ করলে। আর রমজানের কাযা রোজা বা অন্য রোজা ভঙ্গ করলে কাফফারা ওয়াজিব হয় না। রমজানের রোজার কাফফারা হল: একাধারে ২মাস বা ৬০দিন রোজা রাখা। কোন কারনে মধ্য হতে দু, একটি রোজা না রাখতে পারলে আবার পুনরায় দুইমাস রোজা রাখতে হবে। রোজা রাখতে কেউ সক্ষম না হলে ৬০ জন মিসকিনকে সকাল সন্ধ্যা দু,বেলা পেট ভরে খাওয়াবে। আহার না করিয়ে ৬০জন মিসকিনকে সদকায়ে ফিতর পরিমান খাদ্য দ্রব্য দিয়ে দিলেও তা জায়েজ। এমনি ভাবে এর সমপরিমান মূল্য দিয়ে দেয়া জায়েজ।


যে সব কারনে রোজা শুধু কাযা হবেঃ (১) রোজা থাকা অবস্থায় কাম ভাবের সাথে কোন মহিলাকে চুম্বন অথবা স্পর্শ করিবার পর বীর্য নির্গত হলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে এবং তার উপর কাযা ওয়াজিব হবে। (২) জোর পূর্বক কেউ কিছু খাওয়াইয়া দিলে অথবা ভুলক্রমে কিছু খেয়ে ফেললে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে এবং কাযা ওয়াজিব হবে। (৩) মুখে পান নিয়ে ঘুমিয়ে সুবহে সাদিকের পরে জাগ্রত হলে রোজা ফাসেদ হয়ে যাবে এবং তার উপর কাযা ওয়াজিব হলে। (৪) মুখ দিয়ে, নাক দিয়ে বা পায়খানার রাস্তা দিয়ে ঔষধ ঢুকালে কিংবা কান দিয়ে ঔষধ ঢালিলে রোজার কাযা ওয়াজির হবে। কানের ভিতর তেলের ফোটা ঢালিলে রোজা ভঙ্গ হয়। আর পানির ফোটা ঢালিলে রোজা ভঙ্গ হয় না। (৫) পেটে বা মাথায় ক্ষত স্থনে ঔষধ ঢালিলে তা পেটে বা মাথায় পৌছে গেলে রোজা ফাসিদ হয়ে যাবে এবং তার কাযা ওয়াজিব। (৬) লোবান, হুক্কা, পান বিড়ি, সিগারেট ইত্যাদি পান করলে বা ধোয়া শুকলে রোজা ভঙ্গ হয়। তবে আতর গোলাপ ইত্যাদি যে গুলোর মধ্যে ধোয়া নেই সুগন্ধি শুকলে রোজা ভঙ্গ হয় না। (৭) দাতঁ হতে রক্ত বের হয়ে গলায় চলে গেলে যদি রক্ত হতে থুথু বেশী হয় তবে রোজার কোন ক্ষতি নেই। আর যদি রক্তের পরিমান বেশী হয় বা সমান হয় তবে রোজা ভঙ্গ হবে। রোজার মাসের পরবর্তী সময়ে প্রতিটি রোজার জন্য একটি করে রোজা রাখাই কাযা রোজা। 


মহান আল্লাহ বলেনঃ যদি কোন ব্যক্তি শুধু এই পার্থিবজীবন ও তার প্রাচুর্য ভোগ করতে চায়, তাহলে আমি তাদের সবাইকে তাদের কর্মের প্রতিফল এ দুনিয়ার মধ্যেই যথাযথ আদায় করে দেই এবং সেখানে তাদের বৈষয়িক পাওনাকে কোন অংশেই কম করা হবেনা।


প্রকৃতপক্ষে এরাই হচ্ছে সে সব দুর্ভাগা লোক যাদের জন্য পরকালে জাহান্নামের আগুন ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। দুনিয়ার জীবনে যা কিছু তারা বানিয়েছে সব তা হবে বেকার, যা কিছু তারা দুনিয়ায় করে এসেছে, তা সবই হবে নিরর্থক। সূরা হুদ-১১ (১৫-১৬) 


অতএব মহান আল্লাহ ইবাদত করা যেমন আমাদের উপর কর্তব্য তেমনি তার দয়া, অনুগ্রহ ব্যতীত আমাদের কোন উপায় নাই। মহান আল্লাহ আমাদেরকে তার মুকররয বান্দা হিসেবে কবুল করুন। আমিন। 


লেখা: মাওলানা মোহাম্মদ আমির হোসেন তালুকদার, অধ্যক্ষ, কাউনিয়া বালিকা আলিম মডেল মাদ্রাসা, বরিশাল।


চলবে ...