বরিশালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অভিযান নিয়ে প্রশ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক
এইচ.এম.এ রাতুল, জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল।
প্রকাশিত: সোমবার ৩০শে মে ২০২২ ০৬:৪৪ অপরাহ্ন
বরিশালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অভিযান নিয়ে প্রশ্ন

বরিশাল বিভাগে একযোগে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন উপজেলায় ত্রুটিপূর্ণ ৫৯টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যার পর বিষয়টি নিশ্চিত করে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল জানান, স্ব স্ব জেলার সিভিল সার্জনের নির্দেশনা অনুযায়ী গোটা বরিশাল বিভাগে একযোগ অভিযান চালিয়ে ৫৯ টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল জেলার ১১টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এদিকে অবৈধ জেনেও ১৮টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। 


এতে অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে জেলায় স্বাস্থ্য বিভাগ পরিচালিত অভিযান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কিছু ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে দাবি করা হয়েছে, অর্থ লেনদেনে যাদের সঙ্গে সমঝোতা হয়নি তাদের ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যাদের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ৭২ ঘন্টার হলেও এধরণের অভিযান সারাবছরই চলছে তাই পর্যায়ক্রমে সেগুলোর ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বরিশালের সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান।


তিনি জানান, বরিশাল জেলায় মোট ৩৫টি অনিবন্ধিত ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এদের মধ্যে শনিবার ও রোববার ১৭টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাকি ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে। ডা. মারিয়া হাসান আরও বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বলা হয়েছে অনিবন্ধিত ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযান কার্যক্রম চলমান থাকবে।  


সিটি করপোরেশন এলাকায় অভিযান পরিচালনা না হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন এলাকায় বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের অনুমতি সাপেক্ষে জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে। অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা সিটি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করব।


তবে জেলার কয়েকটি উপজেলায় একাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকের দাবি, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক অভিযানের সময় সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের খুশি করে অনেক অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার চলছে। যে সকল ডায়াগনস্টিক সেন্টার টাকা দিতে রাজি হয়নি সেগুলো বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 


গৌরনদী উপজেলার একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক জানান, শনিবার তার ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ ওই উপজেলায় আরও কয়েকটি  অবৈধ প্যাথলজি-ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। সেগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না সিভিল সার্জন। বানারীপাড়ার আরেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক বলেন, অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করলে সবগুলো বন্ধ করা উচিত। কিছু করছে আর কিছু অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু রাখার মানে হচ্ছে দুর্নীতি করা হয়েছে।


সচেতন নাগরিক কমিটি বরিশাল জেলার সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা বলেন, অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের যে উদ্যোগ সরকার নিয়েছে তা যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। এই নির্দেশনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হবে বলে আমি প্রত্যাশা করি। বরিশাল সিভিল সার্জন যদি জানেন তার জেলায় ৩৫টি অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে, তার মধ্যে ১৭টি বন্ধ করলেন বাকি ১৮টি অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার কেন বন্ধ করলেন না সেটি বোধগম্য নয়। তারপরও আমি আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে তিনি অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো বন্ধ করতে উদ্যোগী হবেন।


সম্মিলিত সামাজিক জোটের জেলা শাখার সদস্য সচিব এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করার নির্দেশনা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দিয়েছেন। সেখানে বরিশালের সিভিল সার্জন অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার জেনেও কয়েকটিকে বন্ধ করেছেন আবার কয়েকটিকে চলতে দিচ্ছেন। এটি সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তার শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ বলে মনে করি। এটিই প্রমাণ করে স্বাস্থ্যখাতে চরম অব্যবস্থাপনা রয়েছে। 


স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ডা. হুমায়ূন শাহীন খান বলেন, ছয় জেলায় ৫৯টি অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাকি যেগুলো রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিভাগে নিবন্ধিত ৫৭২টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ২১১টি ক্লিনিক রয়েছে।