শেবাচিম হাসপাতালে মোমবাতির আলোয় চলছে চিকিৎসা!

নিজস্ব প্রতিবেদক
এইচ.এম.এ রাতুল, জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল।
প্রকাশিত: শুক্রবার ১১ই নভেম্বর ২০২২ ০৫:৫৩ অপরাহ্ন
শেবাচিম হাসপাতালে মোমবাতির আলোয় চলছে চিকিৎসা!

দক্ষিণাঞ্চলের বৃহৎ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের পাঁচটি ইউনিট টানা তিনদিন যাবত বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। আর রেডিওলজি বিভাগে এমন অবস্থা বিরাজ করছে ১৮দিন ধরে। মোম আর চার্জার লাইট ব্যবহার করে সেবা দিতে হচ্ছে রোগীদের। এতে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। আরও কয়েকটি ওয়ার্ডে এই অবস্থা তৈরি হলেও প্রাথমিকভাবে তা মেরামত করা হয়েছে। চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হওয়ার কথা স্বীকার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ১৯৬৮ সালে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর বিদ্যুত সংযোগ মেরামত না করায় এমন অবস্থা হয়েছে।


হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে জি ব্লকের পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ড ৩ ও ৪। আই ব্লকের চক্ষু (পুরুষ), এ ব্লকের পুরুষ সার্জারি ১ এবং রেডিওলজি বিভাগ। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন সেবা প্রত্যাসীরা। রোগীর স্বজন খালেদা বেগম বলেন, ওয়ার্ডে আলো না থাকায় আমরা অন্ধকারে টয়লেটে পর্যন্ত যেতে পারছি না। চরম অসুবিধার মধ্যে রয়েছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আরেক রোগীর স্বজন আরাফাত হোসেন শাওন বলেন, হাসপাতালে ঠিকমতো চিকিৎসা পাই না। তারপরও আসতে হয়। কারণ আমাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। এখন এখানে বিদ্যুত পর্যন্ত নেই। এভাবে মনিটরিং ছাড়া হাসপাতাল চলতে পারে না।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নার্স বলেন, বিদ্যুত না থাকায় রাতে আমরা ঠিকভাবে ইনজকেশন দিতে পারছি না। চলাফেরা করতে পারছি না। মোম আর চার্জার লাইট ব্যবহার করে সেবা দিতে হচ্ছে। আরেক নার্স বলেন, হাসপাতালের সামনে কোটি টাকা ব্যয় করে গেট নির্মাণ করা হচ্ছে। এটা হচ্ছে শুধু শুধু অপচয়। হাসপাতালে সেবা দেওয়া যায় না। এখন বিদ্যুত নেই। টয়লেট ব্যবহারের অনুপযোগী। আমি মনে করি, গেটের চেয়ে রোগী সেবা আমরা কিভাবে দিতে পারব, সেই উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।


সার্জারি ওয়ার্ডে দায়িত্বরত একজন চিকিৎসক বলেন, বুধবার থেকে মারাত্মক অসুবিধার মধ্যে রয়েছি। এভাবে একটি হাসপাতাল চলতে পারে না। হাসপাতালের পুরো সিস্টেমটাই এলোমেলো। আমরা টর্চ দিয়ে রোগী দেখি। তাহলে বুঝুন আমাদের পরিস্থিতি!


এ বিষয়ে জানতে হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলামকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মনিরুজ্জামান শাহিন বলেন, বর্তমানে সার্জারি ওয়ার্ডগুলোতে বিদ্যুত নেই। আর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের পর থেকে এখন পর্যন্ত বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন রয়েছে রেডিওলজি বিভাগ। এতে করে সরকারিভাবে পরীক্ষা করানো যাচ্ছে না। চিকিৎসকরা সঠিকভাবে চিকিৎসা দিতে পারছে না। নার্সরাও সেবা দিতে পারছে না। 


তিনি আরও বলেন, হাসপাতালটি ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিদ্যুত লাইন মেরামত করা হয়নি বলে শুনেছি। এজন্য বিভিন্ন স্থান থেকে বিদ্যুতের কেবল নষ্ট হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।