বরগুনা পাথরঘাটায় আল মামুন নামে এই ব্যাক্তির করা ১৩ মামলার আসামি হয়েছে মনির আসমা দম্পতি। একটি মামলায় গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন কারাভোগও করতে হয়েছে মনিরকে। এ নিয়ে পাথরঘাটা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করলে সবশেষ চলতি মাসের ৪ তারিখ তিন সাংবাদিক ও আসমা সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে বরিশাল সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করিয়েছে আল মামুন।
আল মামুন পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানি ইউনিয়নের ধলু মিয়ার ছেলে। সে সৌদি প্রবাসী। ভুক্তভোগী মনির আসমা দম্পতি একই ইউনিয়নের বাসিন্দা।
সবশেষ মামলার আসামিরা হলেন- আসমা আক্তার, চরদুয়ানী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য মজিবর রহমান, আজকের পত্রিকার পাথরঘাটা উপজেলা প্রতিনিধি তারিকুল ইসলাম ওরফে কাজী রাকিব, কালবেলার পাথরঘাটা প্রতিনিধি আল আমিন ফোরকান, মোহনা টেলিভিশনের পাথরঘাটা প্রতিনিধি সুমন মোল্লা ও অলি উল্লাহ।
ভুক্তভোগী মনির জানান, আল মামুন তাকে ভিসা দিয়ে সৌদি আরবে কাজের জন্য নিয়ে যায়। এর বছর খানেক পর থেকে তার স্ত্রী আসমার সাথে মামুন যোগাযোগ শুরু করে। মামুন ছুটিতে বাড়িতে এসে আমার স্ত্রীকে কু প্রস্তাব দেয়। আসমা এই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সৌদি আরবে বসে মামুনের লোকজন আমাকে জিম্মি করে নির্যাতন করে। এবং আমার স্ত্রী আসমাকে তালাক দিতে চাপ প্রয়োগ করে।
ভুক্তভোগী আসমা জানান, মামুন দেশে এসে সৌদি আরবে জিম্মি রাখা আমার স্বামী মনিরকে হত্যা করার ভয় দেখিয়ে আমাকে এক মাস আটকে রেখে ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে আমাকে তালাক দিতে মনিরকে দেশে পাঠায় মামুন।
মনির তার স্ত্রী আসমাকে তালাক না দেওয়ায় বিভিন্ন জেলায় মনির ও আসমার বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা দায়ের করায় আল মামুন।
এর একটি মামলায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে গ্রেপ্তার হন মনির। এতে অতিষ্ঠ হয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাথরঘাটা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী আসমা ও তার সন্তানরা।
এই সংবাদ সম্মেলনের জের ধরে সাংবাদিকসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে বরিশাল সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করান আল মামুন। আল মামুন দেশে না থাকায় পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি দিয়ে তার চাচাতো ভাই লিটন হাওলাদারকে দিয়ে বরিশালে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করান।
এবিষয়ে স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য মজিবুর রহমান বলেন, মনিরের স্ত্রীকে তালাক দিতে আল মামুন অনেক চেষ্টা করেছে। এনিয়ে স্থানীয় ভাবে শালিস বৈঠক হয়েছে। স্বামীকে তালাক দিয়ে মামুনকে বিবাহ করতে রাজি না হওয়ায় মামুন নিজে বাদি হয়ে ৩ টি মামলা, মামুনের বাবা ধলু মিয়াকে দিয়ে একটি, চাচাতো ভাই লিটনকে দিয়ে ৩ টি, মামুনের ভাগিনা আবুবকরকে দিয়ে একটি, মামুনের বেয়াইন নাসরিন কে দিয়ে একটি ও বিদেশে নেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তৈয়বুর রহমান, মরিয়ম, সগির নাজির ও রফিকুলকে দিয়ে একটি করে মোট ১৩ টি মামলা দায়ের করেন। এসব মামলাগুলোর মধ্যে অর্ধেকের বেশি মামলা ভুয়া প্রমাণিত হওয়ায় নিষ্পত্তি করে দিয়েছে আদালত।
এ দিকে পাথরঘাটার তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন পাথরঘাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী ও সাবেক সভাপতি মির্জা শহিদুল ইসলাম খালেদ।
পাথরঘাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ‘ভুক্তভোগীরা প্রেসক্লাবে এসে উপস্থিত হয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন। তা সাংবাদিকরা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করবেন। যদি সাংবাদিকরা ভুক্তভোগীদের অভিযোগ প্রকাশ করে মামলার শিকার হন তাহলে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা কোথায়? অতি শিগগিরই এ মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাই।’
একজনের বিরুদ্ধে এতো গুলো মামলার কারন জানতে আল মামুনের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে মামুন প্রবাসে থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
পাথরঘাটা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চলতি মাসের ৪ তারিখে বরিশাল সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি তদন্তের জন্য আদালত কর্তৃক পাথরঘাটা থানায় প্রেরণ করা হয়েছে।’ এছাড়াও আসমার বিরুদ্ধে আরো একটি সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা রয়েছে।
এদিকে উপরোক্ত ঘটনায় সোমবার রাত ৮টার দিকে পাথরঘাটা প্রেসক্লাবে একটি জরুরি সভা চলাকালে জানা যায় পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের শহিদুর রহমান নামক একজন ইউপি সদস্য আলোকিত প্রতিদিনের পাথরঘাটা প্রতিনিধি জিয়াউল ইসলাম ও আরটিভি'র পাথরঘাটা প্রতিনিধি তাওহীদুল ইসলাম শুভ'র বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।