সরাইলে লাখো মানুষের অভাব একটি ব্রিজ!

নিজস্ব প্রতিবেদক
মো: তাসলিম উদ্দিন, উপজেলা প্রতিনিধি সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ১৪ই ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:৪৯ অপরাহ্ন
সরাইলে লাখো মানুষের অভাব একটি ব্রিজ!

গ্রামের প্রায় লাখো  মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা এই বাঁশের সাঁকো। এই সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করছে নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। পার করতে হচ্ছে বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল। মাঝে মাঝে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। এলাকাবাসীর অভাব শুধুমাত্র একটি ব্রিজের! স্থানীয় বাসিন্দাদের একটাই চাওয়া, দ্রুত সময়ের মধ্যে চেত্রা নদীর উপর একটি ব্রিজ নির্মাণ করে দেয়া হোক। 


খোঁজ নিয়ে জানা যায়,  ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল  উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নের রাণীদিয়া, কাকরিয়া,রাজাপুর ওবুনিয়াটেক, কিশোর গঞ্জের ভৈরব এলাকার জাফরনগর, বুদনগর, শ্রীপুর ও খলাপাড়া প্রায় লাখো মানুষ এ সাঁকোর উপর দিয়ে যাতায়াত করে। নদীতে ব্রিজ না থাকায় গ্রামের জনগণ ৭০০ ফুট লম্বা বাঁশের সাঁকো দিয়েই রাত-দিন যাতায়াত করছে।


স্থানীয়রা বলছে, এ এলাকার স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, কৃষক, দিনমজুররা প্রতিদিন এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করছে। এ বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে চলতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছে স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। 


এছাড়া রোগী নিয়েও বিপাকে পড়তে হয়। উপজেলার অরুয়াইল বাজারের দক্ষিণ দিকে ইউনিয়নের চেত্রা নদীর ওপর নির্মিত এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে এখানকার ১২-১৪গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ নদী পারাপার হয়। সাঁকো পারাপারে জনপ্রতি নেয়া হয় তিন টাকা। এতে প্রতিদিন আয় হয় ছয় থেকে সাত হাজার টাকা। আয়ের টাকায় এই সাঁকোর মেরামত কাজের  ব্যয় করে থাকেন বলে জানাযায়। 


সাঁকোতে দায়িত্ব থাকা ব্যক্তি জানান, চেত্রা নদীর ওপর সাঁকোটি বছরের সাত-আট মাস থাকে। বর্ষাকালে পানিপ্রবাহ বেশি থাকায় তখন সাঁকোটি উঠিয়ে নেয়া হয়। প্রতিবার সাঁকো নির্মাণে তিন লাখ টাকার বেশি খরচ হয়।  


গতকাল সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, অরুয়াইল আবদুস সাত্তার ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়, অরুয়াইল বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় ও মহিলা মাদরাসা ছাড়াও উপজেলার  বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী এই সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে থাকে। সরকারি উদ্যোগে এই চেত্রা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মিত হলে এখানকার জীবনযাত্রার মান আরো বদলে যেত। 


অরুয়াইল বাজারের ব্যবসায়ী নিজাম মিয়া বলেন, এপর্যন্ত অনেকে ভিডিও করে নিয়ে ছাড়ছে ব্রিজ তো হইল না। ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের  ইউনিয়নের মেঘনা পাড়ের রাণীদিয়া, কাকরিয়া, রাজাপুর ও বুনিয়াটেক এ চার গ্রামের মানুষ চেত্রা নদীর ওপর এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করে।  বৃহস্পতিবার অরুয়াইল বাজারে হাট বসে। এ হাটে মেঘনা নদীর ওপারের কিশোরগঞ্জের ভৈরব এলাকার জাফরনগর, বুদনগর, শ্রীপুর ও খলাপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা এই সাঁকো পারাপার হয়ে অরুয়াইল বাজারে আসা-যাওয়া করেন। 


আরেক ব্যবসায়ী বলেন, খননের অভাবে চেত্রা নদীটি এখন মরা নদী। এক সময় এ নদী দিয়ে সারা বছর নৌকা চলাচল করত। ২০ বছর আগে এলাকার মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে রাণীদিয়া গ্রামের মজর মিয়া নামে এক ব্যক্তি নিজের জমি বিক্রি করে সেই সময়ের লাখ টাকা খরচ করে চেত্রা নদীর ওপর প্রথম বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন।এই জনপদের মানুষ কবে একটি সেতু পাবে বছরের পর বছর ধরে সে আশায় বুক বেঁধে আছে। 


এখানকার হাজার হাজার  মানুষের দাবী জনপ্রতিনিধি ও সরকারের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এলাকার মানুষের দুর্ভোগের  কথা চিন্তা করে চেত্রা নদীর ওপর একটি স্থানীয় ব্রীজ নির্মাণ করে দেবে বলে প্রত্যাশা করেন তারা।


অরুয়াইল ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূইয়া বলেন, দীর্ঘদিন  থেকে এলাকাবাসী সেতুর দাবি করে আসছেন। কিন্তু কথা শোনার কেউ নেই। তিনি বলেন, আমার জানা মতে এই সেতুর কোড নাম্বার পড়েছে কিন্তু আমলাতন্ত্র জটিলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেতুটি  হচ্ছে না। এটা দুঃখের বিষয়।


এ বিষয়ে সরাইল উপজেলা প্রকৌশলী মো. আনিছুর রহমান বলেন,এই সেতুটি হলে মানুষের ভোগান্তি হবে না।চেত্রা নদীর ওপর পাকা সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা করতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।