১২০ দিন পর জামিনে মুক্তি পেলেন সেই স্মৃতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শুক্রবার ৩রা ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৫:২৫ অপরাহ্ন
১২০ দিন পর জামিনে মুক্তি পেলেন সেই স্মৃতি

প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে  কটুক্তি ও গুজব ছড়ানোর অভিযোগে রাজবাড়ী মহিলা দলের সদস্য ও রাজবাড়ী ব্লাড ডোনার্স ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সোনিয়া আক্তার স্মৃতি ইসলাম (৩৫) নামে দায়ের করা মামলার দীর্ঘ চার মাস পর জামিন পেয়েছেন।


বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজবাড়ী জেলা কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান তিনি। এসময় জেলা বিএনপি, ব্লাড ডোনার্স ক্লাব সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।


সোনিয়া আক্তার স্মৃতির কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজবাড়ী জেলা বার ও স্মৃতির মনোনীত আইনজীবী এ্যাড. নেকবর হোসেন মনি।


এর আগে মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) দিবাগত মধ্যরাতে রাজবাড়ী পৌরসভার ৩নম্বর বেড়াডাঙ্গা এলাকার নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।


সোনিয়া আক্তার স্মৃতি রাজবাড়ী পৌরসভার ৩নং বেড়াডাঙ্গা এলাকার মো. খোকনের স্ত্রী। তিনি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ রাজবাড়ী ব্লাড ডোনার্স ক্লাব’ নামে একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও রাজবাড়ী মহিলা দলের সদস্য।


মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত (৩১ আগষ্ট) দুপুরে তিনি তার নিজস্ব আইডি দিয়ে ফেসবুক চালানোর সময় ‘Sonya akter smrity’ নামের একটি আইডিতে “একজন প্রধানমন্ত্রী হয়ে সাবেক ৩ বারের প্রধানমন্ত্রীকে যেভাবে কুরুচী শীল বক্তব্য দিলেন। দিলেন বললে ভুল হবে, উনি মাঝে মাঝেই এমন দূর্গন্ধ যুক্ত কথা বলেন। তাকে আপনি আপনার জায়গা মানুষ হিসাবে কোন জায়গায় রাখবেন। ?? এই কথাগুলো শুনে তার মন্ত্রীমহোদয়েরা হাত তালি দেয়। ভদ্রতা পারিবারিক শিক্ষা, যেটা ওনাকে কেউ শিখাতে পারে নাই। বাবা/মা সুসন্তান জন্ম না দিলে কবরে গিয়েও গালি শুনতে হয়।” এই রকম গুজবমূলক পোষ্ট দেখতে পান মামলার বাদী। পরে রাজবাড়ী শিশু পার্কে ফুচকা উৎসবের নামে অশ্লীল নৃত্যের আয়োজন করার অভিযোগে করা মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করলে আদালত তা গ্রহণ করেন।


রাজবাড়ী সদর থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক সামসুল আরেফিন চৌধুরী ওই ফেসবুক পোস্টের বিষয়ে রাজবাড়ী সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। পরে অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়। সোনিয়া আক্তার প্রায় এক মাস আগে ফেসবুকে ওই পোস্ট দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ সূত্রে জানা যায়।


প্রসঙ্গত,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে ২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত দেড়টার দিকে সোনিয়া আক্তার স্মৃতির নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে সদর থানা পুলিশ।পর দিন ৫ অক্টোবর তাকে আদালতে পাঠানো হলে আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।এরপর ১০ অক্টোবর রাজবাড়ীর ১ নম্বর আমলি আদালতে স্মৃতির জামিনের আবেদন করা হয়। বিচারক কায়ছুন নাহার সুরমা জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন।


২৬ অক্টোবর (বুধবার) দুপুরে পুনরায় স্মৃতির আইনজীবী তার জামিন আবেদন করলে রাজবাড়ী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রুহুল আমীন তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে আবারও কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।


গত বছরের ৩১ অক্টোবর স্মৃতিকে জামিন দেন হাইকোর্ট। পরে এই জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।রাষ্ট্রপক্ষ বিষয়টি আমলে স্মৃতিকে আবার কারগারে পাঠানোর নির্দেশ দেই।


সর্বশেষ চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি শুনানিতে আপিল বিভাগ রাজবাড়ীর স্মৃতির হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রাখেন।


সোনিয়া আক্তার স্মৃতিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোর পর তিন দফায় তার বাড়িতে যান বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দরা এবং তার পাশে থাকার আশ্বাস দেন। অপরদিকে স্মৃতির শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদী সমাবেশ করে রাজবাড়ী জেলা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ সহ বিভিন্ন সংগঠন।