বিনা বিচারে কারাগারে আটক ৩২ মাস, আদালতের নির্দেশে পরিচয় উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক
আতিকুর রহমান, জেলা প্রতিনিধি, ঝিনাইদহ
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ১৮ই আগস্ট ২০২২ ০৫:৫২ অপরাহ্ন
বিনা বিচারে কারাগারে আটক ৩২ মাস, আদালতের নির্দেশে পরিচয় উদ্ধার

ঝিনাইদহ কারাগারে বিনা বিচারে ৩২ মাস ধরে আটক থাকা অজ্ঞাত পরিচয় প্রতিবন্ধির অবশেষে পরিচয় মিলেছে। কোন অভিযোগ ছাড়া কারাগারে আটক ব্যক্তির নাম মৃণাল রায়। তিনি নীলফামারী জেলার সদর উপজেলার দক্ষিণ চাওড়া গ্রামের যতিন্দ্র্র রাথ রায়ের বড় ছেলে। একটি দৈনিক পত্রিকায় এ নিয়ে একটি খবর প্রকাশিত হয়। বিনা বিচারে কারাগারে আটক থাকার বিষয়ে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট বৈজয়ন্ত বিশ্বাস এক আদেশ জারি করেন। 


নীলফামারি পুলিশ ও ঝিনাইদহ জেলা নির্বাচন অফিস আটক ব্যক্তির পরিচয় উদ্ধারে তদন্ত শুরু করেন। পরিচয় উদ্ধারের পর মৃনাল রায়ের পরিবার ঝিনাইদহের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট বৈজয়ন্ত বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগ করেন। 


এ বিষয়ে বিজ্ঞ বিচারক নীলফামারী সদর থানার অফিসার ইনচার্জের সাথে ফোনে কথা বলে অবিলম্বে আটক ব্যাক্তির পরিচয়ের সমর্থনে কাগজপত্র জমা দিতে নির্দেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় মৃনালের মামা চিনেন্দ্র নাথ রায় নিলফামারী থানায় হাজির হয়ে নিশ্চিত করেন ঝিনাইদহ জেলা কারাগারে আটক ব্যাক্তি তার হারিয়ে যাওয়া ভাগ্নে মৃণাল রায়। তিনি দাবীর সপক্ষে ভাগ্নের জন্ম নিবন্ধন সনদসহ অন্যান্য ডকুমেন্ট জমা দেন। 


মামা চিনেন্দ্র নাথ রায় আরো জানান, তার ভাগ্নে প্রায় ৬/৭ বছর যাবৎ বাড়ি থেকে নিখোঁজ। পরিবার বহু জায়গায় খুজেও তাকে পায়নি। ছেলে হারানোর শোকে ইতিমধ্যেই তার গর্ভধারিনী মা সুধা রায় মারা গেছেন। অসুস্থ বাবাও শয্যাশাযী। আদালত সুত্রে জানা গেছে, মৃনালের পরিবার উপযুক্ত কাগজপত্র দাখিল করলে যে কোন দিন সে মুক্তি পাবে। 


ঝিনাইদহ জেলা কারাগারের সুপার আনোয়ার হোসেন জানান, ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নগরবাথান এলাকা থেকে পরিচয়হীন এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করে পুলিশ। একটি জিডির ভিত্তিতে এসআই মোহাম্মদ ইউনুচ আলী গাজী অজ্ঞাত ওই ব্যক্তিকে আদালতে হাজির করে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখার জন্য আবেদন জানান। 


আদালত জেলা কারাগারের নিরাপত্তা হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। সেই ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর থেকে কারাগারেই রয়ে গেছেন মৃনাল রায়। জেল সুপার আরও জানান, বিষয়টি ঝিনাইদহের অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বৈজয়ন্ত বিশ্বাসের নজরে আসলে তিনি (বিচারক) স্বউদ্যোগে লোকটির আসল ঠিকানা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। ৩১ জুলাই অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট টেকনাফ, কক্সবাজার, উখিয়া ভাসানচর থানার অফিসার ইনচার্জসহ ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছবি পাঠানোর নির্দেশ জারি করেন।


 একই আদেশে আটক লোকের সঠিক ঠিকানা খুঁজে পেতে নোয়াখালী, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার ও এপিবিএন কমান্ডারদের নির্দেশ দেন তিনি। 


এর আগে মানসিক ভারসাম্যহীন কিনা তা পরীক্ষা করাতে খুলনা মেডিকেলেও নেওয়া হয় লোকটিকে। ঝিনাইদহ জেলা নির্বাচন অফিসে ওই ব্যক্তিকে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তার হাতের ছাপ গ্রহণ করে বাংলাদেশের নাগরিক কিনা তা যাচাই করা হয়। পরিবারের দেওয়া তথ্যমতে, দীর্ঘ দিন মানসিক প্রতিবন্ধী মিনালের জন্ম ১৯৮১ সালের ১১ আগস্ট।