প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৫, ১১:১
রোববার (২৪ আগস্ট) ঢাকায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠককে কেন্দ্র করে দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক ও ঘনিষ্ঠ করার প্রত্যাশা রয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রথমে দুই মন্ত্রী একান্তে এবং পরে প্রতিনিধি পর্যায়ে বৈঠক করবেন।
বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে থাকবে ব্যবসা, বিনিয়োগ, সংযুক্তি, কৃষি ও নানা পর্যায়ে দুই দেশের নাগরিকদের চলাচল সহজ করা। এছাড়া দিকনির্দেশনা এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধির মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করা হবে। সূত্রের বরাতে জানা গেছে, বৈঠক শেষে পাঁচ থেকে ছয়টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সইয়ের কথা রয়েছে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বৈঠকে জোর দেওয়া হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, বোঝাপড়া ও অভিন্ন স্বার্থের উপর। সাম্প্রতিক সময়ে উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ এবং বৈঠকের ধারাবাহিকতায় সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে অমীমাংসিত বিষয়গুলোও আলোচনার বাইরে রাখা হবে না। এসব অমীমাংসিত বিষয়ের মধ্যে রয়েছে একাত্তরের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন এবং অবিভাজিত সম্পদে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা।
বৈঠকের ফলে সরকারি ও কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা বিলোপ চুক্তি, দুই দেশের বাণিজ্য বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন, সংস্কৃতি বিনিময় এবং ফরেন সার্ভিস একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা প্রতিষ্ঠা করা হবে। এছাড়া দুই রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ও পাকিস্তানের ইসলামাবাদ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মধ্যে সহযোগিতা বিষয়ক চুক্তি সই হবে।
অন্যদিকে, দুই দেশের সম্পর্কের ইতিবৃত্তও উল্লেখযোগ্য। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর বর্তমান সরকারের সময়ে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে। প্রায় দেড় যুগ স্থবির থাকার পর পাকিস্তান সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্য আগ্রহী। এরই অংশ হিসেবে গত এপ্রিলে ঢাকায় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বৈঠক কেবল চুক্তি সইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং ভবিষ্যতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা ও কূটনৈতিক সম্পর্কের নতুন সূচনা হিসেবে কাজ করবে। অর্থনীতি, বাণিজ্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়বে।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠকরণে এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। দুই দেশের নেতৃত্ব আশা প্রকাশ করেছেন, বৈঠকের মাধ্যমে পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধি পাবে এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্থিতিশীল ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবে।
এ ধরনের বৈঠকগুলো কেবল কূটনৈতিক পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং সাধারণ জনগণ ও ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের জন্যও ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। দুই দেশের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সম্পর্ক উন্নয়নের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।