বাংলাদেশেই রয়েছে নব্য জেএমবির নতুন আমির

নিজস্ব প্রতিবেদক
সাখাওয়াত জামিল সৈকত (অতিথি লেখক)
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২৪শে সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৫:২৮ অপরাহ্ন
বাংলাদেশেই রয়েছে নব্য জেএমবির নতুন আমির

ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, নব্য জেএমবির প্রধান তামীম চৌধুরী মারা যাওয়ার পর মূসা নব্য জেএমবিকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছিল। মূসার ইচ্ছা ছিল বিস্ফোরক সংগ্রহ করা। সিলেট-চাঁপাইনবাবগঞ্জে তাদের আস্তানা পাওয়া যায়। সেগুলো ধ্বংস হওয়ার পর তারা নতুন করে আবারও সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে। নব্য জেএমবির একজন আমির আছে। সেই আমিরের তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও নারায়ণগঞ্জ থেকে নব্য জেএমবির দুই সদস্যকে গ্রেফতারের পর মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) যাত্রাবাড়ী ও নারায়ণগঞ্জের জঙ্গি আস্তানা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

মনিরুল ইসলাম বলেন, রাজধানীর গুলিস্তানসহ পুলিশের ওপর পাঁচটি বোমা হামলার সঙ্গে নব্য জেএমবির পাঁচজনের এটি সেল জড়িত ছিল। তাদের পরিকল্পনায় হামলা হয়েছে। এদের বাইরে এই দুজনের ভূমিকা আছে। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় একটি অভিযান পরিচালিত হয়েছে। সেখান থেকে তিনজনকে আটক করা হয়। তিনজনের মধ্যে দুজনকে আমরা গ্রেফতার করেছি। তারা হলেন- ফরিদ উদ্দিন রুমী ও মিশুক খান ওরফে মিজান। চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল পুলিশের ওপর আইইডি (ইমপ্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) হামলা হয়েছিল। ওই হামলায় আমাদের তিনজন পুলিশ সদস্য আহত হন। সেই ঘটনার সঙ্গে তারা জড়িত। পাশাপাশি গতকাল যে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক পাওয়া গেছে- এ ঘটনায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

গ্রেফতারদের পরিচয় উল্লেখ করে মনিরুল ইসলাম বলেন, ফরিদ উদ্দিন রুমী একজন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। মিশুক খান ওরফে মিজান মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা বেশকিছু তথ্য দিয়েছেন। তাদের আস্তানা থেকে একে ৭৪ খেলনা রাইফেল, খেলনা পিস্তল, ইলেক্ট্রিক্যাল ডিভাইস, তিনটি আইইডি উদ্ধার করা হয়েছে। তারা এ তিনটি আইইডি পুলিশের ওপর হামলার জন্য তৈরি করেছিল। প্রতি মাসের শেষ দিকে পুলিশের ওপর হামলা করা হয়। এবারও তারা সেই পরিকল্পনা ছিল।

নব্য জেএমবির টার্গেট কেন পুলিশ? জানতে চাইলে সিটিটিসি প্রধান বলেন, নব্য জেএমবির সদস্যরা দেশের প্রচলিত আইন-কানুন, সংবিধানে বিশ্বাস করে না। এ কারণে আইন প্রয়োগকারী পুলিশকে তারা শত্রু মনে করে। এর বাইরে পুলিশের অভিযানের কারণে তাদের অনেক শীর্ষ নেতা মারা গেছে অথবা গ্রেফতার হয়েছে। পুলিশের ওপর হামলা হলে পুলিশের মনোবল ভাঙবে, সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি হবে।

মনিরুল ইসলাম বলেন, পুরো মাসেই তারা টার্গেট খোঁজে। কোন জায়গাটা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। পুলিশ বক্সে পুলিশ সদস্যরা কখন যান। নিরস্ত্র পুলিশ কখন কোথায় থাকেন? আলো-আঁধার কখন থাকে, সেসব খেয়াল করে হামলার পরিকল্পনা করে। এর আগে প্রত্যেকটি হামলায় তারা জনবহুল এলাকা বেছে নিয়েছিল। এ মাসেও তারা হামলার জন্য নিরাপদ জায়গা রেকি করেছিল। কোথায় কী ধরনের বোমা পুঁতে রাখা যায়।

দেশের জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি-না? জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনগুলোর আদর্শ ভিন্ন ভিন্ন জঙ্গি সংগঠন শেয়ার করে। হলি আর্টিসান হামলার সময় তারা আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছিল। এবারও তারা চেষ্টা করেছিল। তিনি আরও বলেন, সম্ভবত অর্থ সহায়তা পাওয়ার জন্য এবং তাদের যে হামলা করার ক্যাপাসিটি আছে সেটা প্রমাণের জন্য তারা আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণের অপচেষ্টা করে। তাদের একজন আমির রয়েছে। আমরা তার বিষয়ে তথ্য পেয়েছি। জঙ্গিরা হামলা চালিয়ে আমিরের কাছে তথ্য দেয়। সেই আমির এগুলো প্রচার করে।

মনিরুল ইসলাম বলেন, সাইট ইন্টেলিজেন্স কারো বক্তব্য যাচাই করে না। তাদের সে ধরনের মেকানিজম নেই। সাইট ইন্টেলিজেন্সের দায় স্বীকারের বিষয় আমরা কথা বলেছি। পুলিশের ওপর হামলার বিষয়ে আইএস যে দাবি করেছে, সেটা সঠিক নয়। আমরা মনে করি এগুলো বাংলাদেশ থেকেই করা হয়েছে। নেপালিদের ক্যাসিনোতে অংশ নেয়ার বিষয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, ২০১৬ সালে ফেব্রুয়ারিতে সিটিটিসি গঠিত হয়। আমরা টেরোরিজম নিয়ে কাজ করি। গুরুত্ব দিয়ে কাজ করি। নেপালিরা সরাসরি কোনো টেরোরিজমে যুক্ত না হলে আমরা সেটি নিয়ে কাজ করি না।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব