রাতের আধারে হঠাৎ ভাঙ্গনঃ নড়িয়া রক্ষা বাঁধে ২০৭ মিটার ধস

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শনিবার ২৮শে সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:৪৪ অপরাহ্ন
রাতের আধারে হঠাৎ ভাঙ্গনঃ নড়িয়া রক্ষা বাঁধে ২০৭ মিটার ধস

শরীয়তপুরের নড়িয়া রক্ষা বাঁধের ২শ ৭মিটার এলাকা জুড়ে ধ্বসে পড়েছে। এতে একটি মসজিদ, ২টি পাকা দালান, ১০টি  বসত বাড়িসহ গাছপালা নদীতে বিলিন হয়েছে। বৃহস্প্রতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে নড়িয়া উপজেলার উত্তর কেদারপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে আশপাশে বাসিন্দাদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। আতংকিত হয়ে অন্তত ৫০টি বসত বাড়ি অন্যত্র সড়িয়ে নিয়েছে ভাঙন কবলিতরা। শুক্রবার সকালে ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন পানিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম।

বৃহস্পতিবার রাতে নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের উত্তর কেদারপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে ভাঙন কবলিত এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। রাতেই আতংকিত হয়ে অন্তত ৪০টি পরিবার তাদের ঘর অন্যত্র সড়িয়ে নিয়েছে। শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার মো. গোলাম মাওলা বলেন, পদ্মার নদীর পানি প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে। জোয়ারের সময় চলছে। প্রচুর স্রোত থাকায় নড়িয়া রক্ষা বাধেঁর উত্তর কেদারপুর এলাকায় ২০৭ মিটার অংশ ধ্বসে পড়েছে। উত্তর কেদারপুর এলাকার নার্গিস বেগম বলেন, অনেক টাকা খরচ করে আমরা তিনতলা বিল্ডিং করি। গত বছর পদ্মা নদীতে সেই বিল্ডিং ধ্বসে পরে। এখন যেখানে থাকছি তাও বৃহস্পতিবার রাতে ধ্বসে পরেছে। এখন কোথায় যাব?

কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাফেজ সানাউল্লাহ জানান, বৃহস্পতিবার রাতে উত্তর কেদারপুর নড়িয়া রক্ষা বাঁধ ধ্বসে পড়েছে। এতে একটি মসজিদ, পাকা বাড়ি, ফসলি জমিসহ গাছপালা নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। এখনো থেমে থেমে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এলাকার লোকজনের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়ন্তি রুপা রায় বলেন, ঘটনার সাথে সাথে আশপাশের লোকজনদের নিরাপদে সড়িয়ে নেয়ার কাজ শুরু করেছি। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের কাজ চলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন ডাম্পিংয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকাশ কৃঞ্চ সরকার জানান, আমরা নিয়মিত প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করি। কিন্তু কোথাও কোন ফাটল দেখি নাই। হঠাৎ উত্তর কেদারপুর নড়িয়া রক্ষা বাঁধে ধ্বস দেখা দিয়েছে। খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনা স্থলে পৌঁছেছি। জরুরী ডাম্পিং শুরু করা যায় কিনা- সে চেষ্টা করা হচ্ছে। এখনো থেমে থেমে ভাঙন চলছে। শুক্রবার সকালে ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শনে আসেন পানিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম এসময় ভাঙন কবলিত ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে নগদ অর্থ ও শুকনো খাবার বিতরন করেন। ভাঙন রোধে সবধরনের ব্যাবস্থ্য গ্রহন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত বছর নড়িয়ার আট কিলোমিটার জুরে ব্যাপক ভাঙন ছিল। ভাঙনে ওই এলাকার ৫ হাজার ৮১টি পরিবার গৃহহীন হয়। নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ অসংখ্য স্থাপনা বিলিন হয়ে যায়। ভাঙন ঠেকাতে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় এক হাজার ৯৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্পর অনুমোদন করে। পানি উন্নয়ন বোর্ড নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান খুলনা শীপইয়ার্ড লিমিটেডকে ওই কাজের কার্যদেশ প্রদান করেন। যার মধ্যে ৫৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে নড়িয়ার সুরেশ্বর হতে জাজিরার কায়ূম খার বাজার পর্যন্ত আট দশমিক নয় কিলোমিটার অংশে নদীর তীর রক্ষার কাজ শুরু হয়। বাকি টাকা দিয়ে নদীর চরখনন করা হবে। গত বছর ১২ ডিসেম্বর ওই প্রকল্পের নদীর তীর রক্ষার কাজ শুরু করা হয়।

ইনিউজ ৭১/এম.আর