একদিন মালিকের ডাকে এই গোলামকে সাড়া দিয়ে চলে যেতে হবে অনেক দূরে। যেখানে গেলে মানুষ আর ফিরে আসে না। হাজার হাজার মানুষ ডাকলেও সাড়া দিবোনা চলে যাবো না ফেরার দেশে। পাড়া পড়শিরা আমার দিকে চেয়ে হয়তো দুএক ফোঁটা জ্বল ফেলবে। প্রিয়জনদের বুক ফেটে কারো কারো অশ্রু গড়িয়ে পড়বে কপাল বেয়ে। বুক ভরা ব্যথা নিয়ে সবাই বিদায় জানাবে আমাকে। সে সময় কেউ আমার কথা শুনতে পাবেনা।
হয়তো চিৎকার করে বলবো তোমরা সবাই আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো, আমাকে একা ফেলে যেও না কিন্তু আমার কথা কেউ শুনতে পাবেনা। নিষ্ঠুর পৃথিবীকে কত কিছুই না দিয়েছি কিন্তু শেষ বিদায়ে এক টুকুরো কাপড় সাড়া কিছুই জুটলো না। আক্ষেপ আর অনুসূচনায় ব্যতিত হবো তখন। তার পরের ঘটনা হিসাব নিকাশের সে কথা গুলো লিখার বা বলার মত সাহস নাই আমার।
হয়তো আমার স্মৃতিগুলো মাঝে মাঝে উঠে আসবে কারো কারো কল্পনায়। তখন কেউ কেউ হয়তো হাত তুলে জিয়ারত করবে সমাধিতে। চিহ্নিত সেই চেনা কবরের পাশে এসে মোনাজাত করে যাবে। তাঁর মন ফিরে যাবে স্মৃতির পাতায় যা ছিলো আমার সাথে জড়ানো। আমার কথা স্বরণ করে হয়তো একটুখানি অশ্রু গড়িয়ে হারিয়ে যাবে নিজের অজান্তেই। হয়তো আমি তাঁর চোখের আড়ালে থেকে তাকে করুণ সুরে ডাকবো। একদিন সমাধিটি নিশ্চিহ্ন হওয়ার ফলে হয়তো আমার বুকে চাপিয়ে দেওয়া হবে অন্য কাউকে। একদিন যারা আমাকে বিদায় জানিয়েছিল কালের আবর্তে তারাও পৃথিবীকে বিদায় জানিয়ে আসতে হবে শেষ ঠিকানায়। ভাবতে ভাবতে বিষয়গুলো কেমন জানি হয়ে যায়। আহারে জীবন। মরন একদিন হবে শেষ ঠিকানা। মুছে দিবে আমার সকল রঙ্গিন পরিচয়। কখন যে যদি স্বাধের দম হঠ্যাৎ ফুরে যায় কোন ভরসা নেই। এই আছি আবার চোখের পলকে হয়তো নেই। এ পৃথিবীটা তো একটা সফর। সময় শেষ হলেই তো চির বিদায় নিতে হবে জগত ছেড়ে। কিন্তু কী করলাম সারা জীবনে। পৃথিবী থেকে কিই-বা নিলাম আর পৃথিবীকে কিই-বা দিলাম। আমি তো শূন্য হাতে এসেছিলাম আবার শূন্য হাতেই যাবো। কীভাবে ফুরালো এতগুলো দিন সে হিসেব হয়তো কারো করার সময়ই নেই। কারো ফেরার সময় হয়তো ঠিক করা থাকে। নির্ধারিত সময়ে কেউ কেউ ফিরেও আসে। কেউ কেউ আবার কোনোদিনও আসে না।
আমাদের প্রচলিত সামাজিক সংস্কারে ছোট থেকেই শেখানো হয়েছে- 'যাই' বলতে নেই। বিদায়ও স্পষ্ট করে বলতে নেই। বলতে হবে 'আসি'। সারাজীবন ঘরের বাইরে কোথাও যাওয়ার আগে তাই সব সময় বলেছি, 'আসি।' অর্থাৎ যাওয়ার আগেই ফিরে আসার এক ধরনের নিশ্চয়তা দিয়ে যাওয়া। তবু কি সব সময় ফেরা নিশ্চিত করা যায়...? আসে কি কোন ভরসা। ঘর কিম্বা বাহিরে। যেখানেই থাকি না কেন কোন নিশ্চয়তা নেই ঠুকনো জীবনের। তার পরের লাইন কি লিখবো জানাই যে নেই.....?
লেখক- রিফাত হোসাইন সবুজ, গণমাধ্যম কর্মী, নওগাঁ।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।