অফিসকক্ষে প্রকৌশলীর মাদকসেবন, দৃশ্য ধারণ করায় সাংবাদিককে লাঞ্ছিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শুক্রবার ১৯শে জুন ২০২০ ০৪:১৫ অপরাহ্ন
অফিসকক্ষে প্রকৌশলীর মাদকসেবন, দৃশ্য ধারণ করায় সাংবাদিককে লাঞ্ছিত

অফিসকক্ষে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান মৃদুলের মাদকসেবনের দৃশ্য ধারণ করায় লাঞ্ছিত করা হয়েছে দুই টিভি সাংবাদিককে।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) বিকাল ৫টার দিকে শরীয়তপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান মৃদুলের অফিস রুমে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিকদের ও সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অবহিত করে পালং মডেল থানায় রাত ১০টায় দিকে একটি অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক। ঘটনার পর থেকে জেলার অন্যান্য সাংবাদিকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

লাঞ্ছনার শিকার সাংবাদিকরা হলেন শরীয়তপুর ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজ এবং বাংলাদেশ প্রতিদিনের জেলা প্রতিনিধি রোকনুজ্জামান পারভেজ এবং যুগ্ন সম্পাদক ও গাজি টিভির প্রতিনিধি মো. মানিক মোল্লা। লাঞ্ছিত করার ঘটনায় সংগঠনের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজ এবং বাংলাদেশ প্রতিদিনের জেলা প্রতিনিধি রোকনুজ্জামান পারভেজ বলেন, শরীয়তপুরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন শরীয়তপুর সদর ডোমসার ইউনিয়নে  প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যায় একটি গভীর নলকূপের (পানির পাম্প) নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নির্মাণকাজের এস্টিমেট চেয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান মৃদুলের কাছে ফোন দেওয়া হয়। এরপর বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তিনি অফিসে আছেন বলে সাংবাদিক মানিক মোল্যাকে ফোনে জানান। পরে ৫টার দিকে শরীয়তপুরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কার্যালয়ের আমরা দুজন যাই। গিয়ে দোতলায় উঠে নির্বাহী প্রকৌশলী অফিসকক্ষে ঢুকেই সিগারেট খেতে দেখি। পরে গাঁজার গন্ধ পাই। এ সময় আমার সঙ্গে থাকা গাজী টিভির সাংবাদিক মনিক মোল্যা ওই মাদকসেবনের দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করার চেষ্টা করে। এ অবস্থায় সাংবাদিকের হাত থেকে ক্যামারা ছিনিয়ে নিয়ে যান প্রকৌশলী। এক ঘণ্টার মতো তার অফিসের কলাপসিবল গেট আটকে রেখে মারপিট করার হুমকি দেন। এ অবস্থায় জেলা প্রাশাসককে ফোন করলে তিনি তার পিয়ন দিয়ে তালা খুলে দেন।

তিনি আরো জানান, তখন নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান মৃদুল উত্তেজিত হয়ে আমাদের মারপিট করার চেষ্টা করে এবং নিচের গেট আটকে দেন। ওই সময় ঘটনাটি জেলার শীর্ষ কর্মকর্তা ডিসি ও স্থানীয় সাংবাদিকদের মুঠোফোনে জানানোর চেষ্টা করি। এর কিছু সময় পর মোবাইল ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে যান ওই নির্বাহী প্রকৌশলী। এ ঘটনা নিয়ে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন এই সিনিয়র সাংবাদিক।

এ বিষয়ে কথা বলতে শরীয়তপুরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান মৃদুলকে বারবার ফোন করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়া পরে জরুরি কল আছে বলে ফোনটি কেটে দেন। এর পর একাধিকবার তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

শরীয়তপুর ইলেক্ট্রনিকস মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাভিশনের জেলা প্রতিনিধি শহিদুজ্জামান খান বলেন, একজন মাদকাসক্ত অফিসার অফিসকক্ষে বসে মাদক সেবন করবে আবার সাংবাদিকদের লাঞ্ছিত করবেন- এটা দুঃখজনক। আমার ওই কর্মকর্তার বিচার দাবি করি।

পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম উদ্দিন বলেন, সাংবাদিকদের সাথে খারাপ ব্যবহার করার একটি অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাটি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, সাংবাদিকদের সাথে ঘটনাটির বিষয়ে শুনেছি। ভুক্তভোগী সাংবাদিকদের অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ে জানানো হবে।