ঝালকাঠিতে বিতর্কে যুবলীগ: কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় জাল-জালিয়াতির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: বুধবার ১২ই জুলাই ২০২৩ ০৬:৪৫ অপরাহ্ন
ঝালকাঠিতে বিতর্কে যুবলীগ: কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় জাল-জালিয়াতির অভিযোগ

প্রতিষ্ঠার ৫০ বছরেও পূর্নাঙ্গ কমিটি পায়নি ঝালকাঠি জেলা যুবলীগ। শুরু থেকেই দলের কার্যক্রম চলে আসছে আহবায়ক কমিটি দিয়ে। তবে সম্প্রতি সেই আহবায়ক কমিটি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানান বিতর্ক। অভিযোগ উঠছে একটি পক্ষ জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কমিটি দখলের পায়তারা চালাচ্ছে।


জানাগেছে, সম্প্রতি যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষিত শান্তি সমাবেশের নির্দেশনা সম্বলিত একটি প্যাডকে কেন্দ্র করে জেলার বিভিন্ন স্তরের যুবলীগের নেতৃবৃন্দের মাঝে বিভেদ ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে জাতীয় নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে এ জেলায় যুবলীগের সাংগঠনিক পরিস্থিতি এলোমেলো হচ্ছে বলে জানিয়েছে সাধারন কর্মীরা। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা সম্বলিত একটি প্যাডের হুবহু নকল করে এই বিভ্রান্তির সৃষ্টি করা হয়েছে বলেও জনান তারা। তবে ক্রমশই বিভ্রান্তি এখন বড় ধরনের সমস্যায় রুপ নিতে চলছে। যার বহি:প্রকাশ হচ্ছে অভ্যন্তরীণ ভেদাভেদের মাধ্যমে বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতে। এ বিষয়টিতে কথা বলা নিয়ে ঝালকাঠী আওয়ামী লীগ এবং যুবলীগের নেতৃবৃন্দ এড়িয়ে যাচ্ছেন। তবে ভোগান্তীতে রয়েছে তৃনমূলের কর্মীরা। তাই পরিস্থিতি নিরসনে কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে স্থানীয় যুবলীগের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে।


সূত্রমতে, গত ২২ জুন জেলার রাজাপুর, কাঠালিয়া, নলছিটি ও ঝালকাঠি সদর উপজেলায় এবং ২৪ জুন জেলা যুবলীগের শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে শান্তি সমাবেশ সফল করার লক্ষে যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল স্বাক্ষরিত একটি প্যাডে কেন্দ্রীয় নেতাদের সহোযোগিতাকারী হিসেবে ঝালকাঠী জেলা যুবলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির যুগ্ম আহবায়ক রেজাউল করিম জাকিরকে আহবায়ক এবং ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিলকে যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারন সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল তার নিজস্ব ভেরিফেইড ফেসবুক পেইজে কমিটির বিষয়টি আপলোড করে নিশ্চিত করেন। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায় ফেসবুকে অন্য একটি প্যাডে হাবিবুর রহমান হাবিল এর পরিবর্তে ঝালকাঠি জেলা যুবলীগের সদস্য কামাল শরীফের নাম দিয়ে সেখানে যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে উল্লেখ করা। যা নকল অর্থাৎ জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন জেলা যুবলীলীগের দায়িত্বশীল একাধিক নেতারা।


নকল প্যাডটি প্রকাশের পর যুবলীগের সদস্য কামাল শরীফের সমর্থকরা তাকে নবনির্বাচিত যুগ্ম আহবায়ক উল্লেখ করে অভিনন্দন দিয়ে প্রচার প্রচারনা শুরু করে। যদি কামাল তার কর্মী সমর্থকদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা গ্রহন করেলেও এখন পর্যন্ত তিনি তার ফেসবুকে পদপদবী পাওয়া প্যাডের ছবি প্রকাশ করেননি।


এদিকে জাল-জালিয়াতির এ ঘটনায় যুবলীগের তৃর্নমূলনেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ইতিমধ্যে অনেক নেতাকর্মী কামাল শরীফের নাম উল্লেখ করা ওই প্যাডকে নকল দাবী করে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।


জেলা যুবলীগ সূত্রে জানাগেছে, সর্বশেষ ২০১২ সালের ১৭ জুন ঝালকাঠি সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী কে আহ্বায়ক, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করীম জাকির ও হাবিবুর রহমান হাবিলকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৭১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় যুবলীগ। তবে সেই কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে অনেক আগেই। এ বিষয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির যুগ্ম আহবায়ক রেজাউল করিম জাকির এর সাথে আলাপ করা হলে তিনি বিভ্রান্তির বিষয়টি অস্বীকার করেন। অপর যুগ্ম আহবায়ক হাবিবুর রহমান হাবিল ঢাকায় একটি কনফারেন্সে থাকার অজুহাত দেখিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান। ঝালকাঠি জেলা যুবলীগের সদস্য কামাল শরীফের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।


অভিযোগ রয়েছে প্রায় তিন বছর আগেও যুবলীগের বিতর্কিত কর্মী কামাল শরিফ যুবলীগকে বিতর্কে ফেলতে একাধিকবার অবৈধ কমিটি গঠনের চেষ্ঠা চালিয়েছে। 


৩ বছর পরে আবারো তারা একই ভাবে জেলা যুবলীগের কমিটি দখলের পায়তারা চালাচ্ছে। এছাড়াও ঝালকাঠি জেলা যুবলীগের সদ্য যুগ্ন আহবায়ক দাবি করা কামাল শরীফের বিরুদ্ধে কাউন্সিলর হুমায়ুন কবিরের হাত কেটে ফেলার অভিযোগসহ নানান অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। কামাল শরীফের দুলাভাই কালাম ঝালকাঠির বহুল আলোচিত মুসলিম গিনি হাউজ ডাকাতি মামলার আসামি ছিলেন বলে জানা যায়।


টেন্ডারবাজীসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে  যুবলীগের আহবায়ক রেজাউল করিম জাকিরের নামেও। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে আরো বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের তথ্য আছে। ত্যাগী পরিচ্ছন্ন কর্মীদের পদ পদবী দেয়ার দাবী জানিয়েছে সাধারন যুবলীগ কর্মীরা। 


এ বিষয়টিতে কথা বলা নিয়ে ঝালকাঠী আওয়ামী লীগ এবং যুবলীগের নেতৃবৃন্দ এড়িয়ে যাচ্ছেন। তবে ভোগান্তীতে রয়েছে তৃনমূলের কর্মীরা। তাই পরিস্থিতি নিরসনে ঝালকাঠি-২ আসনের সাংসদ, আমির হোসেন আমু এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ঝালকাঠি জেলা যুবলীগের নেতৃবৃন্দ।