গৃহবধূ থেকে আপসহীন নেত্রী, দেশের রাজনীতিতে অম্লান পদচারণা

তিনি সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়ার সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। দম্পতির দুই সন্তান—ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মরহুম আরাফাত রহমান কোকো। ১৯৮১ সালের ৩০ মে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ঘটে।

জিয়ার মৃত্যুর পর দলীয় কোন্দল শুরু হয়। বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট পদ গ্রহণে বিরোধিতা দেখা দেয়। বিএনপির নেতারা খালেদাকে রাজনীতিতে আনার জন্য দিনরাত অনুরোধ চালান। ১৯৮২ সালের ১৩ জানুয়ারি তিনি কর্মী হিসেবে রাজনীতিতে নাম লেখান। একই বছরের ৭ নভেম্বর জিয়ার সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে প্রথম বক্তব্য রাখেন।

তৎকালীন সেনাপ্রধান এরশাদের ভয়ে খালেদার রাজনৈতিক উত্থান বাধাগ্রস্ত হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তবে কোনো বাধাই তাকে আটকাতে পারেনি। ১৯৮৩ সালের মার্চে তিনি দলের সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান হন। কয়েক মাসের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয়ে ওঠেন এবং ১৯৮৪ সালে বিএনপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা নেন।

১৯৯১ সালে এরশাদের পতনের পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করে। রাজনীতিতে আসার মাত্র ১০ বছর পর তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। তার প্রথম মেয়াদ ১৯৯১-১৯৯৬, দ্বিতীয় মেয়াদ ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি, এবং তৃতীয় মেয়াদ ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত।

আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে খালেদা জিয়াকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। ২০১০ সালে সেনানিবাসের বাড়ি থেকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়া, মিথ্যা মামলা, বিচার ব্যবস্থাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার—সবই তার বিরূপ পরিস্থিতির অংশ। ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেননি।

করোনা মহামারির সময় ২০২০ সালের ২৫ মার্চ শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পান। ‘ফিরোজা’ বাসায় বন্দী থাকা অবস্থায় চিকিৎসা ও নিরাপত্তা দেওয়া হয়। ২০২৪ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় দেশজুড়ে আন্দোলনের পর ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতির নির্দেশে মুক্তি পেয়ে যুক্তরাজ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য যান। চার মাসের চিকিৎসা শেষে ৬ মে দেশে ফিরে আসেন।

খালেদা জিয়ার জীবন ইতিহাসের এক অম্লান অধ্যায়, যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন, আপসহীন নেতৃত্ব ও নারীর ক্ষমতায়নের নিদর্শন হিসেবে চিরকাল স্মরণীয় থাকবে।