কাদেরই জয়নাল হাজারীর হাতে তুলে দিলেন মনোনয়ন চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২৯শে অক্টোবর ২০১৯ ১০:৩৬ পূর্বাহ্ন
কাদেরই জয়নাল হাজারীর হাতে তুলে দিলেন মনোনয়ন চিঠি

গত ২ অক্টোবর (বুধবার) আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত করা হয় ফেনীর আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল হাজারীকে।

সেদিন রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে এক অনির্ধারিত বৈঠকে শেখ হাসিনা তাকে দলের গুরুত্বপূর্ণ এই পদে নিয়োগ দেন। তবে পরদিন এ খবরের সত্যতার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আমার এ ধরনের খবর জানা নেই। খবরটি কোথা থেকে এল তাও জানি না। কে দিল এই খবর, তাও জানি না।’ কিন্তু আজ সোমবার (২৮ অক্টোবর) সে খবরের আনুষ্ঠানিক সত্যতা মিলল তার মাধ্যমেই।

সন্ধ্যায় ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে চিঠি নিতে আসেন জয়নাল আবেদীন হাজারী। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার হাতে চিঠি তুলে দেন। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া। এর মাধ্যমে দেড় দশক পর দলীয় পদে ফিরলেন আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল হাজারী। এদিকে ওবায়দুল কাদের থেকে নেয়া জয়নাল হাজারীর চিঠি নেয়ার ছবিটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এর আগে গত ২ অক্টোবর জয়নাল হাজারীর উপদেষ্টা হওয়ার খবরও বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

বিষয়টি নিশ্চিত করতে সেদিন বিকালে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ফেসবুক লাইভে আসেন জয়নাল হাজারী নিজেই। তিনি বলেন, ‘আমি দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করতে চাই, আমাকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বুধবার রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে তাতে সই করে আওয়ামী লীগ অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে কোনো বিভ্রান্তি ছড়ানোর সুযোগ নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘যে ফোরামে আমির হোসেন আমু ভাই, তোফায়েল ভাই সদস্য, সেই জায়গায় স্থান দিয়ে শেখ হাসিনা আমার প্রতি আন্তরিকতা দেখিয়েছেন।’ জয়নাল হাজারী ১৯৮৪ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ফেনী-২ (সদর) আসন থেকে ১৯৮৬, ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালে টানা তিনবার সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০১ সালের ১৭ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান জয়নাল হাজারী। সংসদ সদস্য হিসেবে তার শেষ মেয়াদে নানা বিতর্কে জড়ান জয়নাল হাজারী। এ কারণে ২০০৪ সালে দল থেকে বহিষ্কৃত হন। এরপর দীর্ঘদিন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিলেন তিনি। ফেনী থেকে হাজারিকা নামে প্রকাশিত একটি দৈনিকের সম্পাদকও তিনি।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে ফিরেন তিনি। পাঁচটি মামলায় ৬০ বছরের সাজা হয় তার। এরপর ওই বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করলে আট সপ্তাহের জামিন পান হাজারী। পরে ১৫ এপ্রিল নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে পাঠানো হয় কারাগারে। চার মাস কারাভোগের পরে ২০০৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্ত হন তিনি।

শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় সম্প্রতি জয়নাল হাজারীকে চিকিৎসার জন্য ৪০ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ওই অনুদানের চেক গ্রহণ করতে হাজারী বুধবার গণভবনে গেলে তার সঙ্গে রাজনীতি নিয়েও অনেক কথা হয় দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার। এসময় প্রধানমন্ত্রী তার স্বাস্থ্যের খোঁজ খবন নেন এবং তার সুস্থতা কামনা করেন।