দ্বীনের মধ্যে কোনো বাড়াবাড়ি নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২০শে ডিসেম্বর ২০২২ ১২:০৫ অপরাহ্ন
দ্বীনের মধ্যে কোনো বাড়াবাড়ি নেই

ইসলাম ধর্ম গ্রহণে মানুষের প্রতি জবরদস্তি করা হয় না এবং বাধ্যবাধকতাও করা যাবে না। কিন্তু যে ব্যক্তি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবে, তার জন্য ইসলামের বিধি-বিধান পালনে বাধ্যতামূলক করা অযৌক্তিক নয়।


উদাহরণ স্বরূপ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের যে নিয়ম সর্বত্র স্বীকৃত তা তুলে ধরা যায়- কোনো রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভের জন্য কাউকে বাধ্য করা হয় না কিন্তু যদি কেউ স্বেচ্ছায় কোনো দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে, তখন সে ব্যক্তির উপর রাষ্ট্রের আইন-কানুন মেনে চলা আবশ্যক কর্তব্য হয়ে পড়ে। এমনকি তাকে রাষ্ট্রের আইন মানতে বাধ্য করা পৃথিবীর সকল দেশই কর্তব্য বলে মনে করে।


ঠিক তেমনি ইসলাম সহজ, সরল ও সত্য ধর্ম। সাম্যের ধর্ম। বিভেদ ভুলে এক হয়ে চলা ইসলামের অন্যতম শিক্ষা। কিন্তু সেই সাম্যে, সহজ, সরল ও সত্য ধর্মে আজ নানা মতের ছড়াছড়ি। যে যেই মতের তার কাছে সেই মতই সঠিক। বাকি সব মতই ভুল। আর এই কারণেই এতো অসহিষ্ণুতা। সবাই বুঝে না বুঝে ইসলাম রক্ষায় ব্যস্ত। আর এই ইসলাম রক্ষা করতে গিয়ে কে হকের ওপর অবস্থিত তা প্রতিষ্ঠা করতেই সবাই ব্যস্ত। কিন্তু আমলের খবর নেই।


হজরত মুয়াবিয়া ইবন আবু সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জেনে রাখো! তোমাদের আগে আহলে কিতাবগণ (ইহুদি ও নাসারা) বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছে। আর এ মিল্লাতের লোক অদূর ভবিষ্যতে ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। এক দল হবে জান্নাতি, আর তারা ওই জামাতভুক্ত যারা আল্লাহর কিতাব ও রাসুলের সুন্নতের অনুসারী হবে।’ (আবু দাউদ ৪৫২৮)


আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে ঘোষণা করেছেন-


لَاۤ اِکۡرَاهَ فِی الدِّیۡنِ ۟ۙ قَدۡ تَّبَیَّنَ الرُّشۡدُ مِنَ الۡغَیِّ ۚ فَمَنۡ یَّکۡفُرۡ بِالطَّاغُوۡتِ وَ یُؤۡمِنۡۢ بِاللّٰهِ فَقَدِ اسۡتَمۡسَکَ بِالۡعُرۡوَۃِ الۡوُثۡقٰی ٭ لَا انۡفِصَامَ لَهَا ؕ وَ اللّٰهُ سَمِیۡعٌ عَلِیۡمٌ


‘ধর্ম মানতে কোনো ধরনের জোর জবরদস্তি নেই। সঠিক পথ ভুল পথ থেকে পরিষ্কারভাবে আলাদা হয়ে গেছে। তাই যে তাগুত (মিথ্যা প্রভুদের) অস্বীকার করবে, এবং আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস আনবে, সে অবশ্যই এমন এক মজবুত হাতল ধরবে, যা ভাঙ্গার কোনো আশঙ্কা নেই। আল্লাহ সব শোনেন, সব জানেন।’ (সুরা আল-বাক্বারা : আয়াত ২৫৬)


দ্বীনের (জীবন-ব্যবস্থায়) মধ্যে কোনো বাড়াবাড়ি বা জবরদস্তি নেই।’ হ্যাঁ, আল্লাহ তাআলা সত্য কথা বলেছেন। এ কথার তাৎপর্য হলো- কোনো ব্যক্তিকে জবরদস্তি করে ধর্ম গ্রহণ করানো যাবে না।


কিন্তু যখনই কোনো ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ধর্ম গ্রহণ করবে, তখন তার উপর ধর্মীয় রীতি-নীতি পালন করা আবশ্যক কর্তব্য হয়ে পড়ে। যদি সে তা না করে, বিধান হচ্ছে তাঁকে ধর্মীয় রীতি-নীতি পালনে তাগিদ দেওয়া আবশ্যক। প্রয়োজনে ধর্মীয় বিধানের আনুগত্য করার প্রতি আবশ্যকীয় করাও অযৌক্তিক নয়।


কোন কোন লোক প্রশ্ন করে যে, আয়াতের দ্বারা বোঝা যায়, দ্বীন গ্রহণে কোনো বল প্রয়োগ নেই। অথচ দ্বীন ইসলামে জিহাদ ও যুদ্ধের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে? একটু গভীরভাবে লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে যে, এমন প্রশ্ন যথার্থ নয়। কারণ, ইসলামে জিহাদ ও যুদ্ধের শিক্ষা মানুষকে ঈমান আনয়নের ব্যাপারে বাধ্য করার জন্য দেওয়া হয়নি। যদি তাই হত, তবে জিযিয়া করের বিনিময়ে কাফেরদেরকে নিজ দায়িত্বে আনার কোন প্রয়োজন ছিল না। ইসলামে জিহাদ ও যুদ্ধ ফেৎনা-ফাসাদ বন্ধ করার লক্ষ্যে করা হয়। কেননা, ফাসাদ আল্লাহর পছন্দনীয় নয়, অথচ কাফেররা ফাসাদের চিন্তাতেই ব্যস্ত থাকে। তাই আল্লাহ্‌ তাআলা এরশাদ করেছেন-


وَيَسْعَوْنَ فِي الْأَرْضِ فَسَادًا


‘তারা যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়ায়, কিন্তু আল্লাহ্‌ তাআলা ফাসাদকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আল-মায়িদা : আয়াত ৬৪)


আল্লাহ তাআলা মানুষের ঈমানের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পালনের সাথে সাথে কুরআনের বিধি-বিধানগুলো মানুষের জীবনে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।