বিবাহিত জীবনে মানসিক প্রস্তুতি :পরিবার এবং সমাজের ভারসাম্য টিকিয়ে রাখার অন্যতম উপাদান হচ্ছে বিয়ে। অনেকেই আবার ভাবেন বিয়ে তো মানুষের জীবনে একটি স্বাভাবিক ঘটনা। আমাদের বাবা-মা একসময় বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন , এভাবে আমরাও করবো এটাই তো রীতি। কিন্তু এই স্বাভাবিক বিষয়টি ঘটে যাওয়ার আগে ও পরে অনেক রকম ঘটনা ও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিবাহিত ব্যক্তিদের মধ্যে যখন পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাব দেখা দেয় তখনি সমস্যার শুরু হয়। এই আন্ডারস্ট্যান্ডিং এর অভাবে তারা নিজেদের কথাগুলো ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে থাকে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে স্বামী স্ত্রীর বিষয় ছাড়া ও দুই পরিবারের সদস্যরা কিছু ভূমিকা পালন করে যার ফলে জটিলতা আরো বেড়ে যায়। বিবাহিত জীবনে দুটি ভিন্ন পরিবার থেকে আসা মানুষের মধ্যকার সম্পর্ক ভালো খারাপ দুই সময় দিয়েই যেতে পারে। সম্পর্কে দ্বন্দ সৃষ্টিকারী বিষয় গুলো পর্যালোচনা করলে যে বিষয় গুলো প্রথমেই আসে তা হচ্ছে -
১. দুজন ব্যক্তির ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিত্বের ধরণ
২. পারিপার্শিক অবস্থায় ভিন্নতা
৩. ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং
৪. দুজন ব্যক্তির আলাদা আলাদা স্বপ্ন
প্রতিটি বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্য়েই ছোট-বড় মনোমালিন্য হয়েই থাকে। অনেকেই এই মনমালিন্যের জেদ ধরে বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তে চলে যায়। তাই বলে কি এত দ্রুত বিবাহ-বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ? বলতে গেলে বিবাহবিচ্ছেদ মহামারী রোগের মতো ঘিরে ফেলছে আমাদের সমাজকেআজকাল আসে-পাশে তাকালে বা সোশ্যাল মিডিয়া ঘাটলে আমরা দেখি সেটি হলো- ডিভোর্স, বর্তমানে যতো বিয়ে হচ্ছে তার বেশিরভাগই ডিভোর্স হয়ে যাচ্ছে । কাজেই বিয়ে নিয়ে এসব দম্পতিদের একটি বাস্তববাদী মনোভাব তৈরির প্রয়োজন রয়েছে। দাম্পত্য সম্পর্ক ক্ষেত্রে কি শুধু ভালোবাসাই যথেষ্ট ? শুধু ভালোবাসা দিয়েই কি সম্পর্কে জীবন কাটানো এবং সুখী হওয়া যায় ? না, বিষয়টি সবসময় এমন নয় , একটি সম্পর্কে দুজন সঙ্গীকেই প্রতিনিয়ত সমান চেষ্টা করে যেতে হয়। দাম্পত্য সম্পর্ককে সুস্থ, সতেজ এবং রোমান্টিক রাখতে সঙ্গী হিসেবে আপনার করণীয় এবং বৰ্জনীয় বিষয় গুলো নিচে তুলে ধরা হলো -
দাম্পত্যজীবনেকরণীয় -
- দাম্পত্য সম্পর্কে দুজন সঙ্গী কি চায় সে বিষয়টি খোলাখোলি কথা বলা যাকে আমরা ইফেক্টিভ কমিউনিকেশন বলে থাকি।
- যেকোনো বিষয়ে দ্বিমত থাকতেই পারে , সেটা নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে একে অন্যের পরামর্শ নেয়া
- সম্পর্কের মানুষটির প্রশংসা করা
- মাঝে মাঝে সঙ্গীর ভালো গুণাবলী গুলো বলা।
- অন্তরঙ্গ সময় কাটানো
-যেকোনো কাজে লিঙ্গ ভেদাভেদ না করে পরস্পরের কাজে সাহায্য সহযোগিতা করা
- মাঝে মাঝে কোয়ালিটি টাইম কাটানো, ঘুরতে যাওয়া।
দাম্পত্যজীবনেবর্জনীয় –
- নিজেদের প্রাইভেসি এবং বাউন্ডারি বজায় রাখা
- তুমি সবসময় এমন টা করো অথবা তুমি কখনোই ভালো কিছু করো নি , এধরণের কথা বর্জন করা।
- অন্যের সাথে তুলনা করে কথা না বলা
- একই ভুলের কথা একাধিক বার না বলা
- মজার চলে ছোট করে কথা না বলা
- যেকোনো ব্যাপারে একজন কে নির্দিষ্ট করে দোষারোপ না করা
- নিজেদের ব্যক্তিগত কথা অন্যকে না বলা
নিজেই নিজেকে সাহায্য করা: কোনো মানুষ ই শতভাগ বিশুদ্ধহয় না।ব্যক্তিগত ট্রমা, পারিবারিক মনোমালিন্য বা কর্মক্ষেত্রে স্ট্রেসের জন্য যেকোনো মানুষ ডিপ্রেশন অথবা এংজাইটির মধ্যে দিয়ে যেতে পারেন । দম্পতির মধ্যে যদি কোনো ঘাটতি থাকে সেক্ষেত্রে সে বিষয়টি নিয়ে আত্ম উন্নয়ন বা সেলফ ডেভেলপমেন্ট করতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা:বর্তমানে দাম্পত্য জীবনকে সুন্দর করার জন্য ম্যারিটাল, প্রিমারিটাল এবং কাপল কাউন্সেলিং বেশ জনপ্রিয়। বিষণ্ণতা, চাইল্ডহুড ট্রমা, অপ্রাপ্তি, এডিকশন, পারিবারিক চাপ ইত্যাদি সমস্যার জন্য সঙ্গীকে কষ্ট দিয়ে অথবা দোষারোপ করে বিবাহ বিচ্ছেদে না যাওয়াই ভাল। তাছাড়া, সম্পর্কে সন্দেহের প্রবণতা, কমিনিকেশন গ্যাপ, দায়িত্বহীনতার মনোভাব, কম্পাটিবিলিটি চেক করার জন্য প্রিম্যারিটাল কাউন্সেলিং বেশ সহায়ক। আপনার সচেতনতাই আপনার দাম্পত্য জীবনকে সুন্দর করতে সহায়ক হবে। নিজে অথবা পারিবারিক ভাবে সমাধান করতে না পারলে একজন প্রফেশনাল সাইকোলজিস্টের সাহায্য নেয়া জরুরী।তাহলেই আমরা আমাদের সম্পর্কগুলোকে রক্ষা করতে পারবো এবং একটি সুস্থ ও সুন্দর সমাজ গঠন করতে পারবো আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। এক্ষেত্রে দাম্পত্য কাউন্সেলিং এর জন্য মাইন্ডশেপারলিমিটেডহতে পারে আপনার ভরসার জায়গা।
লেখা: রাবেয়া সিকদার সাথী, সাইকোসোসাল কাউন্সেলর, মাইন্ডশেপারলিমিটেড
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।