আশাশুনি সদর ইউনিয়নের বেড়ী বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত মানুষের দুঃখ-দুর্দশা প্রকাশ্যে না আসলেও ভিতরে ভিতরে চরম বিপর্যস্ততা অসহায় পরিবারগুলোকে কুরে কুরে খাচ্ছে। দীর্ঘ একটি বছর তার জীবন থেকে খসে গেলেও কষ্টকর সাম্প্রতিক অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ তাদেরকে অন্ধকারাচ্ছন্নতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
সদর ইউনিয়নের মানুষকে দীর্ঘদিন ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আষ্টেপিষ্টে আকড়ে ধরে আছে। একের পর প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলোচ্ছ্বাস, সাইক্লোন পাউবো’র বেড়ী বাঁধ ভেঙ্গে এলাকাকে তছনছ করে দিয়েছে। অসংখ্য মানুষের ভিটে বাড়ি, চাষের জমি ও মৎস্য ঘের নদী গর্ভে বিলীন করে দিয়েছে। হাজার হাজার একর জমি নদীর কাছে নতি স্বীকার করে ছেড়ে দিয়ে ভূমিহীন,
সম্বল হারা কিংবা চাষের জমি হারা হয়ে অনেকে ভবিষ্যৎকে সংকুচিত করতে বাধ্য হয়েছেন। জমি নদীর কবলে যাওয়ার পর জমি নিয়ে এলাকাবাসীকে দ্বন্দ্ব ফাসাদের মত বিশৃংখলায় জড়াতে বাধ্য করা হয়েছে। এমনি পরিনতির মধ্যে থাকা মানুষ যখন নিজেদেরকে গুছিয়ে নিতে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছিল। তখন এক বছর আগে ২০২০ সালের ২০ মে ভয়ঙ্কর সাইক্লোব আম্ফান আশাশুনিতে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে।
দীর্ঘ ৯ মাসেও ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ নির্মান করা সম্ভব হয়নি। রিং বাধ নির্মান করে অনেককে ভাঙ্গনের মধ্যে রেখে দিয়ে বৃহত্তর জনগোষ্ঠিতে ঠেকানো হয়। কিন্তু গত ৩০ মার্চ আবারও প্লাবনের শিকার হয় গোটা এলাকা। দীর্ঘ ৯ মাসে অনেকে ঘরবাড়ি গুছিয়ে নিয়ে, নতুন করে চাষাবাদ, মৎস্য চাষে সর্বস্ব বিনিয়োগ কিংবা ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেন। কিন্তু বিধি বাম, তাদের সবকিছু আবারও নদীর জলে ভেসে গেল।
ঘরবাড়ি ও অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতির সাথে সদর ইউনিয়নের ৩৬০ হেক্টর জমির ৩১৫টি মৎস্য ঘের ভেসে গেছে। ফলে ইউনিয়নের মানুষের গায়ে সাদা কাপড়, গতানুগতিক চাল চলন দেখা গেলেও ভিতরে ভিতরে ঋণের জালে দেউলিয়া হতে বসেছে বললেও ভুল হবেনা।
সদর ইউপি চেয়ারম্যান স ম সেলিম রেজা মিলন জানান, গত ২৯ মার্চ যকন দেখলাম বাঁেধর অবস্থা শোচনীয় তখন রাতে নিজস্ব অর্থে রিং বাঁধ রক্ষায় কাজ করাই। পরদিন সকালে পুনরায় কাজ কারই। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। দুপুরে রিং বাধ ভেঙ্গে এলাকা একাকার হয়েযায়। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা চেয়ারম্যানের পরামর্শ নিয়ে ৩১ মার্চ ২৭৬ শ্রমিক কাজে লাগিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করি।
প্রত্যেককে ৭কেজি করে চাউল দেওয়ার ঘোষণা দেই। ১ এপ্রিল ৩০০ টাকা মজুরির ঘোষণা দিয়ে ৩৮৭ জন শ্রমিক কাজে লাগিয়ে বাঁধ রক্ষায় সফল হই। রাতে ৫০ জন শ্রমিক কাজে রেখে দেই। পরদিন আরও ১৭৫ শ্রমিক ৩০০ টাকা মজুরির বিনিময়ে কাজ করাই। আল্লাহর রহমতে বাধ টিকে যায়। এরপর পাউবো মূল বাধে ঠিকাদার ক্লোজারে কাজ শুরু করে। মঙ্গলবার ক্লোজার চাপান সম্পন্ন হয়।
বাধের কাজ এগিয়ে চলছে। বাধ রক্ষা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দুর্দশা নিয়ে আমরা চিন্তিত হয়ে পড়েছি। ইতিমধ্যে প্লাবনের শিকার ৩৫০ পরিবারকে ৭ কেজি করে চাউল দেওয়া হয়েছে। সুপেয় পানি নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু আম্পানের ক্ষতি কাটিয়ে উঠার চেষ্ঠায় আঘাত করে পুনরায় বিপর্যস্ত করে ফেলানো মানুষদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনো কোন কার্যক্রম দেখা যায়নি।
তাদেরকে পুনর্বাসন ব্যবস্থা করা, আর্থিক সহযোগিতা করার প্রয়োজনীয় অনস্বীকার্য। মাছের ঘেরে ৩ কিস্তিতে মাছ ছাড়া হয়েছিল। এখন মাছে ধরে বিক্রয় করার সময় এসেছিল, কিন্তু আম্ফানের ন্যায় এবারও তারা সমুলে ধ্বংস হয়েছে। না আছে আয়ের সুযোগ, না আছে বসবাসের সুষ্ঠু পরিবেশ, না আছে স্যানিটেশনের সুব্যবস্থা, না আছে ঋণের টাকা পরিশোধের উপায়।
আমি এসব দুরাবস্থার কথা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করেছি। সাথে সাথে টেকসই বেড়ী বাঁধ নির্মানের ব্যবস্থা করা, ভেঙ্গে যাওয়া সড়ক নির্মান, গ্রামের মধ্যের ছোট রাস্তার সংস্কার করার দাবীও জানিয়েছি। এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা- এনজিও গুলোকে এগিয়ে আসার জন্য আমি অনুরোধ জানাচ্ছি।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।