ইউক্যালিপটাসের মতো বেশ কিছু বিদেশি প্রজাতির গাছ এখন গবেষক ও উদ্ভিদবিদদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়েছে। তাদের মতে, এসব গাছ দেশের পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্যের অপরিসীম ক্ষতি করছে। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও গবেষক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন জানিয়েছেন, দেশের মানুষই কিছু বিদেশি বৃক্ষ এনেছে, আবার কিছু উদ্ভিদ নিজেই দেশের ইকোসিস্টেম বা বাস্তুসংস্থানের মধ্যে প্রবেশ করেছে। আর এসব বিদেশি গাছ ও গুল্মের ক্রমাগত বর্ধনের জন্য গত কয়েক দশকে দেশের প্রকৃতি থেকে ধীরে ধীরে অন্তত এক হাজার প্রজাতির নিজস্ব গাছ হারিয়েছে।
ঢাবির এ শিক্ষক আরও বলেন, গাছপালা, পশুপাখি, প্রকৃতি সব মিলিয়ে দেশের অকৃত্রিম যে ইকোসিস্টেম ছিল, সেই মিশ্রণ ভেঙে গেছে কেবল বিদেশ থেকে আনা ও আসা বনজ বৃক্ষসহ বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদের চাপে। অর্থাৎ, বিভিন্ন সময়ে যেসব বৃক্ষ আনা হয়েছিল তা এখন আমাদের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রধানত, রেইনট্রি, সেগুন, আকাশমণি, আকাশিয়া, বাবলা, ইউক্যালিপ্টাস ও শিশুজাতীয় গাছগুলোর জন্য অনেক বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় এবং এসব গাছ দেশি গাছের থেকে তুলনামূলকভাবে মাটি থেকে দ্রুততার সঙ্গে পুষ্টি শুষে নেয়। এছাড়া এসব গাছ প্রচুর পরিমাণে পানি শোষণ করে।
আগ্রাসী বিদেশি গাছ : ঢাবির শিক্ষক বলেন, ব্রিটিশ আমলে এ অঞ্চলে রেইনট্রি, মেহগনি, চাম্বুলসহ কিছু গাছ আনা হয়। আবার আশির দশকে আকাশমণি, ইউক্যালিপটাস, শিশু, ইপিলইপিল, বাবলা ও খয়ের জাতির কিছু গাছ আনা হয়। এর মধ্যেই আবার অনুমতি ছাড়াই দেশে প্রবেশ করে রিফুজিলতা, স্বর্ণলতা, মটমটিয়া, পিসাইস, পার্থেনিয়াম, কচুরিপানাসহ কিছু লতা ও গুল্ম। এসব ধরনের উদ্ভিদ মিলে গত কয়েক দশকে দেশের নিজস্ব বাস্তুতন্ত্রকে বিপর্যস্ত করেছে।
তিনি বলেন, এক সময় আসবাবপত্র তৈরি ও জ্বালানি কাঠের যোগান দিতে গিয়ে সংকটে পড়ছিলো দেশের বনাঞ্চল। সেই সময় বনকে রক্ষা করার জন্য দ্রুত বর্ধনশীল বিদেশি প্রজাতির গাছ উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো। এসব গাছ বনভূমি, সড়কের পাশে, এমনকি মানুষের ঘরবাড়ির আশপাশের জায়গা-জমিতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো। এতে দেশের বনভূমির ওপর চাপ কমলেও কয়েক দশক পর বোঝা যাচ্ছে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে।
কিভাবে ক্ষতি করে :
ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনের ভাষ্যমতে, বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বিদেশি প্রজাতির গাছগুলো দ্রুত বর্ধনশীল, অন্যদের থেকে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। সে অন্য কোনো উদ্ভিদকে আশ্রয় দেয় না। আবার তার পানি বা সার বেশি প্রয়োজন হয় এবং বংশবৃদ্ধির প্রবণতাও বেশি।
দেশীয় গাছপালাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন লতাগুল্ম জন্ম নেয় ও বেড়ে ওঠে। এসব গাছপালার ওপর নির্ভর করে আবার বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও কীট-পতঙ্গের বসবাস ছিলো। বিদেশি প্রজাতির গাছগুলো তাদের সহযোগী উদ্ভিদ হিসেবে আমাদের দেশীয় গাছকে গ্রহণ করেনি। এতে লতাগুল্মসহ বিভিন্ন ধরনের গাছ টিকে থাকতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, এক সময় প্রায় পাঁচ হাজার প্রজাতির বৃক্ষ ছিলো, কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণার পর ৩ হাজার ৮৩২টি পর্যন্ত রেকর্ড করা গেছে। অর্থাৎ, হাজারখানেক প্রজাতির বৃক্ষ আর দেখা যায় না।
উত্তরণের উপায় :
* দেশীয় নিজস্ব গাছপালা নার্সারিতে নিয়ে আসা।
* নার্সারি থেকে বিদেশি গাছ সরানো।
* দেশীয় ফলমূল ও বনজ বৃক্ষের মাদার ট্রি থেকে বীজ আনা।
* বিদেশে থেকে অনুমতি ছাড়া গাছ আনা বন্ধ করা।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।