সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের প্রতিবাদে কাউখালীতে গণঅনশন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শনিবার ২৩শে অক্টোবর ২০২১ ০৭:৪১ অপরাহ্ন
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের প্রতিবাদে কাউখালীতে গণঅনশন

শারদীয় দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া, বিভিন্ন জেলায় হিন্দু ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রতিমা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, নারী নির্যাতন- ধর্ষণ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, নোয়াখালী ইসকন মন্দিরের সেবায়েতকে নির্মমভাবে হত্যা, চাঁদপুরে মন্দিরে পূজারী হত্যা, লুটপাট ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের প্রতিবাদে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ পিরোজপুরের  কাউখালী উপজেলা শাখার যৌথ উদ্যোগে আজ শনিবার বিকেলে কাউখালী মদনমোহন জিউর আখড়াবাড়ীতে  গণ অনশন, অবস্থান ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় ।


উক্ত  কর্মসূচীতে ঐক্য পরিষদ ও পূজা পরিষদের সকল ইউনিট ও অঙ্গ সংগঠনের সদস্যবৃন্দ এবং সকল মঠ, মন্দির ও পূজা কমিটির সদস্যবৃন্দ সহ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক অংশ নেয় ।


সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, পিরোজপুর জেলা ও কাউখালী উপজেলা শাখার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কাউখালী উপজেলা শাখার সভাপতি সুনন্দা সমাদ্দার ।  


অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন  বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কাউখালী উপজেলা শাখার  সাধারণ সম্পাদক জ্যোতির্ময় চক্রবর্তী রতন, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত রায়, পূজা পরিষদের সাবেক সভাপতি সঞ্জিত কুমার সাহা, সাংগঠনিক সম্পাদক লিটন কৃষ্ণ কর, কাউখালী প্রেসক্লাবের সভাপতি রতন কুমার দাস, পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি কিরণ চন্দ্র হালদার, ইন্দ্রজিৎ পাল, প্রদীপ কিশোর হালদার, মতুয়া আশ্রমের সাধারণ সম্পাদক সুশীল চন্দ্র হাওলাদার, মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাহিদা হক, মাইনরিটি রাইটসের ফোরামের সভাপতি মহেন্দ্র নাথ বেপারী, উপজেলা যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি সুজন আইচ প্রমুখ ।


এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা ভাংচুরের তীব্র প্রতিবাদ সহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানানো হয় । শারদীয় দুর্গাপূজায় ‘সাম্প্রদায়িক অপশক্তির নারকীয় তাণ্ডব’ ও ‘বিরাজমান পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাহীনতা’র কারণে শ্যামাপূজায় দিপাবলী উৎসব বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ।দেশের বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় কয়েকটি বিষয় তুলে ধরে পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে নেতৃবৃন্দ ।



আগামী ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় শ্যামাপূজায় দীপাবলির উৎসব বর্জন করলেও পূজা যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে । শ্যামা পূজায় একাধিক দিনের অনুষ্ঠান পরিহার করা হবে। পাশাপাশি সেদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১৫ মিনিট কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে দর্শনার্থী ও ভক্তরা স্ব স্ব মন্দিরে নীরবতা পালন করবে।


প্রতিবাদ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্থ সব মন্দির বাড়িঘর সরকারি খরচে পুনঃর্নির্মাণ করে দিতে হবে। গৃহহীনদের দ্রুত পুনর্বাসন করতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।


 নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।  নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে প্রকৃত দোষীদের বিচারের পদক্ষেপ নিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে। 


সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটনের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, তদন্ত কমিশনের প্রকাশিত রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।


‘হিন্দু ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে যে আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে তা প্রতিবিধানে সরকারের স্পষ্ট বক্তব্য ও পূর্ণাঙ্গ শ্বেতপত্র প্রকাশের’ দাবিও করেন নেতৃবৃন্দ।


নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে যত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তার একটিরও ‘সুষ্ঠু বিচার’ হয়েছে বলে তাদের জানা নেই। বিচারহীনতা বা বিচার না হওয়ার সংস্কৃতি দুষ্কৃতকারীদের ‘উৎসাহিত করছে’ এবং প্রায়ই তারা সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে ।


কোনো ঘটনা ঘটার পর দেশের রাজনৈতিকদের দলগুলোর পাল্টাপাল্টি ‘দোষারোপের সংস্কৃতি পরিস্থিতি আরও নাজুক করে তুলছে ।


শারদীয় দুর্গাপূজায়   “কুমিল্লা নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা ও হামলা পরবর্তী সময়ে স্থানীয় প্রশাসন সময়োযোগী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।”


২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা নিয়ে পরে আওয়ামী লীগের সময়ে তদন্ত কমিশন গঠনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, “সেই রিপোর্টের আলোকে একজনেরও বিচার হয়েছে কি না, তা দৃশ্যমান নয়।”


সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকার হয়ে গত ৫০ বছরে ‘উল্লেখযোগ্য সংখ্যক’ হিন্দু দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছেন মন্তব্য করে নেতৃবৃন্দ বলেন, “যারা এখনও দেশকে ভালোবেসে মাতৃভূমিতে থাকতে চাইছেন বা আছেন, তারাও পর্যায়ক্রমে সহিংসতার শিকার হয়ে যে আস্থার সঙ্কটে পড়েছেন, তাতে ভবিষ্যৎ বলে দেবে তারা কতদিন দেশে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারেন।“