‘সিরিয়াল কিলার’ বাউলের ছদ্মবেশ ধারণ করেন ঘুরছিলেন সেলিম!

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ১৩ই জানুয়ারী ২০২২ ০৩:২৫ অপরাহ্ন
‘সিরিয়াল কিলার’ বাউলের ছদ্মবেশ ধারণ করেন ঘুরছিলেন সেলিম!

নিজ এলাকা বগুড়ায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রায়ই বিভিন্ন সংঘাতে জড়াতেন হেলাল হোসেন (৪৫)। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত অন্তত তিনটি হত্যা মামলায় জড়িত এই হেলাল সময়ের বিবর্তনে পরিচিত হয়ে ওঠেন সেলিম ফকির ওরফে ‘বাউল সেলিম’ হিসেবে।এমনকি জনপ্রিয় ‘ভাঙা তরী ছেঁড়া পাল’ গানের বাউল মডেল হিসেবেও অভিনয় করেন তিনি।এলাকায় ‘খুনি হেলাল’ হিসেবে পরিচিত তিনি নিজেকে আড়াল করতে বাউলের ছদ্মবেশ ধারণ করেন। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মাজার ও রেলস্টেশনকেন্দ্রিক তার চলাফেরা ছিল। মোটামুটি গান গাইতে পারায় তিনি বাউল বেশ ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে থাকেন।


আনুমানিক ৬ মাস আগে জনৈক ব্যক্তি ইউটিউবে প্রচারিত ‘ভাঙা তরী ছেঁড়া পাল’ গানের ভিডিও র‍্যাবকে পাঠিয়ে ওই বাউল মডেলের বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। এই তথ্যের সূত্রে র‍্যাব বাউলের বিষয়ে গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার (১২ জানুয়ারি) রাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলস্টেশন এলাকা থেকে হেলাল হোসেন ওরফে খুনি হেলাল ওরফে সেলিম ফকির ওরফে বাউল সেলিমকে গ্রেফতার করে র‍্যাব-৩।বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।


প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, হেলাল ২০০১ সালের বগুড়ার চাঞ্চল্যকর বিদ্যুৎ হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ফেরারি আসামি। এর বাইরে ১৯৯৭ সালে বগুড়ার বিষ্ণু হত্যা মামলা এবং ২০০৬ সালে রবিউল হত্যা মামলার আসামি বলেও তিনি প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে একটি নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা এবং একটি চুরির মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন। কিন্তু তিনি যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন, তাকে স্থানীয় থানায় হস্তান্তর করে খোঁজ-খবর নিলে হয়তো আরও মামলার বিষয়ে জানা যাবে।


র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, হেলাল এলাকায় দুর্ধর্ষ হেলাল ও খুনি হেলাল নামে পরিচিত। ২০০০ সালে এক সংঘর্ষে দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে তার বাম হাতে মারাত্মক জখম হয়ে পঙ্গু হন। এই ঘটনার পর হাত লুলা হেলাল হিসেবেও এলাকায় পরিচিতি লাভ করেন।হেলাল ২০১০ সালে বগুড়া সদর থানায় দায়েরকৃত একটি চুরির মামলায় ২০১৫ সালে গ্রেফতার হয়। একই সঙ্গে ২০০১ সালের বিদ্যুৎ হত্যা মামলার বিচারও চলমান থাকে। ২০১৫ সালেই চুরির মামলায় সে জামিনে মুক্ত হয় এবং একই দিনে বিদ্যুৎ হত্যা মামলায় তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। এরপরেই তিনি এলাকা থেকে পালিয়ে গিয়ে ফেরারি জীবনযাপন শুরু করেন।


প্রথমে তিনি বগুড়া থেকে ট্রেনে করে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে আসেন। পরে কমলাপুর থেকে ট্রেনে তিনি চট্টগ্রামে চলে যান এবং সেখানকার আমানত শাহ মাজারে ছদ্মবেশ ধারণ করে বেশ কিছুদিন অবস্থান করেন। সেখান থেকে ট্রেনে সিলেটের শাহজালাল মাজারে চলে যান। সিলেটে গিয়ে ছদ্মবেশ ধারণ করে আরও কিছুদিন অবস্থান করেন।


তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন রেলস্টেশন ও মাজারে ছদ্মবেশে অবস্থান করতে থাকেন। ভৈরব রেলস্টেশনে নাম-ঠিকানা ও পরিচয় গোপন রেখে সেলিম ফকির নাম ধারণ করেন। প্রায় ৪ বছর ধরে ভৈরব রেলস্টেশনের পাশে এক নারীর সঙ্গে সংসার করে আসছিলেন।


কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, হেলালের হাত পঙ্গু থাকায় ও মোটামুটি গান গাইতে পারায় জীবনধারণের জন্য বাউল পরিচয় বেছে নেন। প্রায় ৫ বছর আগে নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনে কিশোর পলাশের ওই গানের শুটিং চলাকালে হেলাল রেললাইনের পাশে বাউল গান গাচ্ছিলেন। তখন এক ব্যক্তি তাকে গানের মিউজিক ভিডিওতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিলে তিনি রাজি হন। যার ফলে বহুল জনপ্রিয় ‘ভাঙা তরী ছেঁড়া পাল’ শিরোনামের গানের বাউল মডেল হিসেবে তাকে দেখা যায়।