রমজানে অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার; স্বল্পআয়ের মানুষের চাপা কান্না!

নিজস্ব প্রতিবেদক
শফিউল আলম রাজীব, জেলা প্রতিনিধি কুমিল্লা
প্রকাশিত: শনিবার ২৫শে মার্চ ২০২৩ ১০:৫২ অপরাহ্ন
রমজানে অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার; স্বল্পআয়ের মানুষের চাপা কান্না!

মাহে রমজানকে পুঁজি করে একশ্রেণীর ব্যবসায়ীরা চাল, ডাল, তেল, চিনি, ছোলা, পেয়াজ, বেগুন, মাছ, মাংস'সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা হারিয়ে দিয়ে থাকে। রমজানের দ্বিতীয় দিন শনিবার দেবীদ্বার নিউমার্কেটের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগীর দোকানগুলোতে ঘুরে এবং বাজার করতে আসা ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।


বাজার ঘুরে কথা হয় পেশায় অটো চালক এক ক্রেতা আমিনুল ইসলামের সাথে, তিনি বলেন 'মাংস' খাইনা দুই-তিন মাস যাবৎ। ভাড়ায় অটো চালাই, জমা দিয়া যা থাহে তা দিয়া চাল কিনলে তরকারি কেনার টাকা থাহে না। তরকারি কিনলে প্রয়োজন মতো চাল কিনতে পারি না। জিনিসপত্রের এতোদাম মনেহয় না খাইয়া মরতে হইবো।


আরেক ক্রেতা জানান, রমজান মাস ভালো কিছু খাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও অর্থ না থাকায় সম্ভব হয়না, দরকষাকষি করে ৩ শত টাকায় পাঁচমিশালি এক কেজি মাছ কিনেছি। একটি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করি মাসে ১৪ হাজার টাকা বেতন পাই সেই টাকায় ঘরভাড়া, ২ মেয়ের লেখাপড়ার খরচ দেয়ার পর আর তেমন কিছু হাতে থাকে না।


কথা হয় রিক্সা চালক লোকমান হোসেনের সাথে তিনি বলেন, সারাদিন যানজট ঠেলে রিকশা চালিয়ে ৪-৫শ’ টাকা ইনকাম করি, ১০০ টাকা মালিককে জমা দেই সারাদিন নিজের খাওয়া দাওয়ার পর কি আর হাতে থাকে। বাজারে মাছ-তরকারির যে দাম, পোলা মাইয়ারে পড়ার খরচ দিমু নাকি বাজার করে ভালো-মন্দ কিছু খামু তার কোনো উপায় নাই। জিনিসপত্রের যে দাম, দাম না কমলে আমরা কম খাইয়াই মইরা যামু।


মাংস-মুরগি দূরের কথা, স্বল্প আয়ের মানুষেরা আমিষের ঘাটতি পূরনে সহজলভ্য পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া মাছও এখন তাদের নাগালের বাইরে বলা যায়। অধিক মূল্যোর সবজি বাজারে ঢুকেও বিপাকে পড়েন তারা। প্রায় সকল শাক-সবজির দাম আকাশ চুম্বি। রোজার মধ্যে এভাবে নিত্যপন্যোর দামের ঊর্ধ্বমুখিতে কান্না চেপে রাখলেও মন ভার লুকাতে পারছে নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষজন।


রমজানের ২য় দিনে দেবীদ্বার নিউমার্কেট বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারগুলোতে লম্বা সিংনাথ বেগুন প্রতি কেজি ৮০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, বরবটি ৭০-৮০ টাকা, টমেটো ৩০ , ঢেড়স ৮০, আলু ২৫, কাঁচা মরিচ ১০০, পটল ৮০, ধনিয়া পাতা ১০০, শসা (হাইব্রিড) ৫০, দেশি ১২০, লতি ৭০, সিম ৮০, চিচিঙ্গা ৬০, গাজর ৫০, মিষ্টিকোমরা ৪০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।


এছাড়াও পুঁইশাকের আঁটি প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়। লাউ সাইজ অনুসারে ৫০-১০০ টাকা পর্যন্ত, রমজানে শরবত তৈরির অন্যতম প্রধান উপাদান লেবুর দাম হুট করে বেড়ে হালি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪০-১০০ টাকায়। তবে বিক্রেতারা জানায় পাইকারি বাজার নিমসার থেকে বেশি দামে কিনতে হয় এবং এখান পর্যন্ত আনতে তাদের গাড়িভাড়া সহ খরচ একটু বেশি পরে, তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। তাছাড়া স্বল্প আয়ের মানুষগুলোর মাছ মাংসের বাজারের দিকে তাকানো যেনো পাপ, যা পুরোপুরি ক্রয় ক্ষমতার বাইরে বলাই যায়।


বাজারে নিত্যপণ্যের উর্ধ্বগতি নিয়ে দেবীদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা বলেন, ইতিমধ্যে আমরা বাজার কমিটির সাথে মতবিনিময় করেছি, বাজার পরিদর্শন করা হয়েছে এবং ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।