বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে কাঁকড়া চাষ এখন কৃষকদের জন্য নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনা হিসেবে আলো ছড়াচ্ছে। দীর্ঘদিন চিংড়ি চাষের জন্য পরিচিত এই অঞ্চলে চিংড়ির রোগবালাই, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও দামের ওঠানামার কারণে অনেক কৃষক হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। সেই পরিস্থিতিতে তুলনামূলক সহজ, খরচ কম ও লাভজনক হওয়ায় তারা ঝুঁকেছেন কাঁকড়া চাষে।
একসময় নদী-খাল থেকে সংগ্রহ করা কাঁকড়াই বাজারে আসত। কিন্তু চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন বাণিজ্যিকভাবে কাঁকড়ার খামার গড়ে উঠেছে। কৃষকরা তাদের ফাঁকা চিংড়ির ঘের বা বাড়ির পাশে ছোট জলাশয় ব্যবহার করে চাষ শুরু করছেন। মাত্র কয়েক মাসে কাঁকড়া বাজারজাতের উপযোগী হয়ে উঠছে। এতে কৃষকরা ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাচ্ছেন।
দক্ষিণাঞ্চলের চীনে, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে জীবিত কাঁকড়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে এক মণ কাঁকড়া ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছেন, সঙ্গে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও অবদান রাখছে নতুন এই খাত।
শ্যামনগর, আশাশুনি, দেবহাটা ও তালা উপজেলার খাল-বিল, নদী ও লোনা পানির ঘেরগুলোতে ব্যাপকভাবে কাঁকড়া চাষ হচ্ছে। চিংড়ি চাষে লোকসান হওয়ায় কৃষকরা বিকল্প হিসেবে কাঁকড়া চাষে ঝুঁকেছেন।
এক একর ঘেরে কাঁকড়া চাষে খরচ হয় গড়ে ৫০-৬০ হাজার টাকা। মাত্র চার থেকে ছয় মাসে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা আয়ের সম্ভাবনা থাকে। ফলে এক মৌসুমেই লাখ টাকার ওপরে লাভ হয়। এই চাষে কৃষকরা শুধু আয় করছেন না, হাজারো মানুষের জন্য কর্মসংস্থানেরও সুযোগ তৈরি হয়েছে।
কাঁচামাল সরবরাহ, আহরণ, পরিবহন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রপ্তানি—প্রতিটি ধাপে স্থানীয় নারী-পুরুষ যুক্ত হচ্ছেন। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের গ্রামীণ অর্থনীতি নতুন গতি পাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যথাযথ প্রশিক্ষণ, মানসম্মত খাদ্য, রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ এবং সরকারি সহায়তা পেলে কাঁকড়া চাষ বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানিমুখী খাত হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। তবে পরিবেশগত ভারসাম্য ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য।
কাঁকড়া চাষ এখন শুধু জীবিকা নয়, এটি কৃষক ও কর্মজীবী মানুষের জন্য আশার আলো হয়ে উঠেছে। সঠিক পরিকল্পনা ও সহায়তা পেলে এ খাত দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।