প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৮
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি হামলায় ৩৮ জন নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে দুই জন ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। একই সময় আরও ২০০ জন আহত হয়েছেন, যার ফলে চলতি বছরের শুরু থেকে আহতের সংখ্যা ১ লাখ ৬৪ হাজার ৫৯ জনে পৌঁছেছে।
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ধ্বংসস্তূপ ও রাস্তায় এখনো বহু মানুষ ফেলে আছে এবং উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। হামলার ফলে আহত ও নিহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে চাপ বেড়েছে। ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা প্রদান করার সময়ও ইসরাইলি হামলার ফলে ১৪ জন নিহত এবং ১৪৩ জন আহত হয়েছেন। চলতি বছরের ২৭ মে থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে মারা যাওয়া ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৭৯ এবং আহতের সংখ্যা ১৮ হাজার ৯১।
এছাড়াও গত ২৪ ঘণ্টায় আরও দুই ফিলিস্তিনি অপুষ্টি ও অনাহারে মারা গেছেন। এদের মধ্যে একজন শিশু। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ক্ষুধা ও অনাহারে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪১৩ জনে পৌঁছেছে, যার মধ্যে ১৪৩ জন শিশু। জাতিসংঘ সমর্থিত ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) গাজাকে ‘দুর্ভিক্ষ অঞ্চল’ হিসেবে ঘোষণা করার পর ১৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ২৮ শিশু রয়েছে।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২ মার্চ থেকে ইসরাইল গাজার সব সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়ায় ২৪ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষে পড়েছে। সীমান্ত বন্ধ থাকার কারণে খাবার, ওষুধ ও অন্যান্য মানবিক সামগ্রী সরবরাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতি মানবিক সংকট আরও বাড়িয়েছে।
গাজার নতুন ইসরাইলি হামলার পর অন্তত ১২ হাজার ২০৬ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৫২ হাজার ১৮ জন আহত হয়েছেন। এতে পূর্বে জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তি ভেঙে গেছে। এ হামলার ফলে গাজার নাগরিকদের নিরাপত্তা ও জীবন বিপন্ন হয়েছে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়েও গাজার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।
এছাড়া আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা চলছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ফিলিস্তিনের মানুষের জন্য তাত্ক্ষণিক সহায়তা ও অবরোধ শিথিল করার আহ্বান জানাচ্ছে। পরিস্থিতি ক্রমেই সঙ্কটজনক হয়ে উঠছে এবং ভবিষ্যতে আরও মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।