নওগাঁয় শ্রমিক সংকট! অন্যদিকে বৈরি আবহাওয়া: শঙ্কিত কৃষক

নিজস্ব প্রতিবেদক
রিফাত হোসাইন সবুজ, জেলা প্রতিনিধি, নওগাঁ
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ১২ই মে ২০২২ ০৯:৩৬ অপরাহ্ন
নওগাঁয় শ্রমিক সংকট! অন্যদিকে বৈরি আবহাওয়া: শঙ্কিত কৃষক

গত দুই বছর থেকে চাষীরা ধানের ভাল দাম পেয়েছে। এবছর অনেক আগ্রহ নিয়ে ইরি-বোরো ধানের আবাদ করেছেন চাষীরা। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় নওগাঁর মাঠে মাঠে ধানের আবাদ ভাল হয়েছে। ফসল দেখে চাষীরা উৎফুল্ল ছিলো কিছুদিনের মধ্যে মাঠের সোনালি ধান গোলায় উঠবে। গত ১৯ এপ্রিল রাতের কালবৈশাখী তান্ডবে কৃষকদের সোনালী স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। এর পর গত দুই দিন যাবৎ থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে কৃষকদের সোনালী ধানে শনি হয়ে হানা দিয়েছে। জেলার অধিকাংশ মাঠের আধাপাকা ধান জমিতে শুয়ে পড়েছে। 


অন্যদিকে শ্রমিক সংকটে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায়রও আশংকা করছেন কৃষকরা। নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর তথ্যমতে এবার নওগাঁ জেলায় বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৮৫ হাজার ৮০০ হেক্টর। কয়েকদিন আগের কালবৈশাখী তান্ডবের পর থেকে কয়েক দফা ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। আধাপাকা ধান মাটিতে শুয়ে পড়েছে। ধান না পাকায় কাটা-মাড়াই করাও সম্ভব হচ্ছিল না। 


অনেক জমিতে পানি জমে থাকায় ধান ডুবে রয়েছে। কাটতে দেরি হওয়ায় ধান থেকে চারা গজিয়েছে। এদিকে শ্রমিক সংকট হওয়ায় ধান কাটা-মাড়াইয়ে বিলম্ব হচ্ছে। বাড়তি মজুরি দিয়েও মিলছে না শ্রমিক। জমিতে হেলে পড়া ধান কাটতে শ্রমিকরা অনিহা প্রকাশ করছেন শ্রমিকরা।  জমিতে নুইয়ে পড়া ধানে চিটার পরিমাণও বেশি হচ্ছে। এলাকা ভেদে বিঘাপ্রতি জমির ধান কাটতে ৭-৮ মণ ধান মজুরি হিসেবে দিতে হচ্ছে। আবার বিঘা প্রতি ৫-৭ হাজার টাকায় কাটা-মাড়াই করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় আকাশে মেঘের আনাগোনা দেখলেই শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন কৃষকরা। 


নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার ভেনলা গ্রামের গ্রামের সন্তোস কুমার বলেন, আমি ৫বিঘা জমিতে কাঁটারি ভোগ জাতের ধানের আবাদ করেছি। গত মাসের ১৯তারিখের ঝড় আর গত দুই দিন থেকে বৃষ্টির কারনে ধান এখন পানির নিচে। শ্রমকিও পাচ্ছিনা যে একদিনে ধানগুলো কেটে মাড়াই করে ঘরে তুলবো। 


আত্রাই উপজেলার ভোপাড়া গ্রামের কৃষক আবু তাহের বলেন, আমি প্রায় ৮বিঘা জমিতে বিআর ২৮জাতের ধান চাষ করেছি। আর ১০-১২দিন পর ধানগুলো কাটার উপযুক্ত হবে। কিন্তু ঝড় ও বৃষ্টির কারনে বর্তমানে জমিতে ধান নইয়ে পড়েছে। অন্যদিকে বৃষ্টির কারনে পানিতে ধানের শীষগুলো। মহাবিপদে পড়ে গেছি। এভাবে বৃষ্টি আর ঝড় হলে ফলন কমে যাবে। শ্রমিকও পাওয়া যাচ্ছেনা ঠিকমত যে এখনই ধান কেটে নিব।


মান্দা উপজেলার মৈনম গ্রামের কৃষক উজ্বল কুমার বলেন, এত শ্রম দিয়ে ঘাম ঝড়িয়ে ধানের আবাদ করে যদি ধান কাটার সময় ঝড়- বৃষ্টি হয় তাহলে তো লাভের চেয়ে লোকশান ঘুনতে হবে। ৬বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছি। প্রতি বিঘায় হাল চাষ খরচ ১২০০ হাজার টাকা, সেচ খরচ ১৫০০ টাকা, চারা রোপন খরচ ১০০০ টাকা এবং আগাছা দমন ৮০০ টাকা। কীটনাশক ও সার খরচ প্রায় ৫ হাজার টাকা। এছাড়া ধান কাটা-মাড়াই খরচ ৬-৭ হাজার টাকা। সবমিলে ১৬থেকে ১৭হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি ইতিমধ্যে ২বিঘা জমির ধান কেটেছি প্রতি বিঘাত ফলন হয়েছে ১৬মনের মত। বর্তমানে প্রতি মন ধানের দাম ৮০০-৯০০টাকার মত। সে হিসেবে বিঘা প্রতি ৫-৬হাজার টাকা লোকশান গুনতে হচ্ছে। ঝড় ও বৃষ্টির কারনে ফলন কম অন্যদিকে উৎপাদন খরচ বেশি। সবমিলে লাভ হবেনা। 


বিষয়টি নিয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ শামছুল ওয়াদুদ বলেন, জেলার মাঠের ৮০ শতাংশ ধান পেকে গেছে। ইতোমধ্যে ৪০ শতাংশ ধান কাটা ও মাড়াই হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে সব ধান কাটা শেষ হবে বলে আশা করছি। জেলায় শ্রমিক সংকট এর বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, শ্রমিক সংকটে কৃষকদের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে এটা সত্য। আবার বাড়তি মজুরিও গুনতে হচ্ছে কর্তন এর জন্য কৃষকদের। তবে ঝড়-বৃষ্টি না হলে কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই মাঠের ধান কাটা হয়ে যাবে বলে মনে করছি। বর্তমানে প্রাকৃতিক দূর্যোগ শুরু হয়েছে। ধান কাটা মাড়াই শেষ না হলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার বিষয়টি যাচ্ছেনা সঠিকভাবে।