বৃষ্টির পানিতে তলিয়েছে ধান, হিলিতে বাড়ছে কৃষকের দুশ্চিন্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক
গোলাম রব্বানী, উপজেলা প্রতিনিধি হিলি (দিনাজপুর)
প্রকাশিত: সোমবার ১৬ই মে ২০২২ ০৭:০৬ অপরাহ্ন
বৃষ্টির পানিতে তলিয়েছে ধান, হিলিতে বাড়ছে কৃষকের দুশ্চিন্তা

দিনাজপুরের হাকিমপুর(হিলি) উপজেলায় বৈশাখ মাসের শেষে গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার এর কাল বৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টিতে অনেক ফসলী জমির ধান পানিতে ডুবে (তলিয়ে) গেছে। কয়েক দিন পানিতে ডুবে থাকায় জমিতেই গাছ গজিয়েছে। সেই সাথে অনেক জমির ধান বাতাসে এলোমেলো ও মাটিতে হেলে পড়েছে। ফলে কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে। এতে যেমন কাটতে সমস্যা হচ্ছে, তেমনই ধানের ফলন অর্ধেক পাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। অপর দিকে বেশি দামেও শ্রমিক না পাওয়ায় বোরো ধান কাটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে কৃষকরা। 


সোমবার (১৬ মে) উপজেলার আলিহাট ইউনিয়নে সরেজমিনে দেখা গেছে, গত দুই (বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার) দিনের কাল বৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টিতে জমির ধান পানিতে ডুবে (তলিয়ে) গেছে। কয়েক দিন ধরে ধান পানিতে ডুবে থাকায় জমিতেই গাছ গজিয়েছে। বৈশাখী ঝড় ও বাতাসে জমির ধান এলোমেলো ও মাটিতে হেলে পড়েছে অনেক জমির। 


উপজেলার আলিহাট ইউনিয়ন এর ইটাই গ্রামের কৃষক শাহাদাৎ হোসেন এর সাথে কথা হলে দেখা যায় তার কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। তিনি বলেন, আমি দুই একর (৬ বিঘা) জমিতে এবার কাটারি ধান চাষ করেছি। কিন্তু সব ধান পানিতে ডুবে গেছে। তিন চার দিন ধরে ধান পানিতে ডুবে থাকায় জমিতেই গাছ গজিয়েছে। আজ ধান কাটতে গিয়ে ফিরে আসলাম। কারণ ধান কাটার কোন অবস্থায় নাই। আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। আমি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এর মাধ্যমে উপজেলা কৃষি অফিসকে অবগত করেছি। আমার সর্বনাশ হয়েছে তাই সরকারি সহযোগিতা আশা করছি। আমার জমির ধানের যে অবস্থা তাতে আবাদের খরচ তো দুরের কথা ধান কাটার দামও মিটাতে পারবো না। 


মনশাপুর গ্রামের কৃষক আসাদ মিয়া বলেন, গত (বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার) দুই দিনের বৃষ্টিতে আমাদের অনেক জমির ধান পানিতে ডুবে গেছে। শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। বেশি দামে যেও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে, বাতাসে হেলে পড়া ও পানিতে ডোবা ধান শ্রমিকরা কাটতেও চাইছে না। এক বিঘা জমি ( ৫০ শতক) ধান কাটতে দশ থেকে এগারো হাজার টাকা লাগছে। পানিতে ডুবে থাকা কিছু ধান কাটতে পারলেও বাকি ধান পানিতে হারিয়ে যাচ্ছে। যেখানে বিঘা প্রতি ৩০-৩৫ মন ধান হওয়ার কথা সেখানে ১৫-১৮ মন ধান হবে বলে মনে হচ্ছে। 


উপজেলার কোকতাড়া গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, অনেক আগেই ধান পেকেছে, কিন্তু শ্রমিকের অভাবে কাটতে পারেনি। তার ওপর বৃষ্টিতে সমস্যা আরও প্রকট হয়ে পড়েছে। কারণ বাতাসে জমির ধান এলোমেলো হয়ে জমিতেই হেলে পড়েছে। 

তিনি আরও বলেন, আমি জিরা ধান লাগিয়েছি। এটা আরও কিছুদিন মাঠে থাকতো। কিন্তু বৃষ্টির কারণে ধানগুলো পড়ে গিয়ে আমর খুব ক্ষতি হয়ে গেছে। 


উপজেলার আলিহাট ইউনিয়নের ধান কাটা শ্রমিক আঃ হান্নান ও রফিকুল ইসলাম বলেন, কয়েকদিন আগেও ধান কাটা মজুরি কিছুটা কম ছিল, হঠাৎ বৃষ্টি হওয়ায় ধান পড়ে গিয়ে পানিতে ডুবে গেছে। এ কারণে এখন এক বিঘা জমির ধান (বড় বিঘা) কাটার মজুরি নিচ্ছি দশ থেকে এগারো হাজার টাকা।


আলিহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান বলেন, বৈশাখের শেষের দিকে গত দুই দিনের বৃষ্টিতে আমার ইউনিয়নের অনেক কৃষকের জমির ধান পানিতে ডুবে ( তলিয়ে) গেছে। যারফলে তাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যে সমস্ত কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে তাদের বিষয়ে আমি ইতিমধ্যে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি। ক্ষতিগ্রস্হ কৃষকদের সরকারি কোন সহযোগিতার ব্যাবস্হা করা যায় কি না। 


হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড.মমতাজ সুলতানা বলেন, এবারের চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় প্রায় সাত হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেআমাদের এলাকার প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ জমির ধান কাটা হয়েছে। বৃষ্টির কারণে জমিতে ডুবে থাকা পাকা ধান, যা কৃষকরা এখনো কাটতে পারেনি, সেগুলোর ক্ষতি হতে পারে। তবে তার পরিমাণ খুব বেশি নয়। তবে বিশেষ করে যেসব ধান দাঁড়িয়ে আছে, সেগুলোর সমস্যা হবে না বলে আশা করছি।