প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২১, ২৩:৪১
বিভীষিকাময় ২১ আগস্ট। নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ভয়াল দিন। ১৭ বছর আগে ২০০৪ সালের এই দিনে (২১ আগস্ট) মুহুর্মুহু গ্রেনেডের বিকট বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ। আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী মিছিলপূর্ব সমাবেশে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা এবং গুলিবর্ষণ করে ঘাতকরা। এ সময় আ.লীগের ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হন। আহত হন পাঁচ শতাধিক। ২০০৪ সাল থেকে দিনটি ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস’ হিসাবে পালন করা হয়। তবে এ বছর বরিশাল নগরীতে দিবসটি পালিত হয়নি। গত ১৮ আগস্ট বুধবার রাতে শোক দিবসের ব্যানার অপসারণ করা নিয়ে পুলিশ ও আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় দায়েরকৃত কয়েকশ’ নেতাকর্মীকে আসামী করা এবং শনিবার (২১ আগস্ট) দুপুর পর্যন্ত ২১ নেতাকর্মী গ্রেফতার হওয়ায় বেশিরভাগ নেতাকর্মী গ্রেফতার আতংকে আত্মগোপনে থাকায় দিবসটি পালিত হয়নি বলে জানা গেছে। অবশ্য এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা ও মহানগর আ’লীগ নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে বরিশালের অন্যান্য উপজেলায় দিবসটি পালিত হয়েছে। এদিকে বরিশাল নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী অবস্থান করায় শান্ত রয়েছে বরিশাল। ফলে এ মূহুর্তে বিজিবি নামানোর কোন প্রয়োজন নেই বলে শুক্রবার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদল।
জানা গেছে, বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসায় হামলার ঘটনায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের মামলার আসামি ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সাইয়েদ আহম্মেদ মান্নাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন শনিবার সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। শুক্রবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদ এলাকায় বোনের বাসা থেকে প্রশাসনের লোক পরিচয়ে সাদা পোশাকধারীরা তাকে নিয়ে যায় বলে দাবি করেন তার পরিবারের সদস্যরা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন কাউন্সিলর মান্নার বড়বোন কানিজ ফাতেমা। তবে মান্নাকে গ্রেফতারের বিষয়টি তাৎক্ষণিক জানাতে পারেননি বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম।
এদিকে একই মামলায় বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি মমিন উদ্দিন কালুকেও শুক্রবার রাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ নিয়ে হামলার ঘটনায় ২২ জনকে গ্রেপ্তার করল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বুধবার ঘটনার দিন ও পরের দিন ১৩ জনকে বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। শনিবার দুপুর পর্যন্ত অভিযানে আরও ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনার দিনই আটক করা হয় মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ বাবু, ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন ফিরোজ ও ছাত্রলীগের সহসভাপতি অলিউল্লাহ অলি, রুপাতলী শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার বাবুসহ কয়েকজনকে। এছাড়া শনিবার দুপুর পর্যন্ত যে ৮জনকে আটক করা হয়েছে তাদের নাম জানা না গেলেও আটককৃতদের মধ্যে মহানগর ছাত্রলীগ নেতা রঈজ আহম্মেদ মান্না রয়েছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর নামে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনে মানবন্ধন করেছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা বেলায়েত বাবলুর পরিচালনায় মানবন্ধনে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ ফয়সাল, পরিচ্ছন্ন বিভাগের পরিদর্শক মাসুমসহ কর্পোরেশনের কয়েকশ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। মানবন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন মেয়রের উপর হামলা করে উল্টো ইউএনও তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। এতে সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীসহ সকলে গ্রেফতার আতঙ্কে ভূগছে জানিয়ে বক্তারা অনতিবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানান। অপরদিকে গত শুক্রবার বেলা ৩টায় নগরীর সোহেল চত্বরস্থ আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বরিশাল জেলা ও মহানগর মহিলা আওয়ামীগ। সমাবেশে ইউএনও এর বাসায় হামলার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবী করেন বক্তারা।
শনিবার বিকেল ৪টায় নগরীর বরিশাল ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বরিশাল সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলার চেয়ারম্যানবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর উপর গুলি বর্ষণের তীব্র নিন্দা এবং তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ আটককৃত নেতাকর্মীদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবী জানানো হয়।
অপরদিকে বুধবার রাতের ঘটনার পর থেকে নগরীর ময়লা আবর্জনা অপসারণ বন্ধ করে দিয়েছেন সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নকর্মীরা। পাশাপাশি নগরীর সব টিকাদান কেন্দ্র থেকে চলে গেছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন করোনা টিকা গ্রহীতারা এবং নগরবাসী। সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বুধবার রাতের ঘটনার পর থেকেই পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ময়লা অপসারণ করা বন্ধ করে দেয়। তারা জানান, সাধারণত রাত ৮টার পরপরই নগরীর ময়লা আবর্জনা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করতে নামে সিটি কর্পোরেশনের কর্মীরা। তবে গত তিনদিন যাবত নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে ময়লার স্তুপ হলেও তা পরিস্কার করা হয়নি।
নগরীর সদর উপজেলা সংলগ্ন বাসিন্দারা বলেন, বুধবার রাতে সিটি কর্পোারেশনের ময়লার গাড়ি থেকে সড়কে যে ময়লা ফেলা হয়েছে তা এখনো সরানো হয়নি। উপরন্তু পাড়া মহল্লায়ও ময়লা অপসারণ না করায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিচ্ছন্ন কর্মী জানান, “বুধবার রাতের ঘটনায় কয়েকশ’ লোকের নামে মামলা হয়েছে। শুনেছি তার মধ্যে আমাদেরও নাম আছে। এজন্য গ্রেফতার আতংকে রয়েছেন তারা। তাই আত্মগোপনে রয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা নগরবাসীর সেবায় কাজ করি। আমাদের নিরাপত্তা না পেলে কিভাবে কাজ করবো?”
এ বিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক হোসেন ও প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা রবিউল ইসলামকে একাধিকবার ফোন দিয়েও তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
প্রসঙ্গত: গত বুধবার (১৮ আগস্ট) রাতে বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে শোক দিবসের ব্যানার অপসারণ করাকে কেন্দ্র করে নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনে হামলার অভিযোগ এনে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর গুলি ছোড়ে আনসার সদস্যরা। এতে সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, প্যানেল মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকনসহ ৩০ জন আহত হন। পরে সিটি করপোরেশনের কর্মী ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিক্ষুদ্ধ হলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে তিন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৫০জন আহত হয়। এ ঘটনায় পুলিশ ও ইউএনও মুনিবুর রহমান বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। সেখানে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে প্রধান আসামি করা হয়। মোট আসামি করা হয় ৬০২ জনকে।