থানা ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী হত্যা মামলার আসামি !

দীর্ঘ সাত মাস পর বিলুপ্ত ঘোষণা করা আশুলিয়া থানা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণার জন্য প্রার্থীদের জীবন বৃত্তান্ত আহবান করেছে ঢাকা জেলা কমিটি। সেই কমিটি পাওয়ার জন্য ইতিমধ্যে সভাপতি পদে জীবন বৃত্তান্তও জমা দেওয়া শুরু করেছে প্রার্থীরা। তবে জীবন বৃত্তান্তে পড়াশোনা ও রাজনৈতিক পরিচয়ের তথ্য ছাড়া আর কোনো পরিচয় দেওয়া সম্ভব নয়। জীবন বৃত্তান্তের বাইরেও যে এসব প্রার্থীর পরিচয় রয়েছে তা অজানা। 

যেমন প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার ঘটনায় চার্জশিটভুক্ত প্রধান আসামী নাদিম এবং পড়াশোনা বাদ দেওয়া বিবাহিত শাহারিয়ার আল মামুন জিতু এবার আশুলিয়া থানা ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী। দুই এক দিনের মধ্যেই তারা জীবন বৃত্তান্ত জমা দিবেন বলে জানা গেছে।

গত (১২ সেপ্টম্বর) নতুন কমিটি ঘোষনার জন্য পদ প্রার্থীদের জীবন বৃত্তান্ত আহ্বায়ন করা হয়। সেই থেকেই সাবেক ছাত্রলীগের এসব নেতারা নতুন করে পদ নেওয়ার জন্য নিজেদের প্রার্থী দাবী করছেন। ইতিমধ্যে ডজন খানেক সভাপতি প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে৷ এর মধ্যে আসামি নাদিম, বিবাহিত শাহারিয়ার আল মামুন জিতু, অপ্রাপ্ত বয়সী পাপ্পু,জিহাদ, মোবারক, মাসুদ, তানভীর, রবিন, লখিল ও রনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশুলিয়ার সুবন্দি এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে নাদিম ২০১৫ সালে থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এর পরের বছরই পুর্ব শত্রুতার জ্বেরে শাহিন নামের এক যুবককে ২০১৬ সালের ২৫ আগষ্ট গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে। ওই ঘটনায় নিহতের মা বাদী হয়ে পরের দিন মামলা (নং ১২৬) দায়ের করেন। পরে গ্রেফতার হয়ে কয়েক বছর জেলেও খাটেন এই নেতা। অবশেষ সিআইডি তদন্ত করে এই বছরের ২৫ জুলাই ছাত্রলীগ নেতা নাদিমকে সেই মামলার প্রধান আসামিসহ চিহ্নিত সন্ত্রাসী উল্লেখ করে তদন্ত প্রতিবেদনও জমা দেন । এদিকে কয়েক বছর জেল খাটার পর সম্প্রতি জামিনে বের হলেও বাদ দিয়ে দেন নিজের পড়া-লেখা । কয়েক বছর যাবৎ নেই ছাত্রত্ব । নতুন কমিটি হওয়ার খবর পেয়েই চার্জশিটভুক্ত প্রধান আসামি থানা ছাত্রলীগের সভাপতি পদ প্রার্থী ।

অন্যদিকে শিমুলিয়া ইউনিয়নের সাবেক সাধারন সম্পাদক ছিলেন জিতু। উচ্চ মাধ্যমিকের গন্ডি পার করে বিবিএ তে ভর্তি হলেও পড়া-লেখা বন্ধ করে দিয়েছেন কয়েক বছর আগে। আবার সম্প্রতি এক বছর আগে গোপনে বিয়েও করেছেন তিনি। তার শশুড় বাড়ি আশুলিয়ার নলাম এলাকায়। তবে থানা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি করার খবর পাওয়ার পর থেকে তিনিও ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী।

ছাত্রলীগের একাধিক সাবেক নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, বিবাহিত, ছাত্রত্ব নেই, কখনো ছাত্রলীগের সাথে জড়িত না ও চার্জশিটভুক্ত আসামীরা যদি ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসে তাহলে কমিটি বিতর্কের মধ্যে পড়ে যাবে। এছাড়াও গঠণতন্ত্রে স্পষ্ট করেই বলা আছে, বিবাহিত বা ছাত্রত্ব নেই এমন কেউ পদে তো দুরের কথা সদস্য হতে পারবে না । আর চার্জশিট ভুক্ত হত্যা মামলার প্রধান আসামীর সভাপতি পদে আসা সম্ভব নয় । ছাত্রলীগে ত্যাগি ও যোগ্য লোকদের নিয়ে আসার আহ্বান জানান তারা ।

এ ব্যাপারে চার্জশিটভুক্ত হত্যা মামলার প্রধান আসামি নাদিম বলেন, ছয় মাস আগে জামিনে আসছেন।  সাবেক কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। থানা ছাত্রলীগের সভাপতি পদের জন্য এখনো জীবন বৃত্তান্ত জমা দেননি। তবে জমা দিবেন।

হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, রাজনৈতিক কারনেই সেই ঘটনা ঘটেছে । তবে নতুন করে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার কথাও জানান তিনি। তবে শাহারিয়ার আল মামুন জিতুর নিজের প্রার্থীতার কথা স্বীকার করে বলেন, দুএক দিনের মধ্যেই জীবন বৃত্তান্ত জমা দিবেন। তবে পড়া-লেখা বন্ধ থাকলেও নতুন করে ভর্তি হবেন বলেও জানান ওই নেতা।

ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুল ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগের কমিটিতে যোগ্য লোকদের নিয়ে আসা হবে। এছাড়াও বিবাহিত বা ছাত্রত্ব নেই এমন কেউ এই কমিটিতে জায়গা পাবে না । আর কোন হত্যা মামলার আসামীর পদ বা সদস্য হওয়ার সুযোগও নেই বলে তিনি জানান।