প্রকাশ: ৪ আগস্ট ২০২৫, ২১:৪১
কোনো ট্যাগ পাওয়া যায়নি
বানারীপাড়ার দক্ষিণ বড় চাউলাকাঠি গ্রামের দরিদ্র কৃষক আ. মন্নান সরদারের ছেলে মোঃ তাহিদুল ইসলাম (২২) ছিলেন এক সাহসী তরুণ। তিনি বরিশাল বিএম কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং স্বপ্ন দেখতেন উচ্চ শিক্ষার মাধ্যমে দেশের উন্নতিতে অবদান রাখার। তাহিদুল ছিলেন কোটা বিরোধী আন্দোলনের সন্মুখ সারির এক অগ্রণী যোদ্ধা, যারা বৈষম্যের বিরুদ্ধে গণঅভূত্থানে অংশগ্রহণ করতেন।
গত বছরের ৪ আগস্ট রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষের সময় তাহিদুল বুলেটবিদ্ধ হন। গুরুতর অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ৬ আগস্ট বানারীপাড়ার পারিবারিক কবরস্থানে তার জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় এলাকায় এবং শিক্ষাজগতে গভীর শোক নেমে আসে।
তাহিদুলের বাবা আ. মন্নান সরদার ও মা লাভলী বেগম আজও ছেলে হারানোর বেদনায় মর্মাহত। তারা তার ছবি বুকে জড়িয়ে কান্না করেন এবং বলে, “আমাদের বুকের ধন হারিয়ে জীবনের সব সুখ চিরতরে নিঃশেষ হয়ে গেছে।” তাদের চোখে প্রতিদিন তার কবরের কাছে গিয়ে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করার অজস্র স্মৃতি জড়িয়ে আছে। তাহিদুলের বাবা বলেন, “আমার প্রাণপ্রিয় পোলাডা এখন চিরতরে অন্ধকার মাটির কবরে শায়িত।”
শহীদ তাহিদুল ইসলামের পরিবার এখনো তার স্মৃতিতে বেঁচে আছেন। তার হারানো স্বপ্ন ও আশা তাদের জীবনে একটি গভীর শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। তাহিদুলের আত্মত্যাগে যুব সমাজের মধ্যে ঐক্য ও আন্দোলনের আগুন জ্বলেছে, যা তার পরিবারের জন্য গর্বের বিষয়।
তাহিদুলের বাবা আ. মন্নান সরদার সরকারের প্রতি অনুরোধ করেছেন তার বড় ছেলে তারিকুল ইসলামের জন্য একটি সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করার। তিনি বলেন, “আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই দুর্বল, চাকরির মাধ্যমে আমার বড় ছেলের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে চাই।”
বানারীপাড়া তথা সমগ্র এলাকায় তাহিদুল ইসলামের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে। স্থানীয়রা তাকে গণঅভূত্থানের একজন সাহসী শহীদ হিসেবে স্মরণ করেন, যার জীবন তরুণ প্রজন্মের জন্য এক অসাধারণ প্রেরণা। তার আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে সমাজে বৈষম্য দূরীকরণ ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে।
তাহিদুল ইসলামের আকস্মিক মৃত্যু নিয়ে এখনও পরিবারের সদস্যরা দুঃখ এবং অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। তার স্বপ্ন পূরণে পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হচ্ছে।