প্রকাশ: ৪ আগস্ট ২০২৫, ২১:৫১
২০২৪ সালের ৪ ও ৫ আগস্ট কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী এবং পুলিশের গুলিতে দেবীদ্বারে মোট ১২ জন শহীদ হন। শহীদদের মধ্যে ছিলেন পৌর সেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক রুবেল, স্কুলছাত্র আমিনুল ইসলাম সাব্বির এবং আব্দুস সামাদ। আহত হন অর্ধশতাধিক মানুষ, যাদের মধ্যে একজন স্কুলছাত্র মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন।
আব্দুর রাজ্জাক রুবেল ৪ আগস্ট বানিয়াপাড়ায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে পড়ে থাকাকালীন কুপিয়ে মারা হন। রুবেলের স্ত্রী তখন ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। নিহত রুবেল দেবীদ্বারের বারেরা গ্রামের বাসিন্দা এবং পেশায় বাস চালক ছিলেন। তার মৃত্যুর পর তার পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে।
৫ আগস্ট থানা ঘেরাওয়ের সময় পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন সাব্বির। দীর্ঘ ৪০ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করার পর ১৪ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান। সাব্বির দেবীদ্বারের ভিংলাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ও সিএনজি চালকের ছেলে ছিলেন। একই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন আব্দুস সামাদ, যিনি সাত মাস চিকিৎসা নিয়ে ৪ মার্চ ঢাকা জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে মৃত্যুবরণ করেন। আহত স্কুলছাত্র আবুবকর মানসিক ভারসাম্য হারানোর কারণে পরিবারের সহায়তার জন্য সরকারের প্রতি আকুল আবেদন জানিয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেবীদ্বারের গণআন্দোলনের রক্তে লালিত একটি ইতিহাস। আন্দোলনের পথে আত্মত্যাগীদের সাহসিকতা ও বীরত্ব যেন সমাজের সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে জেগে ওঠার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেবীদ্বারের এই শহীদরা দেশের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, যা তরুণ প্রজন্মের জন্য এক মহৎ শিক্ষণীয়।
দেবীদ্বারে ১২ জন শহীদের মধ্যে ৯ জনের নাম ইতিমধ্যেই গেজেটভুক্ত হয়েছে, আর বাকী ৩ জনের নাম গেজেটভুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শিগগিরই তাদের নাম অন্তর্ভুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন।
এ আন্দোলনের স্মৃতিচারণে স্থানীয় জনগণ ও রাজনৈতিক মহল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছে এবং তাদের আত্মত্যাগকে স্মরণীয় করে রাখার অঙ্গীকার করছে। আন্দোলন থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা নিয়ে সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণে সব সময় সক্রিয় থাকার কথাও বারবার বলা হচ্ছে।
বৈষম্যবিরোধী এই গণআন্দোলন দেবীদ্বারের ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায় হিসেবে চিরদিন স্মরণীয় থাকবে এবং দেশের শিক্ষিত তরুণ সমাজের জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।