প্রকাশ: ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৫১
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরাল পাগলের বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট এবং কবর থেকে লাশ তুলে পোড়ানোর ঘটনা এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। সাধারণ মানুষ এখনো আতঙ্কে রয়েছে। শুক্রবারের এই ন্যক্কারজনক ঘটনার পর উপজেলার অধিকাংশ মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসার শিক্ষকরা মসজিদে উপস্থিতি না দিয়ে নিজ নিজ বাড়ি বা নিরাপদ স্থানে গিয়েছেন। বাজারের অনেক দোকানও বন্ধ রয়েছে।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত পুলিশ ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে দুইজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন যে, তারা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত। পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. সিদ্দিকুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য আশ্বস্ত করেছেন।
ঘটনার পটভূমি জানা যায়, শুক্রবার বাদ জুমা গোয়ালন্দ শহরের ফকির মহিউদ্দিন আনছার ক্লাব ময়দানে উপজেলা ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটির বিক্ষোভ সমাবেশ ডাকা হয়। সমাবেশে নুরাল পাগলের কাবাসদৃশ কবর ভেঙে ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধের দাবি জানানো হয়। প্রতিটি মসজিদের ইমাম মুসল্লিদের উদ্বুদ্ধ করে সমাবেশে যোগ দিতে সহায়তা করেন।
সমাবেশের পর একদল উশৃঙ্খল যুবক পুলিশের ওপর হামলা চালায় এবং গাড়ি ভাঙচুর করে। এর ফলশ্রুতিতে থানায় মামলা দায়ের করা হয়। ঘটনার পর স্থানীয় ইমামরা নিরাপত্তা ও গ্রেফতার আতঙ্কে মসজিদ ত্যাগ করে নিজ নিজ গ্রামে বা নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন।
দৌলতদিয়ার একটি মসজিদের মুয়াজ্জিন আজিম খাঁ জানান, ইমাম হাফেজ মো. মনিরুজ্জামান তার গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। তিনি নামাজ পড়াচ্ছেন। ইদ্রিসিয়া ইসলামিয়া জামে মসজিদের ইমাম মুফতি আব্দুল লতিফও গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। মাদ্রাসার সহকারী সুপার সাইদুর রহমান জানান, জোহরের নামাজে তিনি ইমামতি করছেন। অন্যান্য সময় একজনকে ইমাম নির্বাচিত করে নামাজ আদায় করা হচ্ছে।
গোয়ালন্দ বাজারের বড় মসজিদের ইমাম হাফেজ আবু সাইদ বলেন, শুক্রবারের ঘটনায় তার আত্মীয় অসুস্থ থাকায় তিনি তার দেখাশোনা করতে গেছেন। তিনি নুরাল পাগলের বাড়িতে ঘটানো ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ডকে ইসলাম সমর্থন করে না বলে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা শুক্রবারের পর থেকে দোকান বন্ধ রাখছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী জানান, গ্রেফতার আতঙ্কে আছেন। তিনি কোনো অপরাধ না করেও ভয় পাচ্ছেন।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ মো. রাকিবুল ইসলাম জানান, ভিডিও ফুটেজ দেখে মামলায় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং অযথা কাউকে গ্রেফতার করা হবে না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদুর রহমান বলেন, যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।