শখ থেকে পাখি পালন করে সফল ব্যবসায়ী আমেরিকা প্রবাসী জিল্লুর

নিজস্ব প্রতিবেদক
রিফাত হোসাইন সবুজ, জেলা প্রতিনিধি, নওগাঁ
প্রকাশিত: রবিবার ২৯শে জানুয়ারী ২০২৩ ০৭:১৭ অপরাহ্ন
শখ থেকে পাখি পালন করে সফল ব্যবসায়ী আমেরিকা প্রবাসী জিল্লুর

এবার মুখোমুখি বসে কি কথা হবে , কি মিথ্যার স্বপ্ন সাঁজাবে, এর চেয়ে বরং দুজনেই চুপচাপ থাকি , যেন দুটি পাখি, উড়ে যাও না কেন , এভাবে ডানা ভেঙ্গে বসে থাকা কেন? পাখির ডাক ও পাখি কারনা ভালো লাগে। কেউ পাখি দেখতে ভালোবাসেন, আবার কেউবা পাখির মিষ্টি মধুর ডাক শুনতে ভালোবাসেন।


এমনই এক পাখি প্রেমীর নাম নওগাঁ শহরের উকিলপাড়া মহল্লার আমেরিকা প্রবাসী জিল্লুর রহমান চেীধুরী। ২০০৫সালে দেশে ফিরে শখের বসে ফেব্রুয়ারী মাসের শেষের দিকে ২০ জোড়া বাজুরিকা পাখি পালন শুরু করেন নিজ বাড়ির ছাদে। বর্তমানে তার বাড়িরর ছাদে ৭ প্রজাতির ৫০ রকমের ২৫০ জোড়া দেশি- বিদেশি পাখি শোভা পাচ্ছে। এখন পাখির সফল ব্যবসায়ী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন তিনি।


জিল্লুর রহমানের বাড়িতে ছাদে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছাদের পুরো জায়গা জুরে গড়ে তুলেছেন পাখির খামার। সেই খামারে গ্রিলের সঙ্গে আলাদা আলাদা খাঁচার ঘর তৈরি করা হয়েছে। সেখানে আবার দিয়ে রাখা হয়েছে হাঁড়িও। তার মধ্যে বিদেশি হরেক রকমের রঙিন পাখি। খাঁচায় রাখা হয়েছে অষ্ট্রেলিয়ার ককাটেল, দক্ষিণ আফ্রিকা লাভ বার্ড, ইন্দোনেশিয়ার জাভা, জাপানের জেপি, হল্যান্ডের রিংনেক, অষ্ট্রলিয়ার গোল্ডেন ফিঞ্চ এবং টিয়া পাখি। এছাড়াও এসব পাখির সামনে ছোট ছোট মাটির পেয়ালায় করে রাখা হয়েছে বিভিন্ন রকমের খাবার। এসব পাখির কিচিরমিচির শব্দ রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া মানুষের নজর কাড়ে। প্রতিদিন তার খামারে পাখি দেখতে ও কিনতে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছেন লোকজন। 


স্থানীয় সারওয়ার হোসেন নামের বাসিন্দা বলেন, জিল্লুর ভাইয়ের বাড়ির ছাদে অনেক রকম পাখি আছে। সকাল বেলা পাখির ডাকে ঘুম ভাঙ্গে। অনেক ভালো লাগে পাখির কুহুতান। আবার অনেকেই আসে পাখি ও বাচ্চাগুলো কিনতে। বর্তমানে তিনি একজন সফল পাখি খামারী।


জহুরা বেগম নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, আমাদের বাড়ির ছাদ থেকে জিল্লুর ভাইয়ের ছাদে পাখি দেখি।  বর্তমানে তার খামারে ৫০০টি বিভিন্ন জাতের পাখি আছে। আমরাও ভাবছিযে এরকম যদি একটি খামার করা যায়। পাখি ও পাখির বাচ্চা বিক্রি করে বাড়তি আয় করা সম্বব। 


কথা হয় জিল্লুর রহমান চেীধুরীর সাথে। জিল্লুর বলেন, আমি একজন আমেরিকা প্রবাসী। প্রায় ৮বছর সেখানে ছিলাম। এর পর  ২০০৫ সালের জানুযায়ীর মাসের প্রথম দিকে দেশে ফিরে আসি। এর পর ওই বছরের ফেব্রুয়ারী মাসের শেষের দিকে শখের বসে ২০জোড়া পাখি পালন শুরু করি। বর্তমানে আমার খামারে ৭জাতের ২৫০ জোড়া ( ৫০০টি) প্রজাতির পাখি রয়েছে।


জিল্লুর বলেন, এসব পাখির মধ্যে লাভ বার্ড ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এছাড়াও ককাটেল ৫ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত, জেপি ( জাপানী জাতের)  ১০ হাজার টাকা জোড়া, রিংনেক ৫০ হাজার টাকা জোড়া, গ্রে প্যারট দেড় লাখ টাকা জোড়া বিক্রি করছেন। এছাড়াও বিভিন্ন পাখির দাম বিভিন্ন রকম। পাখি বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছি। প্রতিমাসে পাখি ও পাখির বাচ্চা বিক্রি করে  দেড় থেকে ২লাখ টাকা পর্যন্ত আয় হয়ে থাকে সব খরচ বাদ দিয়ে।


তিনি আরও বলেন, দেশ ও দেশের বাহিরে বিভিন্ন স্থান থেকে বাচ্চা সংগ্রহ করে লালন পালন করে সেখান থেকে আবার বাচ্চা তৈরি করা হয়। কিছু পাখি ২ থেকে ৪ বার বাচ্চা দেয়। এই বাচ্চাগুলো বিক্রি হয়ে থাকে। পাখি লালন-পালন অনেক সহজ। এদের রোগবালাইও কম হয়। রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাও অনেক বেশি। এসব পাখির খাবারগুলো সাধারণত দেশের বাইরে থেকে আসে। পাখির খাবারও গুলো দেশের বাহিরে থেকে আসে। খাবারের খরচও তুলনামূলক অনেক কম। আমরা যে পাখিগুলো পালন করছি, এসব পাখি জন্মই খাঁচায়। এ পাখিগুলো সহজেই যে কেউ, যেকোনো জায়গায় পালন করে সাবলম্বী হওয়া সম্বভ। 


জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোঃ মহির উদ্দীন বলেন, শখের বসে অনেকেই পাখি পালন করে থাকেন। এগুলো পালন করে স্বাবলম্বী হওয়ার সম্ভব। জিল্লুর রহমান চৌধুরী বর্তমানে সফল পাখি খামারী।আমরা উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করে থাকি। যারা এমন উদ্যোগ নিতে চায় তাদের আমাদের দপ্তর থেকে সহযোগিতা করা হবে।