রাবির ক্রপ সায়েন্স বিভাগে ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করানোর অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শুক্রবার ২২শে নভেম্বর ২০১৯ ০৭:৫৪ অপরাহ্ন
রাবির ক্রপ সায়েন্স বিভাগে ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করানোর অভিযোগ

শিক্ষার্থীদের ইচ্ছাকৃতভাবে করে ফেল করিয়ে দেওয়া, পছন্দের শিক্ষার্থীদের বেশি নম্বর দেওয়া, শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রশ্ন তোলাসহ নানা অভিযোগ তুলেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওই বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, শিক্ষক হিসেবে তার এহেন কর্মকান্ডের বলি হচ্ছেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।অভিযুক্ত ওই শিক্ষক হলেন- রাবির ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক মু. আলী আসগর। তবে এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে আলী আসগরের নিকট জানতে চাইলে তিনি সম্পূর্ণভাবে তা অস্বীকার করেন।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে বিভাগের সাবেক ও বর্তমান একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিভাগের বেশ কয়েকজন শিক্ষক আছেন যারা তাদের পছন্দের শিক্ষার্থীদের বেশি নাম্বার দেন এবং যাদের অপছন্দ হয় তাদের ইচ্ছাকৃতভাবে ফেলও করিয়ে দেন। তাদের মধ্যে আলী আসগর স্যার অন্যতম। বিভাগের অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী রয়েছেন যারা টপ রেজাল্ট করেও পরের ইয়ারে ফেইলের কলঙ্ক বহন করতে হয়েছে। যারা ফেইল করেছে তাদের প্রায়ই ২ থেকে ১ নাম্বারের জন্য। এবং সেটি ইচ্ছাকৃত ভাবেই করা হয়েছে। আমরা এমনটি আর দেখতে চাই না। বিভাগে ছাত্র-শিক্ষক সুসস্পর্ক বজায় থাকুক আমরা সেটাই চাই।’

ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করিয়ে দেবার অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিভাগ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে শিক্ষার্থীদের এগ্রিক্যামেস্ট্রি ও বায়োক্যামেস্ট্রি-২ মিলিয়ে একত্রে ৫০ নম্বরের ব্যবহারিক পরীক্ষা দিতে হয়। এগ্রিক্যামেস্ট্রি কোর্সটি পড়ান অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ এবং বায়োক্যামেস্ট্রি কোর্সটি অধ্যাপক আলী আসগর ও অধ্যাপক যুগোল কুমার সরকার যৌথভাবে পড়ান। নিয়ম অনুযায়ী যারা ব্যবহারিক পরীক্ষার দায়িত্বে থাকবেন মূল নম্বরপত্রে অবশ্যই তাদের স্বাক্ষর থাকতে হবে। কিন্তু পরীক্ষার দিন অধ্যাপক যুগোল কুমার উপস্থিত থাকলেও ব্যবহারিকের মূল নম্বরপত্রে তাঁর স্বাক্ষর নেই। মূল নম্বরপত্রে শুধু অধ্যাপক আলী আসগর ও অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের স্বাক্ষর রয়েছে।

এবিষয় অধ্যাপক যুগোল কুমার বলেন, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ওই কোর্সের ব্যবহারিক পরীক্ষায় তিনজন শিক্ষার্থী পাশ মার্ক থেকে দু-এক মার্ক কম পায়। ব্যবহারিকে ফেল করলে শিক্ষার্থীদের পুনরায় ওই বর্ষেই থাকতে হয়। তাই অধ্যাপক আলী আসগরকে অনুরোধ করেছিলাম বিশেষ বিবেচনায় পাশ করিয়ে দেওয়া যায় কি না। তিনি শোনেন নি। মূল নম্বরপত্র তৈরি করে তার সঙ্গে খসড়া কপি সংযুক্ত করে আমার স্বাক্ষর ছাড়াই পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে পাঠিয়ে দেন। 

তবে অধ্যাপক আলী আসগর বলেন, যখন নম্বরপত্র তৈরি করেছি তখন অধ্যাপক যুগোল কুমার অনুপস্থিত ছিলেন। আর অধ্যাপক যুগোল কুমারের হাতে দুয়েকজন শিক্ষার্থী ফেল করে। তিনি আমাকে সেসব শিক্ষার্থীকে জোর করে পাশ করিয়ে দিতে বলেন। এছাড়া মূল নম্বরপত্রে অধ্যাপক যুগোলের স্বাক্ষর রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

অধ্যাপক খাইরুল ইসলাম এ সংক্রান্ত শিক্ষার্থীদের অবৈধ পন্থায় ফেল করিয়ে দিয়েছেন উল্লেখ করে গত ৫ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে অভিযোগ দেন। 

বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমিও শুনেছি। বিভাগের একাডেমিক সভায় আমি শিক্ষকদেরকে পরস্পরের ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমি ওনাদেরকে এই ভুল বোঝাবুঝি থেকে সরে আসার জন্য অনুরোধ করেছি। আমি আবারও এ বিষয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলবো।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব