ঈদের দুইদিনে বেপরোয়া গতিতে ৩১ জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার ১২ই এপ্রিল ২০২৪ ১০:০৫ অপরাহ্ন
ঈদের দুইদিনে বেপরোয়া গতিতে ৩১ জনের মৃত্যু

ফাঁকা সড়কে বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে গত দুই দিনে মারা গেছেন ৩১ জন। এরমধ্যে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে মারা গেছেন ৬ জন। আর বিভিন্ন জেলায় মৃত্যু হয়েছে ২৫ জনের। দুর্ঘটনায় আহত হয়ে অনেকেই বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। 


বরিশালে ঈদের দিন রাতে বন্ধুদের সঙ্গে মটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছিলেন আল আরাবি। কিন্তু বেপরোয়া গতির কারণে বাইকের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুঘর্টনার শিকার হন তিনি। সেখানেই গুরতর আহত হলে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে পরে তাকে ভর্তি করা হয় ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে। 


আল ফারাবি বলেন, ‘মোটরসাইকেলে আসার সময়, সেখানে একটি মাহিন্দ্রা ছিল, সিএনজি চালিত এগুলো। ওটার সাথে ধাক্কা খেয়ে এই অবস্থা হয়েছে।’


এই পরিস্থিতিতে পড়েছেন মাদারীপুরের সালমান মোল্লা। তার পরিবারের সদস্যরা জানান, তিনি জীবনে বাইক চালিয়েছেন দুই থেকে তিন বার। অথচ ঈদে ফাঁকা রাস্তা পেয়ে অন্যের বাইক নিয়ে বের হন রাস্তায়। 


সালমানের এক আত্মীয় বলেন, ‘১০ মিনিটও চালাতে পারে নি। এরমধ্যেই গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে এই অবস্থা হয়েছে।’   


ঈদের ছুটিতে সারা দেশের রাস্তা-ঘাটই ফাঁকা। তাই যে যার মতো চালাচ্ছে মোটর সাইকেল। ফলে বেড়েছে দুঘর্টনার সংখ্যা। এরমধ্যে গত দুই দিনে রাজধানীতেই হয়েছে ১৭২ টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। এ সব দুর্ঘটনায় আহতের মধ্যে ৩৯ জন ভর্তি আছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আর পঙ্গু হাসপাতালে আছেন ৭৬ জন।


বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশান ২ নম্বরের মুল সড়কে প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে মমতা শিকদার (২৭) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়। তিনি বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন বলে জানিয়েছে তার স্বজনরা।


এই ঘটনায় আহত হন মোটরসাইকেলটির চালক জাহিদ। তিনি হাসপাতালটির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ। গুরুতর আহত জাহিদ ইউনাইটেড হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন আছেন। 


এ ঘটনার প্রায় দুই ঘণ্টা পর রাজধানীর ডেমরা কোনাপাড়ার বামৈর এলাকায় প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে চঞ্চল মিয়া (৩৫) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ভগ্নিপতি শাহ আলমও গুরুতর আহত হন। 


শাহ আলম বলেন, ‘সন্ধ্যার পর মোটরসাইকেল নিয়ে আমিও চঞ্চল ঘুরতে বেরিয়েছিলাম। কোনাপাড়ার বামৈলে মহাসড়কে দ্রুতগতির একটি প্রাইভেট কারের সাথে আমাদের মোটরসাইকেলটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে আমরা দুজনই গুরুতর আহত হই। পুলিশের সহায়তায় আমাদেরকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হলে জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক জানান চঞ্চল আর বেঁচে নেই।’ 


শুধু রাজধানী নয় রাজধানীর বাহিরের বিভিন্ন জেলাতেও মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হয়েছে। বৃহস্পতিবার পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে ঈদে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে চার তরুণের মৃত্যু হয়। এ সময় গুরুতর আহত অবস্থায় দুজনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। 


নিহতরা হলো— দন্ডপাল ইউনিয়নের লোহাগাড়া সুপারিতলা এলাকার বাছের আলীর ছেলে কাউসার আলী (১৬), একই এলাকার ইয়াকুব আলীর ছেলে সাব্বির হোসেন (১৭), দেবীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের খাঁ পাড়া এলাকার মজনু রহমানের ছেলে সাব্বির (২২) এবং একই এলাকার হজরত আলীর ছেলে বরকত (১৭)।


পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ঈদে বেড়ানোর জন্য দুটি ভিন্ন মোটরসাইকেলে তিন তরুণ খাঁ পাড়া থেকে দেবীগঞ্জের দিকে আসছিল। অপর একটি মোটরসাইকেলে আরও তিন তরুণ লোহাগারা থেকে নীলসাগরের উদ্দেশে যাওয়ার সময় একটি ভ্যানকে পাশ কাটাতে গিয়ে দুটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। 


একই দিন খাগড়াছড়িতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তিন জনের মৃত্যু হয়। 


পুলিশ বলছে, ঈদের ফাঁকা সড়কে বেপরোয়া গতির কারনে এই দুর্ঘটনাগুলো হয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ। 


    পঞ্চগড়ে ঈদে ঘুরতে গিয়ে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ৪পঞ্চগড়ে ঈদে ঘুরতে গিয়ে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ৪


ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মোঃ বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে বন্ধ থাকায় রাস্তাঘাট এমনিতেই ফাঁকা হয়ে যায়। এই সুযোগে মোটরসাইকেল চালকরা বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে এই দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে বলে তাদের স্বজনদের কাছ থেকে জানা গেছে।’ 


চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় যারা আহত হয়েছেন তাদের বেশিরভাগের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। 


বাংলাদেশ অর্থোপেডিক সোসাইটির মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আগের দিনে হয়ত একটি হার দুই টুকরা হতো। এখনকার দিনে এটা ৮ টুকরা হয়। আগের দিনে যদি তাদের শুধু হার ভাঙতো। এখন এর সাথে সাথে রক্তনালী ছিঁড়ে যায় বা মাংস বের হয়ে যায়। এতে ইনফেকশনের চান্স বেশি। এখনকার রোগীদের দুর্ঘটনাগুলো বেশি জটিল।’ 


মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহতের বেশির ভাগই কিশোর। যাদের বয়স ২০ এর নিচ। এবং ১৫ থেকে ১৭ বছরেরই বেশি।