ভোলা সদর হাসপাতাল: দালালদের দৌরাত্ম্যে দিশেহারা রোগীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
জেলা প্রতিনিধি - ভোলা
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ৭ই নভেম্বর ২০২৩ ০৭:১৫ অপরাহ্ন
ভোলা সদর হাসপাতাল: দালালদের দৌরাত্ম্যে দিশেহারা রোগীরা

দালালদের দৌরাত্ম্যে দিশেহারা ভোলা সদর হাসপাতালের রোগীরা। অনিয়ম ও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন চিকিৎসা নিতে আসা শত শত রোগী। দালালদের নিয়ন্ত্রণেই এখন চলতে হচ্ছে রোগীদের। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা দালালের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হচ্ছেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ দালালদের সাথে জড়িত রয়েছেন হাসপাতালের একশ্রেণির কর্মকর্তা ও কর্মচারী।


সরেজমিনে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই ভোলা সদর হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্য চলছে। এসব দালালরা হাসপাতালের কাছাকাছি ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা ডায়াগনস্টিক ও প্রাইভেট ক্লিনিকের প্রভাবশালীদের নিয়োগপ্রাপ্ত।


এই মালিকদের মধ্যে কেউ আবার হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী। তারা স্থানীয় হওয়ায় তাদের একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণেই হাসপাতালে চলছে ডায়াগনস্টিকের দালালি ব্যবসা।


তাদের নিয়োগকৃতরা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হাসপাতালের আউটডোরসহ ভেতরে ও বাইরে বিচরণ করে থাকে। কোনো নতুন রোগী ও স্বজনদের দেখলেই পিছু নিয়ে ভালো ডাক্তার দেখানোর কথা বলে নিয়ে যায় কন্ট্রাক্ট করা চিকিৎসকের কাছে।


ওই চিকিৎসকরা অনেক টেস্ট লিখে প্রেসক্রিপশন দালালদের হাতে ধরিয়ে দেয়। ফলে দালালদের ডায়াগনস্টিকে গিয়ে কয়েক হাজার টাকার টেস্ট করাতে বাধ্য করা হয় রোগীকে। ফলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় রোগীদের।


এদের বিষয়ে বরাবরই চুপ থাকেন কর্মকর্তারা। শত অভিযোগ পেলেও টনক নড়ে না তাদের। ভুক্তভোগী আমেনা, জহির, কামাল হোসেন, মাকছুদ, নয়ন জান্নাত ও পারভীনসহ আরও একাধিক রোগী অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালে রোগী ঢোকার সাথে সাথেই রোগীকে কীভাবে প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকে পাঠাবে টেস্ট করানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে ঘোরাঘুরি করা দালাল ও হাসপাতালের কর্মচারীরা।


প্রাইভেট ক্লিনিকে পাঠালেই তাদের কমিশন নির্ধারিত। টেস্ট প্রতি হাতিয়ে নিচ্ছে ৪০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ কমিশন। আবার ডাক্তাররা তাদের পাঠানো ডায়াগনস্টিক সেন্টারের টেস্ট রিপোর্ট না পেলে বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হয়ে থাকে রোগীরা। তাই ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালটি দালালমুক্ত দেখতে চায় অসহায় ভোলার মানুষ।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের একাধিক ডাক্তার জানান, প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিকের মালিক হাসপাতালে চাকরি করলে কিভাবে দালাল নির্মূল করবে এই হাসপাতাল থেকে। এখানে যতদিন পর্যন্ত ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিকের মালিকদের আধিপত্য থাকবে ততদিন হাসপাতাল থেকে দালাল নির্মূল করা সম্ভব হবে না।


ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মনিরুল ইসলাম জানান, দালালরা যে রোগীদের কাগজ নিয়ে টানাটানি করে ও রোগীদের হয়রানি করে এটা সত্য। হয়রানির হাত থেকে বাঁচতে অনেক রোগীরা তার কাছে অভিযোগ করেছেন। কিন্ত তিনি সশরীরে গিয়ে কাউকে খুঁজে পাননি।


তিনি বলেন, যদি হাসপাতালের কর্মরত কোনো লোক এসব দালালিতে জড়িত থাকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাসপাতাল থেকে দালাল নির্মূলে তার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।


তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের দালাল নির্মূলের অভিযানে তাদের পুলিশ দিয়ে আটক করা হলেও রাজনৈতিক নেতাদের তদবিরে সেসব লোককে থানা ও জেল থেকে ছাড়িয়ে আনা হয়। এসব কারণে ভোলা সদর হাসপাতাল থেকে দালাল নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছে না।


এদিকে ভোলার সচেতন মহলের দাবি দালাল নির্মূল করতে হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কমিশন খাওয়া বন্ধ করতে হবে তা না হলে হাসপাতাল থেকে দালাল নির্মূল করা কোনোদিন সম্ভব হবে না।


এ ব্যাপারে ভোলা ডিবির ওসি মো. এনায়েত হোসেন জানান, তাদের কাছে অনেক রোগীসহ রোগীর আত্মীয়স্বজনরা অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ পাওয়ার পর তারা অভিযান চালিয়ে একাধিকবার এসব দালাল শ্রেণির লোকদের আটক করে। কিছুদিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও পুনরায় এরা আবার সক্রিয় হয়ে যায়।


এ বিষয়ে ভোলা জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান বলেন, ভোলা সদর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে কোনো দালাল থাকবে না। কোনো রোগী যাতে দালাল কর্তৃক প্রতারিত না হয় সে দিকে প্রশাসনের নজরদারি থাকবে। এসব দালাল নির্মূলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরও বেশি সার্বিক সহযোগিতা বৃদ্ধি ও আইন প্রয়োগ করা হবে।