পটুয়াখালীর মহিপুরে বছরের পর বছর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১০.৩৮ একর জমি বেদখলে রয়েছে। বেদখল হওয়া এ জমির মুল্য প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা। বিদ্যালয়ের ওই জমি দখল করে ২০টি পরিবার এখন বসবাস করছেন। দীর্ঘ বছর বেদখরে থাকা এসব জমি উদ্ধারে ম্যানেজিং কমিটিসহ স্থানীয়দের কেউ এগিয়ে আসছে না। বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা মাঝে মধ্যে সরেজমিন ঘুরে দায়িত্ব শেষ করছেন। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি পরিবর্তন হলে তারা এসব জমি উদ্ধারে তৎপর হয়েছে। তবে এ উদ্ধার তৎপরতা নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে অভিভাবকদের।
স্কুলের জমি দখল করে বসবাসকারী দখলদার পনু, বেলায়েত, জাফর, জমিরুল, শহিদুল ইসলাম, মহসীন, হুমায়ুন, হাবিব, জামাল, সোহাগ, মানিক, নাসির, ইউনুচ, মহিমা, খাদিজা, আঃ আজিজ, নুরু আকন, বেল্লাল হোসেন, আবুল কালাম, আঃ জলিল হাওলাদার। দীর্ঘ বছরে তাদের দখলে থাকা এসব জমি এখন ছাড়তে নারাজ দখলদাররা। এনিয়ে চলছে নানা দেন দরবার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, স্কুলের জমিতে স্কুভিটর (ভেকু মেশিন) দ্বারা পুকুর খনন করছেন স্থানীয় বেলায়েতের ছেলে জহিরুল ইসলাম ও মা মাজেদা বেগম। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে পাউবো বেড়িবাঁধের উন্নয়ন কাজ চলছে। কিন্তু পাউবো’র নতুন বেড়িবাঁধটি সম্পূর্ণ স্কুলের জমির উপর দিয়ে গেছে। ৪৮নং পোল্ডারের আওতাভুক্ত পাউবো বেড়িবাঁধের দু’পাশের জমি স্কুলের । এসএ ও বিএস নকশানুযায়ী বেড়িবাঁধের ঢাল বাদে স্কুলের জমির সীমানা। কিন্তু দু’পাশে অত্যন্ত ২০টি পরিবার বসবাস করছেন। এমনকি স্কুলের জমিতে কেউ কেউ পুকুর খনন করেছেন, কেউ আবার গভীর নলকূপ স্থাপন করেছেন।
জেএল ৩৪ নম্বর লতাচাপলী মৌজার এসএ ৬২৯ নম্বর খতিয়ানে ৪৮নং মহিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনুকূলে ১৪.৩৮ একর জমি রেকর্ডভুক্ত আছে। বেদখল হওয়ার কারণে বর্তমান বিএস জরিপে জেএল ৬০ নম্বর লতাচাপলী মৌজার বিএস ০২ নম্বর খতিয়ানে ১২৫৮, ১২৫৯, ১২৬০, ১২৬১, ১৩৪৭, ২০১৯, ২০২০, ২০২২, ২০২৩, ২০২৪, ২০২৫, ২০৭৬, ২০৭৮ নং দাগসমূহে ৯.৮৯ একর জমি রেকর্ডভুক্ত হয়। বাকী ৪.৪৯ একর জমি ০১নং খাস খতিয়ানে রেকর্ড হয়েছে। এদিকে বিদ্যালয়ের নামে বিএস জরিপে ৯.৮৯ একর জমির রেকর্ড বিদ্যমান থাকলেও স্কুলের দখলে আছে মাত্র ৪.০০ একর। বাকী ৫.৮৯ একর জমি স্থানীয় বাসিন্দারা দখল করে বাড়ি-ঘর নির্মাণ করে, পুকুর খনন করে ভোগদখল করছেন।
জানা গেছে, ২০০৭ সালের সিডর পরবর্তীতে লতাচাপলী ইউনিয়নের লক্ষ্মীরহাটের পশ্চিম পাশের পুরানো বেড়িবাঁধ সম্মুখে একটি জলকপাট ও রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। নতুন বেড়িঁবাধটি নির্মিত হয়েছে স্কুল এবং মোকলেচ মোল্লা ও মনির হোসেনের জমিতে। কিন্তু স্কুল ও জমির মালিকরা অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের কোন টাকা পায় নি। আর জলকপাট ও দু’পাশের খাল কাটা হয়েছে মনির হোসেন’র পিতার বন্দোবস্ত প্রাপ্ত জমি থেকে। সেও অদ্য পর্যন্ত কোন ক্ষতিপূরণের টাকা পায়নি। স্কুল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোন খোঁজ খবর না রাখলেও মনির হোসেন ও মোকলেচ মোল্লা গংরা বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিয়েও কোন সুফল পায়নি। তারা আজও জানে না তাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে কিনা? যদি অধিগ্রহণ হয় তাহলে তাদের টাকা পাবে কিনা? কারণ তারা এখনও পর্যন্ত কোন নোটিশ পায়নি। তারা এও সন্দেহ করছেন তাদের জমির অধিগ্রহণের টাকা হয়তো কেউ উত্তোলন করে নিয়েছেন। পুরো বিষয়টি ধুয়াশার মধ্যে রয়েছে।
স্কুলের জমিতে বসবাসকারী আঃ জলিল বলেন, আমরা প্রথমে খাস জমি ভেবে বসবাস শুরু করেছি। পরবর্তীতে শুনেছি স্কুলের জমি। এখন স্কুল কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা আমরা মেনে নিবো। আরেক দখলদার মহসীন বলেন, আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন বেড়িবাঁধের খাস জমিতে বসবাস করছি। স্কুলের জমি তা আমার জানা নেই।
৪৮নং মহিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ নাসির উদ্দিন বলেন, দীর্ঘ বছর যাবৎ স্কুলের জমি স্থানীয় বাসিন্দারা অবৈধভাবে দখল করে বসবাস করছেন। তাদের কাছে কোন কাগজপত্র না থাকলেও তারা স্বেচ্ছায় জমি ছেড়ে যাচ্ছেন না। অবৈধ দখলদারদের আইন অনুযায়ী উচ্ছ্বেদ করা হবে।
এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবুল বাসার বলেন, স্কুলটির নামে এত জমি আছে তা আমার জানা ছিলো না। আমি সম্প্রতি বিষয়টি অবগত হয়েছি। আমি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিকে জমি দখলমুক্ত করার জন্য উদ্যোগ নিতে বলছি। আমি ম্যানেজিং কমিটিকে জমি উদ্ধারের জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের ফিল্ড ইঞ্জিনিয়ার মো: মনিরুল ইসলাম বলেন, স্কুল কমিটি তাদের জমিতে বেড়িবাঁধ নির্মাণে বাঁধা প্রদান করেছেন। আমি কাজ আপাতত বন্ধ রেখেছি। স্কুল কমিটির অভিযোগের সত্যতা রয়েছে।
এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমার নিকট এখনও কোন অভিযোগ আসে নি। তারপরও আমি সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মাদ শহিদুল হক বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ আমার নিকট আবেদন করলে সরেজমিনে পরিমাপপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।