বরিশাল পাসপোর্ট অফিস: দক্ষ জনবলের অভাবে ভোগান্তিতে গ্রাহকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
এম. কে. রানা - বার্তা প্রধান ইনিউজ৭১
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ১৮ই আগস্ট ২০২২ ১০:২৩ পূর্বাহ্ন
বরিশাল পাসপোর্ট অফিস: দক্ষ জনবলের অভাবে ভোগান্তিতে গ্রাহকরা

বরিশাল বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসে দক্ষ জনবল না থাকায় প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়ছেন পাসপোর্টের আবেদন করতে আসা অসংখ্য মানুষ। এ ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে হলে এই অফিসটিতে দক্ষ জনবলের বিকল্প নেই। এমনকি এ অফিসে যে জনবল থাকার কথা সে পরিমাণ জনবল না থাকায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পাসপোর্ট আবেদনকারীরা। 


একদিকে যেমন রয়েছে দক্ষ জনবলের অভাব, অন্যদিকে আবার জনসচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এমন চিত্রের দেখা মেলে বরিশাল বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসে সরেজমিন অনুসন্ধানী দলের পর্যবেক্ষণে। এ কার্যালয়টিতে জনবল যেখানে থাকার কথা ২০ জন, সেখানে তাদের জনবল রয়েছে মাত্র ৯ জন। এ অবস্থার মধ্যে পাসপোর্ট গ্রাহকদের কাক্সিক্ষত সেবা নিশ্চিতে যথারীতি হিমশিম খাচ্ছেন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আবার সরাসরি দৌরাত্ম্য চোখে না পড়লেও অন্তরালে রয়েছে দালালদের সম্পৃক্ততা।


তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, অফিসের ভেতরে দালালের দৌরাত্ম্য না থাকলেও বাইরে রয়েছে কিছুটা হয়রানি। তবে জনভোগান্তি যা রয়েছে তার মূল কারণ অধিকাংশ রি-ইস্যু করতে আসা আবেদনকারীদের পূর্বের দেয়া তথ্যের সাথে আবেদনের তথ্যে বিস্তর ব্যবধান এবং জনসচেতনতার অভাব।

সরেজমিনে জানা যায়, এখানে প্রতিদিন গড়ে ২০০টি আবেদনপত্র এনরোলমেন্ট হয়। তার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ আবেদন জমা হয় তথ্য পরিবর্তনের। আর তথ্য পরিবর্তনের আবেদনগুলো অফিসে জমা হলেও এগুলোর কাজ হয় রাজধানীর উত্তরা পাসপোর্ট পার্সোনালাইজেশন সেন্টারে।


অভিযোগ রয়েছে, পাসপোর্ট অফিসে হয়রানিতে কর্মরত আনসার সদস্যদের সরাসরি সম্পৃক্ততা আছে। সরেজমিনেও এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। আনসারদের সাথে অফিসের বাইরের একটি দালাল চক্রের রয়েছে সখ্যতা। ইতিপূর্বে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে একাধিক দালাল আটক হলেও আইনে ফাঁকফোকড়ে বেরিয়ে পুনরায় তারা দালালি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। পাসপোর্ট করতে আসা একাধিক আবেদনকারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেবামূলক এই প্রতিষ্ঠানটি কবে দালালমুক্ত হবে? কেউ এর সদুত্তর দিতে পারছেন না।


অথচ কর্মকর্তারা এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এখানে দালালদের কোনো ক্ষমতা নেই। আমরা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে দালালদের পুলিশে সোপর্দ করি।


গণমাধ্যমকর্মী প্রকৌশলী জিহাদ রানা জানান, তার বাবা মো. নুরুল ইসলামের হয়রানির কথা। তিনি বলেন, আমার বাবার আবেদনে দেয়া সঠিক নাম থাকলেও তার নামের বানানে অপারেটর ভুল করায় সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। আমি বলব, সরকারি সেবামূলক এই প্রতিষ্ঠানে অবশ্যই দক্ষ জনবল দিয়ে পাসপোর্টের আবেদন এনরোলমেন্ট সম্পন্ন করা উচিত। অন্যথায় জনহয়রানি কোনোভাবেই লাঘব হবে না।


সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের বরিশাল আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ছদ্ম পরিচয়ে পাসপোর্ট করতে এসে আটক হন নূরজাহান (২২) এক রোহিঙ্গা নারী। তিনি কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জামাল খান এবং ফাতেমা বেগম দম্পতির মেয়ে। তাদের বাড়ি মিয়ানমারের মংডু জেলার কালীবাজার এলাকায়। দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট করার চেষ্টাকালে তাকে আটক করে বরিশাল মেট্রোপলিটন এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ।


সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) বরিশালের সভাপতি অধ্যাপিকা শাহ সাজেদা বলেন, এর আগে পাসপোর্টের একটি গবেষণায় শুনেছি পাসপোর্ট করতে আসা আবেদনকারীদের নানা ধরনের হয়রানি, ভোগান্তি ও ঘুষ বাণিজ্যের কথা। বর্তমানে সেই অভিযোগটি নেই। তবে দালালদের দৌরাত্ম্য দৃশ্যমান না থাকলেও অদৃশ্যভাবে দালালদের একটি চক্র পাসপোর্ট অফিসের কিছু অসাধু কর্মচারীর যোগসাজশে গ্রাহকদের কিছুটা হয়রানি করছে। পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এ বিষয়টি নির্মূলে সজাগ দৃষ্টি রাখা জরুরি বলে মন্তব্য করেন সনাক সভাপতি শাহ সাজেদা।


এদিকে এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই বলে দাবি করে বরিশাল বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের দায়িত্বে থাকা সহকারী পরিচালক মো. মেহেদী হাসান বলেন, আমাদের এখানে আবেদন করতে আসা মানুষের দুই-তৃতীয়াংশ আবেদনে রয়েছে বড় ধরনের তথ্য পরিবর্তন। এই তথ্য পরিবর্তন সমাধানে কাজ করে আমাদের উত্তর পার্সোনালাইজেশন সেন্টার। তবে আমি যখনই যার সমস্যার কথা জানতে পারি তাৎক্ষণিক আমি প্রধান কার্যালয়কে তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য তথ্য সরবরাহ করে থাকি।