অসুস্থ স্বামীকে নিজের কিডনি দিয়ে যা বললেন স্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার ১৮ই সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:০৮ অপরাহ্ন
অসুস্থ স্বামীকে নিজের কিডনি দিয়ে যা বললেন স্ত্রী

স্বামী জহিরুল হক জুনাইদকে (৩৯) নিজের কিডনি দিয়ে জীবন বাঁচিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা উপজেলার সায়মা জাহান পলি (২৭)। পরিবারের লোকজন তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। উভয়ের সুস্থতার জন্য দোয়া করেছেন এলাকাবাসী।


কিডনি দেওয়ার পর সায়মা জাহান পলি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, স্বামীকে নিজের কিডনি দিতে পেরে আমি গর্বিত। আমার স্বামী কখনও কিডনি দিতে বলেননি, আমি নিজের ইচ্ছায় কিডনি দিয়েছি। তিনি সুস্থতার দিকে যাচ্ছেন, এটা দেখে খুবই ভালো লাগছে। এখন বাঁচলে দুজনে বাঁচব, আর মরলে দুজনে মরব।


জহিরুল হক ওরফে জুনাইদের ছোট ভাই পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আশিকুল হক বলেন, আমার ভাবি এখন কিছুটা সুস্থ। চিকিৎসকের পরামর্শে শনিবার থেকে তিনি বাসায় আছেন। আর ভাইয়ের অবস্থাও ভালোর দিকে। আমরা সবাই ভাবির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমরা ভাই হয়ে যা করতে পারিনি, ভাবি তা পেরেছেন। তাকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন উভয়কেই সুস্থ করে তোলেন।


এ বিষয়ে নেত্রকোণা জেলার নারানদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুস সংবাদমাধ্যমকে বলেন, গৃহবধূ সায়মা নিজের কিডনি স্বামীকে দিয়ে এলাকায় প্রশংসায় ভাসছেন। এটি সত্যিই বিরল উদাহরণ। আশা করি, উভয়ই দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।


গত ৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় জহিরুল হক জুনাইদ ও স্ত্রী সায়মা জাহান পলি দম্পতির। বর্তমানে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিসিইউ) চিকিৎসাধীন জহিরুল।


জানা যায়, প্রায় এক বছর চার মাস আগে মাথা ঘুরানো ও উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন নেত্রকোণার জহিরুল হক জুনাইদ। পরীক্ষা-নিরীক্ষার একপর্যায়ে ধরা পড়ে তার দুটি কিডনিই বিকল। কোথাও যখন কিডনি পাচ্ছিলেন না, তখন তার স্ত্রী সায়মা জাহান পলি নিজের একটি কিডনি দিতে এগিয়ে আসেন। তার দেওয়া কিডনিতে এখন সুস্থ হয়ে উঠেছেন জহিরুল হক। জহিরুল হক জুনাইদ বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের সপ্তম তলায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর সায়মা জাহানকে শনিবার হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি রামপুরা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় কোয়ারেন্টাইনে আছেন।


জহিরুল হকের বাড়ি নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা উপজেলার হিরণপুর বাজার এলাকায়। তিনি ওই এলাকার মো. মোজাম্মেল হক ও জয়নব আক্তার দম্পতির পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবার বড়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা জহিরুল একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। তার স্ত্রী সায়মা জাহান নেত্রকোণা সরকারি কলেজ থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে মাস্টার্স পাস করেন। জহিরুল ও সায়মা দম্পতির রাইসা নামের পাঁচ বছরের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে।