আগৈলঝাড়ায় মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসায় এমপি ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
এফ এম নাজমুল রিপন
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ৩রা সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:৫৭ অপরাহ্ন
আগৈলঝাড়ায় মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসায় এমপি ও  প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

ক্ষিতিশ সরকার, বয়সের ভারে আজ নূব্জ। ’৭১এর টগবগে যুবক ক্ষিতিশ জাতির পিতার আহ্বানে সারা দিয়ে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন পরাধীনতার কবল থেকে দেশকে মুক্ত করতে মহান মুক্তিযুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধ শেষে বিজয়ী যোদ্ধা স্বাধীন দেশে বাড়ি ফিরে দেখতে পান পাক সেনাবাহিনীরা তার একমাত্র বসত ঘরটি পুড়িয়ে দিয়েছে আগুনে। কোনও সম্বল ছিলা না তার একখানা ঘর তোলার। সংসার বঁচাতে বাধ্য হয়ে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন দিন মজুরের কাজে। একটি বসত ঘরের অভাবে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে আজ পর্যন্ত থাকেন ভাড়া বাড়িতে। 

ক্ষিতিশের স্বপ্ন ছিলে বসত ঘর তুলবে, বৃদ্ধ বয়সে সেখানে শান্তিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবেন। সে আশা আর পূরণ হল না তার। বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলা গৈলা ইউনিয়নের পশ্চিম সুজনকাঠি গ্রামের গৌরাঙ্গ লাল সরকারের ছেলে ক্ষিতিশ সরকার মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী হলেও জীবন সংগ্রামে আজ পরাজিত। কথা কলার শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলেছেন এই যোদ্ধা। অর্থাভাবে পরিবার সদস্যরা চিকিৎসাও করাতে পারছে না তাঁর। ভাতার টাকায় চলে তিন ছেলে ও এক মেয়ের পড়াশুনা ও সংসারের খরচ। 

মুক্তিযোদ্ধা ক্ষিতিশ সরকারের স্ত্রী মেনুকা সরকার জানান, তার স্বামী মেজর জলিলের অধীনে ১১নম্বর সেক্টরে খুলনায় পাক বাহিনীর সাথে সন্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। এক বছর পূর্বে তার স্বামী ক্ষিতিশ অসুস্থ হয়ে পরলে তাকে ডাক্তার স্টোক করার কথা জানিয়ে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেন। ক্ষিতিশের চিকিৎসায় প্রায় ৫ লাখ টাকা প্রয়োজন বলেও জানিয়ে দেন ওই চিকিৎসক। টাকার অভাবে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয় তাকে। নুন আনতে পান্তা ফুরানো ক্ষিতিশের পরিবারে এত টাকা যোগানো ছিল অসম্ভব। তাই চিকিৎসা বিহীন অবস্থায় ক্ষিতিশ আগস্ট মাসের প্রথম দিকে পুনরায় ব্রেণ স্টোক করেন। 

ক্ষিতিশের মেয়ে ললিতা সরকার বৃষ্টি বলেন, তার বাবার চিকিৎসা করাতে না পারায় দ্বিতীয়বার অসুস্থ হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অর্থের অভাবে তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ক্ষিতিশের ভালো চিকিৎসা করাতে না পেরে তাকে আগৈলঝাড়ার ভাড়া বাসায় নিয়ে আসেন তারা। বর্তমানে চিকিৎসা বিহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা ক্ষিতিশ। মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসনে প্রধানমন্ত্রী কয়েক দফায় বসত ঘর দিলেও তার একটি ঘর ভাগ্যে জোটেনি মুক্তিযোদ্ধা ক্ষিতিশের।

দেশ রক্ষার মহান যোদ্ধা আশ্রয়হীন ক্ষিতিশিরে পরিবার মুক্তিযোদ্ধা ও তার প্রজন্মর বসতির জন্য একটি ঘর ও তার তাঁর সুচিকিৎসায় দক্ষিানা লীয় মুজিব বাহিনীর প্রধান, জাতির পিতার ভাগ্নে, জামুকা’র অন্যতম সদস্য আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ -এমপি ও মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল চন্দ্র দাস মুক্তিযোদ্ধা ক্ষিতিশ সরকারের সার্বিক পরিস্থিতির কথা স্বীকার করে জানান, তিনি সমাজ কল্যান মন্ত্রণালয়ের সভাপতি ও বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান স্যারের সাথে কথা বলেছেন। সেখান থেকে কিছু সুবিধা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল থেকে ক্ষিতিশ সরকারকে কিছু সুবিধা প্রদান করতে পারবেন। তবে এই সুবিধা তাঁর জন্য সাময়িক। ক্ষিতিশ সরকারের স্থায়ী সমস্যা সমাধানে পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরীবিক্ষণ কমিটির আহ্বান (মন্ত্রী) আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি স্যার ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একমাত্র সমাধান করতে পারেন।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব